আত্মহত্যা নিয়ে ইসলাম কী বলে

  © সংগৃহীত

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তিনিই মানবকে জীবন দিয়েছেন, মরণও তাঁরই ইচ্ছাধীন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বরকতময় তিনি (আল্লাহ) যাঁর হাতে রাজত্ব, তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে পরীক্ষা করবেন তোমাদের, কে তোমাদের কর্মে উত্তম। তিনি পরাক্রমশালী স্নেহশীল ক্ষমাময়।’ (সুরা: ৬৭ মুলক, আয়াত: ১-২)।

মানুষ তার জীবন ও সম্পদের রক্ষক। মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো আল্লাহর দেওয়া জীবন, আল্লাহর দেওয়া সময় বা আয়ু, আল্লাহর দেওয়া সম্পদ, আল্লাহর দেওয়া মেধা, আল্লাহর দেওয়া সুযোগ ও সামর্থ্য; আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় পরিচালনা, প্রয়োগ ও ব্যবহার করা বা পরিচালনা করা। আত্মহত্যার প্রধান দুটি কারণ হলো হতাশা ও ভুল প্রত্যাশা: মুমিন বা বিশ্বাসী ব্যক্তি কখনো হতাশাগ্রস্ত হন না। কারণ, তার জীবনের সব ভালো কাজের ফলাফল তিনি আল্লাহর কাছে পাবেন, এটা তার ইমান ও বিশ্বাস। দুনিয়ায় ভালো কাজের সুফল বা স্বীকৃতি না পেলে তাতে ইমানদারের আফসোস বা অনুতাপ হয় না। মন্দ কাজের জন্য ক্ষমা পাওয়ার চূড়ান্ত পরম ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্বাসী মুমিন ব্যক্তিকে চরমভাবে আশ্বস্ত করা হয়েছে। ‘(হে রাসুল সা.) আপনি বলুন, (মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেন) হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের প্রতি (পাপ ও অপরাধ দ্বারা) অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সকল পাপ ক্ষমা করবেন; নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল দয়াময়।’ (সুরা ৩৯ জুমার, আয়াত: ৫৩)। তাই সে ভুল করলে তওবা করে পবিত্র হয়ে নতুন জীবন শুরু করে; নিরাশ বা হতাশ হয় না।

আত্মহত্যার দ্বিতীয় কারণটি হলো ভুল প্রত্যাশা। এ কারণেও অনেকে আত্মহত্যা করে থাকে। যেমন কেউ ভাবল, এভাবে বা এই উদ্দেশ্যে আত্মহত্যা করলে এতে সে গ্লানি ও কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করবে। কিন্তু এটা জানা জরুরি যে কোনো মন্দ কাজ দ্বারা ভালো ফলাফল আশা করা যায় না। যেখানে আত্মহত্যাই মহাপাপ, সেখানে এই মহাপাপ সংঘটিত করে কীভাবে কল্যাণ লাভ করা যাবে? আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে রাসুল সা.) আপনি বলুন, আমি কি তোমাদের তাদের বিষয়ে সংবাদ জানাব? যারা কর্মে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত! (তারা হলো) যারা দুনিয়ার জীবনে কর্ম প্রচেষ্টায় বিপথগামী হয়েছে; তথাপি তারা মনে করেছে তারা ভালো কাজ করছে।’ (সুরা ১৮ কাহাফ, আয়াত: ১০৩-১০৪)।

আত্মহত্যা নিষিদ্ধ করে কোরআনে আয়াত নাজিল হয়েছে, ‘(তোমরা তোমাদের জীবন, সময়, সম্পদ, মেধা, যোগ্যতা, সুযোগ ও সামর্থ্য) আল্লাহর পথে ব্যয় করো, ‘তোমরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ো না।’ আর উত্তম কর্ম ও দয়া করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সৎকর্মী ও দয়াশীলদের ভালোবাসেন। (সুরা: ২ বাকারা, আয়াত: ১৯৫)। আত্মহত্যার শাস্তির বিষয়ে হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে যেভাবে আত্মহত্যা করবে, তার শাস্তি অনন্তকাল সেভাবেই চলতে থাকবে।’ (মুসলিম ও তিরমিজি)।

আত্মহত্যাসহ সব ধরনের সামাজিক অপরাধ নিরসনে দায়দায়িত্ব আছে পরিবারের এবং সমাজের সব মানুষের। এ দায় ততটুকু, যে যতটুকু প্রভাবক ও উদ্দীপকের ভূমিকা পালন করে। এর দায়ভার হিসেবে তারাও রোজ কিয়ামতে শাস্তি ভোগ করবে।

‘(কিয়ামতের দিন) অকৃতজ্ঞ অবিশ্বাসীরা বলবে, হে আমাদের প্রভু! যে সকল জিন ও ইনসান (অদৃশ্য শক্তি ও সদৃশ্য শক্তি) আমাদের বিপথগামী করেছে, তাদের আমাদের সম্মুখে আনয়ন করে প্রকাশ করুন। আমরা তাদের আমাদের পদতলে পিষ্ট করব, যাতে তারা হীন লাঞ্ছিত অপমানিত হয়।’ (সুরা-৪১ হা-মীম সাজদাহ, আয়াত: ২৯)।

আত্মহত্যা মূলত আত্মপ্রবঞ্চনারই নামান্তর। কারণ, জীবন বিসর্জন দেওয়া কোনো সমস্যার সমাধান নয়; কোনো সফলতাও নয় বরং চরম ও চূড়ান্ত ব্যর্থতা। এর দ্বারা কোনো কিছুই অর্জিত হয় না; বরং একূল, ওকূল—দুকূলেই সবকিছু হারাতে হয়। মানুষ কোনো কিছু ধ্বংসের জন্য নয়, বরং সৃষ্টির সুরক্ষার জন্য। প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব হলো জীবনের সুরক্ষা, সম্পদের সুরক্ষা, জ্ঞানের সুরক্ষা, প্রজন্মের পবিত্রতা বা বংশপরম্পরা সুরক্ষা এবং ধর্মীয় মানবিক বিধান বা মানবাধিকার সুরক্ষা। (মাকাসিদুশ শরিয়া)।

আত্মহত্যার প্রবণতা নিরসনে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে নৈতিক আচরণ করতে হবে। সর্বোপরি সামাজিক শৃঙ্খলা ও পারিবারিক বন্ধন মজবুত করতে হবে। নিরাপদ জীবন ও অপরাধমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র ও প্রশাসন ন্যায়ভিত্তিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক হতে হবে।

লেখক - মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence