দেশের মত ছাত্র ইউনিয়নও সংকটকাল পার করছে

ছাত্র ইউনিয়নের লোগো ও বাকী বিল্লাহ
ছাত্র ইউনিয়নের লোগো ও বাকী বিল্লাহ  © টিডিসি ফটো

ছাত্র ইউনিয়ন তার ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে গত ২৬ এপ্রিল। এই সময়ে দেশ এবং গোটা বিশ্ব যেমন তীব্র সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে- সাংগঠনিকভাবে ছাত্র ইউনিয়নও একটা নিদারুণ সংকটকাল পার করছে। এত বড় সংকট বা বিভক্তির দুর্ভাবনা গত কয়েক দশকে দেখা যায়নি। সর্বশেষ ষাটের দশকের কুখ্যাত মস্কো-পিকিং বিভক্তির প্রভাবে ছাত্র ইউনিয়ন ও কমিউনিস্টদের ভাঙনের কুফল বাংলাদেশের বামপন্থীরা হাড়ে হাড়ে অনুভব করেছে।

ওই সময়ের যারা এখনো বেঁচে আছেন, তাদের অনেকের মুখেই অনুতাপ শুনি এখন। অনুতাপে কোনো ফল আসে না। ক্যাচ ফেলে ম্যাচ হারার মত করে গোটা ইতিহাসটাই হাতছাড়া করেছেন তারা। তার জন্য দায়ী মূলত অহেতুক অকারণ এক বিভক্তি। ছাত্র ইউনিয়নের এখনকার বিভক্তি জনিত সংকটও অনেকটাই অহেতুক মনে হয় আমার। বিবাদমান দুইটা পক্ষের মধ্যে সহনশীলতার অভাবই সংকটের মূল কারণ।

দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, এই সহনশীলতার অভাবটুকু যতটা না ছাত্রদের ভেতরকার- তার চেয়ে অনেক বেশি বাইরে থেকে আসা। ছাত্র ইউনিয়নের সাথে ভাল সম্পর্ক আছে এরকম একটি বন্ধু রাজনৈতিক দলের কমরেডদের ভেতরে সহনশীলতার প্রকট অভাব নালা বেয়ে গড়িয়ে এসে ছাত্র ইউনিয়নকে সংক্রমিত করেছে। সেটাকে আরো প্রকট করেছে ফেসবুকের ব্যবহার। ফেসবুকে রাজনৈতিক আলাপ আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু সাংগঠনিক মত ভিন্নতার বিষয়গুলো বা সংগঠনে ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব- এসব বিষয়ে সরাসরি অথবা ইংগিতমূলক ভাষায় ফেসবুকে এসে ল্যাদানোর প্রবণতা টলারেন্সকে একদম নাই করে দিয়েছে।

এই দায় ছাত্র ইউনিয়নের এখনকার নেতাকর্মীদের যেমন আছে, তেমনি তার পেরিফেরির বন্ধু সংগঠনগুলোর লোকেরা বা সাবেক- এদের সকলেরই আছে। যে যেখানে আছে, সকলে মিলে কাঁছা খুলে পক্ষ-বিপক্ষের রাজনীতিতে নেমে পড়েছে। পক্ষ-বিপক্ষ সবারই আছে, পক্ষ থাকায় দোষের কিছু নেই। কিন্তু পক্ষ নিয়ে বিভক্তি ধারালো করার কাজটা বিপদজনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

দূরে যারা থাকেন, তারা যাদের কাছে খোঁজখবর নিচ্ছেন- সকলের কাছ থেকেই পারশিয়াল ভাষ্য পাচ্ছেন। ফলে বিভক্তি এড়ানোর গুরুত্বটি যথাযথ বুঝতে পারছেন না। বাস্তবতা হলো, ছাত্র ইউনিয়ন নামক ছোট সংগঠনটি মাঝখান দিয়ে দু-ভাগ হবার মত করে বিভক্ত হয়ে আছে। তারা কাছাকাছি এসে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলে বা দুই ভাগ হয়ে আলাদা দুটো সংগঠন হলে তাদের কারোরই রাজনৈতিক গুরুত্ব বলে কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। বিভক্তির সংকট পার করার অনেক ধরণের চেষ্টা ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে বিদ্যমান আছে।

তারা বসছে, পরস্পরের সাথে কথা বলছে- মীমাংসার নানারকম চেষ্টা চালাচ্ছে বলেই জানি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই সংকট তারা খুব দ্রুতই কাটিয়ে উঠবে। আমরা যারা বাইরে আছি, বুড়ো ধাড়ি দামড়ার দল... আমাদের কাজ হচ্ছে তাদের দ্বন্দ্ব মেরামতে সহায়তা করতে পারলে করা, নইলে চুপচাপ থাকা। দ্বন্দ্বে উস্কানি দেয়া একেবারেই নয়।

ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের কাছে (দুই পক্ষেরই) অনুরোধ জানাই- সবাই বেশি বেশি ছাড় দেন। অন্য পক্ষের নিশ্চয়ই অনেক ভুল আছে, সেদিকে না দেখে নিজেদের ভুলগুলো দেখেন। যেভাবেই হোক ঐক্যবদ্ধ থাকেন। ছাত্র বয়সেই বিভক্তি আর দলাদলিতে মূল শক্তি খরচ আপনাদের সকলেরেই রাজনৈতিক সম্ভাবনাকে নাই করে দেবে। সবচেয়ে বড় কথা হল- তেমন কোনো গুরুতর বিভক্তি না এগুলো। সংকট সমাধানের সূত্র আপনাদের হাতেই আছে। অন্য কারো হাতে নয়।

লেখক: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন


সর্বশেষ সংবাদ