দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আলোচিত দুদক কর্মকর্তা শরীফ চাকরিচ্যুত

শরীফ উদ্দিন
শরীফ উদ্দিন  © ফাইল ফটো

রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া এবং ভোটার তালিকায় অন্তুর্ভুক্তিসহ অনিময়ের বিভিন্ন ঘটনার তদন্ত করে আলোচনায় আসা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে।

‘হত্যা ও চাকরি খাওয়ার হুমকি’ পাওয়ার কথা জানিয়ে চট্টগ্রামের খুলশী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন শরীফ। তার ষোল দিনের মাথায় বুধবার দুদক কার্যালয় থেকে তাকে চাকরি থেকে অপসারণের প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তার চাকরিচ্যুতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়।

আদেশে বলা হয়, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৫৪ (২) তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মো. শরীফ উদ্দীন, উপ-সহকারী পরিচালক, দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যক্রম, পটুয়াখালীকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো। তিনি বিধি মোতাবেক ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’ আদেশটি আজ থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: টিকা না নেওয়া শিক্ষার্থীরা কি ক্লাসে আসতে পারবে না?

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম দুদক কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনের সময় দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দীন ২০২১ সালের ১৬ জুন হালনাগাদ ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে অর্ন্তভুক্ত করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পরিচালকসহ ইসির ৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এর আগে, গত ১৫ জুন রোহিঙ্গা নাগরিকদের অবৈধ উপায়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান ও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণের ঘটনায় ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সরফরাজ কাদের রাসেলসহ ৬ জন এবং ১২ জুন ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইসমাইল বালিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন শরীফ।

তবে ১০ জুন দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ প্রদান করায় সাবেক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলামের (বিএসসি) বড় ছেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মো. মুজিবুর রহমান, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেন, সাবেক ব্যবস্থাপক মো. মজিবুর রহমান, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, সার্ভেয়ার মো. দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় আসেন শরীফ উদ্দীন। এ মামলায় মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সারওয়ার হোসেন, সাবেক কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান ও সার্ভেয়ার মো. দিদারুল আলমকে গ্রেপ্তারও করে দুদক। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

এছাড়া তার আরও বেশ কয়েকটি আলোচিত অভিযান ছিল। তারমধ্যে ২০২১ সালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে সংলগ্ন কলাতলী বাইপাস রোড এলাকায় পুলিশ ব্যুরো অব ইন্টেলিজেন্স (পিবিআই) অফিস তৈরির জন্য এক একর (১০০ শতক) জমি অধিগ্রহণে জালিয়াতির ঘটনা উঠে আসে দুদকের এ কর্মকর্তার তদন্তে। এ ঘটনাসহ কক্সবাজারের মেগা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জমি অধিগ্রহণের দুর্নীতিতে জড়িত বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি ও রাজনীতিকের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার করা হয়।

আরও পড়ুন: ২৩ হাজার ২৬২ আসনে সাত কলেজের চূড়ান্ত মেধাতালিকা

দেড় বছর আগের ঘটনায় দুদক কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকি, তদন্তে নামছে পুলিশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে চট্টগ্রামে মাঠে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সরকারি হাসপাতালের টেন্ডার কারা নিয়ন্ত্রণ করে, হাসপাতালে টেন্ডারবাজি, বদলি, নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে কারা জড়িত, বেসরকারি হাসপাতাল কারা পরিচালনা করছেন, ওই সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের যাবতীয় কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা এসব বিষয় তদন্তে নেমে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও কয়েকটি মামলাও করেছিলেন শরীফ উদ্দীন।

এ বছরের মার্চে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে খালাসি পদে ১৯ জনকে নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এক কোটি ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপকসহ চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন শরীফ উদ্দীন। একই মামলায় দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত খালাসি, ঠিকাদার, স্কুল শিক্ষক, পিয়ন, রেলের ড্রাইভারসহ আরও ৮ জনকে আসামি করা হয়।

একই মাসে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেতে সহায়তা ও জালিয়াতি করে জন্ম নিবন্ধনের মামলায় কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর মিজানুর রহমান, সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ কায়সার নোবেল, রফিকুল ইসলাম এবং পৌরসভার জন্ম নিবন্ধন শাখার অফিস সহকারী দিদারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারও আগে জানুয়ারিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দুর্নীতি ও নানা অনিয়মে জড়িত শীর্ষ দালাল ও সাবেক সার্ভেয়ারকে গ্রেফতার করে শরিফ উদ্দিন।


সর্বশেষ সংবাদ