ঘোষিত নির্বাচনের তফসিল ২২ পেশাজীবী সংগঠনের প্রত্যাখ্যান
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ০৫:৪৯ PM , আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ০৫:৫৯ PM
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একতরফা তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে ২২টি পেশাজীবী সংগঠন। দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দাবি উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের ইচ্ছানুযায়ী একতরফা তফসিল ঘোষণা করে দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে বলে তারা মনে করেন।
আজ বৃহষ্পতিবার একযৌথ বিবৃতিতে পেশাজীবী নেতারা নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করেন। তারা আরো বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জনগনের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আস্থার সংকট ও ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে হলে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
পেশাজীবী নেতারা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর দুটি নির্বাচনে জনগনকে ভোট দিতে পারে নি। নগ্নদলীয়করণের ফলে নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় প্রশাসন ও পুলিশ গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। ফলে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জনগনের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে।তাঁরা বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আস্থার সংকট ও ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে হলে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৫ বছরে ব্যাপক দলীয়করণ হয়েছে। যাঁরা নির্বাচন পরিচালনা করবেন, তাঁদেরও দলীয়করণ হয়েছে। এটা সর্বজন স্বীকৃত যে,তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পরের দুটি নির্বাচনে প্রহসন হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন ছিল ভোটার বিহীন নির্বাচন। এ প্রহসনের নির্বাচনে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন! ২০১৮ সালে বিরোধী দল ও জোট নির্বাচনে যাওয়ার পরেও ভোটার ও প্রার্থীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ অনুপস্থিত ছিল। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগেই ভোট হয়ে গেছে। অনেকের মতে, আগের রাতেই ভোট হয়ে গেছে। অর্থাৎ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
বিবৃতিতে পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির কারণে দেশের আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এই নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রছাড়া বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন নির্বাচন বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছে। অত্যন্ত যোক্তিক হওয়ায় বিরোধীজোটের এ দাবি আজ গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। আমরা নিশ্চয়ই ভুলে যাইনি যে, নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার ফসল হিসেবে দেশে নির্বাচনকালে নির্দলীয় (অন্তর্বর্তীকালীন ও তত্ত্বাবধায়ক) সরকার প্রতিষ্ঠার বিধান করা হয়েছিল। এর ফলে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালে চারটি তুলনামূলক ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের পরাজয় ঘটেছিল এবং এটির সম্ভাবনা খারাপ কাজে ক্ষমতাসীনদের কিছুটা হলেও বিরত রাখতে পেরেছিল।
২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিটির আলোচনাতেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই তত্ত্বাবধায়ক সরকার অব্যাহত রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছিল।এখন এই সরকার ফিরিয়ে আনার পথে সংবিধান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সংবিধান একটি পরিবর্তনযোগ্য দলিল এবং দেশের প্রয়োজনে এমনকি আগে সম্পন্ন কাজকেও সংবিধান পরিবর্তন করে বৈধতা দেওয়ার নজির এ দেশে রয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের প্রবল বিতর্কিত নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়টি তাই আজ অত্যন্ত যৌক্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারব্যবস্থায় সব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত। একই সঙ্গে তিনি তাঁর রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং সংসদীয় দলের নেতা। তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে গেলে তাঁর সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশ বা প্রশাসন কর্মকর্তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন, এটা বিশ্বাস করা খুবই দুষ্কর।
২০১৮ সালের নির্বাচনের (এবং এর পরের বিভিন্ন নির্বাচনে) পর দলীয় সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব, এটি কোনো মানুষের বিশ্বাস করার কারণ নেই। এই সরকারের আমলে বর্তমান নির্বাচন কমিশন একাই সুষ্ঠু নির্বাচন করে ফেলতে পারবে, এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য আলামতও আমরা দেখতে পাইনি। কুমিল্লার উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমপিকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ বাস্তবায়নে ব্যর্থতা, বগুড়ায় হিরো আলমের অভিজ্ঞতা এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে অনিয়মের ঘটনাগুলো এ ক্ষেত্রে নজির হিসেবে উল্লেখ করা যায়। নির্বাচন সংস্কৃতিতে অনাস্থা সৃষ্টি করার মতো আরও ঘটনা গত কয়েক বছরে আমরা লক্ষ করেছি। সরকারের অপছন্দের ব্যক্তিদের প্রার্থিতা বিভিন্নভাবে বাতিল করা হয়েছে, প্রশ্নবিদ্ধ প্রক্রিয়ায় কোন কোন রাজনৈতিক দলকে অনুগত রাখার প্রচেষ্টা হয়েছে, অজস্র মামলা ও ফরমায়েশি সাজা দিয়ে বিএনপি ও বিরোধী দলের নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে প্রতিকূল বা অসম্ভব করে রাখা হয়েছে, পুলিশ ও প্রশাসন সুবিধামাফিক সাজানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।
তাই আমরা ঘোষিত একতরফা নির্বাচনী তফসিল বাতিল করে নির্বাচকালীন নির্দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচনের আয়োজন করে জনগনের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আহবান জানাচ্ছি।আমাদের মনে রাখতে হবে, নির্বাচন নিয়ে দেশে অনাস্থা ও হতাশার পরিস্থিতি অব্যাহত রাখলে জাতীয় ঐক্য, সংহতি এবং এর শক্তি আরও বিপর্যস্ত হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সভাপতি এডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব- সভাপতি, অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ, মহাসচিব ডা. মোঃ আব্দুস সালাম, ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইউট্যাব সভাপতি প্রফেসর ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, মহাসচিব প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সাদা দলের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক প্রফেসর ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন- বিএফইউজে সভাপতি এম. আব্দুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ-এ্যাব সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু মহাসচিব আলমগীর হাছিন আহমেদ, এগ্রিকালচারিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এ্যাব সভাপতি কৃষিবিদ রাশিদুল হাসান হারুন, মহাসচিব প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মো. জাকির হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, জিয়া পরিষদ চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ মোঃ আব্দুল কুদ্দুস, মহাসচিব প্রফেসর ড. মোঃ এমতাজ হোসেন, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম প্রফেসর ড. শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ডাঃ ফরহাদ হালিম ডোনার, সমন্বয়কারী প্রফেসর ডা. শফিকুল হায়দার পারভেজ, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, মহাসচিব মো. রফিকুল ইসলাম, এমবিএ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ম্যাব সভাপতি সৈয়দ আলমগীর, মহাসচিব শাকিল ওয়াহেদ, জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-জেটেব আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল আলম, সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার এ বি এম রুহুল আমীন আকন্দ, ডিপোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিইএব) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সাইফুজ্জামান সান্টু , মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার সাখাওয়াত হোসেন, নার্সেস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ন্যাব) সভাপতি জাহানারা বেগম, সাধারণ সম্পাদক সুজন মিয়া, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এম-ট্যাব) সভাপতি এ কে এম মুসা (লিটন), মহাসচিব মোঃ বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব, ইউনানী আয়ুর্বেদিক গ্র্যাজুয়েট ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আগড্যাব) সভাপতি ডাঃ মির্জা লুৎফর রহমান লিটন, মহাসচিব ডাঃ আমিনুল বারী কানন, ডিপ্লোমা এগ্রিকালচারিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডি-এ্যাব) সভাপতি মোঃ জিয়াউল হায়দার পলাশ, মহাসচিব সৈয়দ জাহিদ হোসেন, ফিজিওথেরাপিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (প্যাব) সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান কল্লোল ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ তানভীরুল আলম।