ডাকসুতে নারী প্রার্থীদের জন্য শঙ্কাময় পরিবেশ, নিরাপত্তা দেবে কে?

ড. জোবাইদা নাসরীন
ড. জোবাইদা নাসরীন  © টিডিসি সম্পাদিত

ডাকসু নির্বাচন হওয়া এবং না হওয়া নিয়ে সোমবার হঠাৎ অনিশ্চয়তা তৈরির পর ক্যাম্পাস এখন উত্তাল এক শিক্ষার্থীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকির প্রতিবাদে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও এই প্রতিবাদ অনেকটা জায়গা জুড়ে আছে। ‘গণধর্ষণের’ এই হুমকিদাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। যাকে উদ্দেশ্য করে হুমকি দেওয়া হয়েছে তিনিও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। হুমকিটি ছিল এরকম, ‘হাইকোর্টের বিপক্ষে এখন আন্দোলন না করে আগে একে গণধর্ষণের পদযাত্রা করা উচিত।’

হুমকিপ্রাপ্ত ছাত্রী ডাকসু নির্বাচনে একটি প্যানেল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কয়েকদিন আগে তিনি ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে রিট মামলা করেছিলেন। রিট করার কারণ হিসেবে তিনি গণমাধ্যামে জানান, ‘ফরহাদের অবস্থান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং ফরহাদ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার কোনো পদত্যাগের প্রমাণ আমরা পাইনি।’ ওই ছাত্রী আরও বলেন, ‘টিএসসিতে তারা রাজাকারদের ছবি টানিয়েছিল। তাদেরকে জাতীয় বীর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার যে প্রচেষ্টা ছিল, সেটি ডাকসুর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যর বিরোধিতা করে।’

রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ সেপ্টেম্বর প্রথমে হাইকোর্ট ৩০ অক্টাবর পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করেন। এর অল্প কিছুক্ষণ পরই চেম্বার আদালত আবার রায় দেন যে, ডাকসু নির্বাচন হতে কোনো বাধা নেই। এরপরই ওই ছাত্রীকে উদ্দেশ্য করে ‘গণধর্ষণের’ স্ট্যাটাস দেয় এক ছাত্র।

রিট করার পর থেকেই ওই ছাত্রী ফেসবুকে ‘বট অ্যাটাক’ ও বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন। নারী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এর আগে থেকেই চলছে বিরামহীন ও প্রতিরোধহীনভাবে বুলিংয়ের প্রতিযোগিতা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আচরণ বিধি তৈরি করলেও, যারা সেগুলো মানছেন না তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্র এমন হুমকি দিতে পেরেছে।

ডাকসু নির্বাচনের নারী প্রার্থীরা প্রথম থেকেই নানা ধরনের বুলিংয়ের শিকার হচ্ছিলেন। এর আগেও নারী প্রার্থীরা জানিয়েছিলেন যে, আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হওয়ার আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে বিভিন্ন নারী প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপত্তিজনক মন্তব্য, গুজব ও ব্যক্তিগত আক্রমণ চলছিল। নারী প্রার্থীরা মানসিক চাপ বোধ করছেন, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এটি তাদের নির্বাচনী প্রচারেও বাধা তৈরি করছে। তারা এসব বিষয়ে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগও জানিয়েছেন। কিন্তু সেগুলো খুব বেশি বন্ধ হয়নি। কারণ, সম্ভবত এগুলো শুধু মৌখিক আচরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা। এর বিপরীতে কোনো শাস্তি কিংবা পদক্ষেপ না নেওয়া।

‘গণধর্ষণের’ হুমকির বিচার চেয়ে করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সত্যানুসন্ধান তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু যেখানে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই হুমকির প্রমাণ আছে, সেখানে সত্যতা উদঘাটনের কৌশল আসলে কার পক্ষে যাবে সেটি হয়তো কিছুটা অনুমান করা যায়। 

নারী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের আক্রমণ এবং নারী বিদ্বেষের বিপরীতে যদি বিশ্ববিদ্যােলয় প্রশাসন প্রথম থেকেই অবস্থান নিতো তাহলে এ ধরনের স্ট্যাটাস হয়তো কমে যেত। তাই দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে ‘গণধর্ষণের’ হুমকিদাতাকে রুখে দিন। তা না হলে একে একে সবাই এ ধরনের হুমকির শিকার হবো। 

ড. জোবাইদা নাসরীন: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 


সর্বশেষ সংবাদ