বিশ্ব শিক্ষক দিবস: কিছু কথা

লেখক ড. কুদ্দুস সিকদার
লেখক ড. কুদ্দুস সিকদার  © টিডিসি ফটো

প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালন করা হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস(World Teachers’ Day)। এ দিনে বিনম্রচিত্তে স্মরণ করছি বিশ্বের সকল পর্যায়ের সকল শিক্ষককে। ২০২০ সালে এমন এক সময় বিশ্ব শিক্ষক দিবস সমাগত যখন সারা বিশ্ব থমকে গেছে করোনা থাবায়, বিশ্বব্যাপী প্রাণ হারিয়েছে শিক্ষক ছাত্রসহ ৭ লক্ষাধিক মানুষ। বিশ্বের ২৬৪ মিলিয়ন শিশু ও যুবা শিক্ষা সুযোগের বাইরে রয়েছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রায় ৬৯ মিলিয়ন শিক্ষকেরর ঘাটতি রয়েছে।

বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন উপলক্ষে Education International(EI) প্রতিবছর একটি আকর্ষণীয় প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে শিক্ষকদের মর্যাদা ও অবদান সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে। ২০২০ সালে এ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় “Teachers: Leading in Crisis, Reimagining the Future” অর্থাৎ শিক্ষকঃ সংকটে নেতৃত্ব, নতুন করে ভবিষ্যতের ভাবনা’।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রফেশনাল শিক্ষক সংগঠন শিক্ষকদের কল্যাণে নানা কাজ করে থাকে এবং বিশ্ব শিক্ষক দিবস যথাযথভাবে পালন করে থাকে। কারণ, এ দিবসে শিক্ষকদের মর্যাদা, দায়িত্ববোধ, তাদের সুযোগসুবিধা ও ক্ষমতায়ন ইত্যাদি বিষয় জাতিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। বাংলাদেশেও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতিসহ শিক্ষকদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে অসংখ্য শিক্ষক সংগঠন ও তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা রয়েছেন, কিন্তু তবুও এদিনটি এদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হয় না।

অন্যের আহ্বানে কত ডে পালন করি আমরা কিন্তু শিক্ষক হিসেবে শিক্ষক দিবস পালনেই আমাদের অনীহা! অনেক নির্বাচিত নেতাও হয়তো জানেন না শিক্ষক দিবস কী ও কবে! এটাও বাস্তবতা। এসব সংগঠন সংগঠন ও তার নেতারা শিক্ষকদের কল্যাণ, শিক্ষকদের মর্যাদা, সুযোগসুবিধা ও ক্ষমতায়ন ইত্যাদি নিশ্চিতকরণে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারছে সে প্রশ্নও বারবার উচ্চারিত হচ্ছে।

আজ এমন সময় দিবসটি পালিত হচ্ছে যখন শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি জট, ফাউন্ডেশন ট্রেনিং জট, শিক্ষকদের বিরামহীন পরিশ্রম ও মর্যাদার সংকটসহ বাংলাদেশে শিক্ষা ক্যাডারটাই তো নানাবিধ সংকটের মুখে। এভাবে চলতে থাকলে মেধারীরা এ ক্যাডার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে- যার প্রভাব হবে ভয়ংকর রকমের খারাপ। শিক্ষকদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও অবস্থাণ সুনিশ্চত হোক, তাদের সুযোগসুবিধা ও ক্ষমতায়নের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাক এটাই কাম্য।

তবে সেক্ষেত্রে আমাদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ও সচেতনতার বিকল্প নেই। আজ এমন এক সময় বিশ্বশিক্ষক দিবস পালিত হচ্ছে যখন বিশ্বব্যাপী রয়েছে পেশাগতভাবে সুদক্ষ ও সুপ্রশিক্ষিত শিক্ষকের ব্যাপক স্বল্পতা। বিভিন্ন দিবস পালনে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা নিজেদের ছুটির দিনটিকে বিসর্জন দেয়, লাইন ধরে রোদে দাঁড়িয়ে থাকে আর অতিথিরা এসে জ্ঞানগর্ব বক্তব্য আর সমাজ উন্নয়নের নির্দেশনা দিয়ে চলে যান। সারাদিনের ক্লান্ত শরীর আর কিছু নির্দেশনা নিয়ে শিক্ষক ফিরে যান বাসায়। অন্যদের বেতন বাড়লে শিক্ষকদেরও বেতন বাড়ে সত্য কিন্তু অন্যদের মতো বিভিন্ন সুযোগসুবিধা ও মর্যাদার উন্নয়ন কখনোই তাদের ঘটে না।

থানা শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস, আঞ্চলিক ডিডি অফিস, শিক্ষাবোর্ড, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ডিজি অফিস কিংবা মন্ত্রণালয় ঘুরতে ঘুরতে শিক্ষকরা আজ ক্লান্ত। অনেক ছোট্ট কাজেও মন্ত্রণালয়ে ছুটতে হয় তাদেরকে। বোর্ড থেকে উত্তরপত্রের বস্তা মাথায় নিয়ে অতিকষ্টে হেটে চলা শিক্ষকের ছবিও তো আমাদের অজানা নয়। প্রভাষক পদ হতে প্রফেসর পদ পর্যন্ত শিক্ষা ক্যাডারের অধিকাংশ বদলি/পদায়ন করা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। ফলে মন্ত্রণালয়ে সবাই ভিড় জমাচ্ছে এবং শিক্ষার নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাউশি অধিদপ্তর ক্রমেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে।

অথচ এসব কাজের অধিকাংশ মাউশি অধিদপ্তর থেকে নিষ্পন্ন হলে শিক্ষকদের ভোগান্তি অনেক কমে যেতো। শিক্ষকদের ভোগান্তি কমাতে কেউ যেনো কথা বলার নেই, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষদের জন্য সরকারি কোনো গাড়ির বন্দোবস্ত নেই। এইচএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত পরীক্ষায় ট্রেজারি, শিক্ষাবোর্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে ট্যাক্সি বা রিকশায় করে কিংবা ব্যাক্তিগত গাড়িতে ক্ষেত্র বিশেষে কলেজের নিজস্ব গাড়িতে (যে সব কলেজে গাড়ি আছে) নিরাপত্তাহীন অবস্থায় এবং অনেক সময় ঝড় বৃষ্টি বা প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবেলা করে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র আনা নেয়া করতে হয়।

উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত ইউএনও এর যাতায়াতের জন্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যমানের গাড়ি থাকলেও(যদিও তাদেরও গাড়ি প্রয়োজন) ইডেন কলেজ, ঢাকা কলেজ,এমসি কলেজ, এমএম কলেজ,রাজশাহী কলেজ,চট্টগ্রাম কলেজ, বিএম কলেজ,বিএল কলেজসহ বড় বড় কলেজের অধ্যক্ষদের যাতায়াত ও জরুরি রাষ্ট্রিয় দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার থেকে কোনো গাড়ি বরাদ্দ করা হয়না। সাধারণ শিক্ষকদের যাতায়াতের বিষয়টি এখানে না হয় উল্লেখ নাইবা করলাম। এমনকি নিজ প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে গাড়ি কেনার অনুমতিও নানা নিয়মের বেড়াজালে অনেক সময় আটকে যায়। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোনো গাড়ি না থাকায় বিভিন্ন রাষ্ট্রিয় অনুষ্ঠানে সন্মানিত অধ্যক্ষগণ অংশগ্রহণ করেন রিকশা, ট্যাক্সি বা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়।

উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি, টাকা জমা নেওয়া , হিসাব বিবরণী তৈরি করা, রেজাল্ট শিট তৈরি করা ইত্যাদি কাজও করতে হয় শিক্ষককেই। অর্থাৎ শিক্ষাদানের পাশাপাশি করণিক দায়িত্বও তাদেরকে পালন করতে হয়। অথচ কলেজগুলো সাপোর্ট সার্ভিস নেই বললেই চলে। নিজস্ব অর্থায়নে সাপোর্ট সার্ভিস(পিয়ন, কম্পিউটার অপারেটর) নিয়োগ করতে হয়। ইদানিং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বোর্ডের অনলাইন কার্যক্রমেও শিক্ষকদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। এর সাথে রয়েছে ছাত্র নেতা নামধারী মাস্তানী মোকাবেলা। তাদের হাতে সারাদেশে অধ্যক্ষ, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা কিংবা বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক হেনস্তা হওয়ার ঘটনাও প্রায় নিত্যদিনের।

মাঠ পর্যায়ে এমনকি ঢাকাতেও নেই শিক্ষকদের আবাসিক তেমন সুবিধা। এ যুগেও মাঠ পর্যায়ে একজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাকে থাকতে হয় বেসরকারি মেসে বা কলেজের ভাঙ্গা ডরমেটরিতে। নতুন নিয়োগ পাওয়া একজন শিক্ষককে যোগদান করতে যেয়ে অনেক সময় থাকতে হয় হোটেলে। নতুন যোগদান করতে যাওয়া নারী কর্মকর্তার অবস্থা সহজে অনুমেয়। ঢাকায় নেই সারাদেশ থেকে নিত্যদিন আসা শিক্ষকদের কোনো নিরাপদ রেস্টরুম বা আবাসিক ব্যবস্থা। চারদিকেই শিক্ষকদের অসহায়ত্ব। তাদের জন্য প্রয়োজন জেলা ও থানা পর্যায়ে অফিসার্স ডরমেটরি/মেস নির্মান। কর্ম পরিবেশটাও মানসম্মত নয় শিক্ষকদের। প্রভাষক পদ হতে প্রফেসর পদ পর্যন্ত সব শিক্ষককে বসতে হয় একটি কক্ষে। সেখানে নেই কোনো আধুনিক সুযোগসুবিধা। এতো বৈষম্য দিয়ে কি কোয়ালিটি এডুকেশন আদৌ সম্ভব?

শিক্ষা ক্যাডার ভেকেশন ডিপার্টমেন্টের আওতায়। কিন্তু শিক্ষা বিভাগে ভেকেশন আদৌ আছে কী? বিভিন্ন ছুটিতে থাকে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা ( ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্স ) ও ভর্তি কার্যক্রম। রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুক্রবারেও থাকে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি পরীক্ষা। সরকারি অফিসগুলোতে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন কিন্তু কলেজ শিক্ষকদের একদিন তাও আবার কোনো না কোনো কারণে ভোগ করা সম্ভব হয়না। অথচ আমরা ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট! অর্জিত ছুটি দেয়ার আশ্বাসে ভ্যাকেশন অনেক কমানো হয়েছে। শিক্ষা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে সম্মত হওয়া সত্তেও আজও অর্জিত ছুটির সুবিধা দেয়া হয়নি শিক্ষকদের। কে বলবে কথা?

সরকারি কলেজসমূহে একাডেমিক বিশাল কার্যক্রম পরিচালনা এবং মেধাবীদেরকে শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে প্রয়োজন নতুন নতুন পদ সৃষ্টি করা এবং যথা সময়ে পদোন্নতি নিশ্চিত করা। পদ সৃষ্টির প্রস্তাব বারবার মন্ত্রণালয়ে আটকে যায় নানা কারণে। পদোন্নতি আটকে যায় নানা অজুহাতে, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে অধ্যাপক পদে একটি বড় পদোন্নতি হয়েছে কিন্তু আর্থিক কোনো সুবিধাপ্রাপ্তি হতে তারা বঞ্চিত। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পদে অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়ন করে শিক্ষকদের পদায়ন ও পদোন্নতির সুযোগ সংকুচিত করা হচ্ছে দিনদিন। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা-১৯৮১ এবং বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার ও কম্পোজিশন রুল-১৯৮০ অনুসারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, পরিচালক ও অন্যান্য পদগুলো বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত। কিন্তু এ পদগুলো আজ আনঅফিসিয়ালী আমাদের হাতছাড়া।

শিক্ষকরা সম্মানিত,জাতির মেরুদণ্ড। শুনতে ভালই লাগে। কিন্তু সেই শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মান দিতে, সুযোগসুবিধা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে সৃষ্টি হয় নানা অজুহাত। ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্সে শিক্ষকদের কোন অবস্থান নেই। সরকারি কোনো অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের ( তুলনামূলকভাবে জুনিয়র ) জন্য চেয়ার নির্দিষ্ট থাকলেও কলেজ অধ্যক্ষদের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো চেয়ার নির্দিষ্ট থাকেনা। জেলা উপজেলা পর্যায়ে এ সংকটটি সবচেয়ে তীব্র।

জাতি গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা অনন্য, তাই এদের কাছে জাতির প্রত্যাশাও অনেক। কিন্তু এই শিক্ষকদের মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা ( গবেষণার সুযোগ, সময়মত পদোন্নতি, ইন্টারনেট সুবিধা, বই ক্রয় ভাতা নিরাপত্তা ভাতা, টেলিফোন ভাতা, হেলথ ইনস্যুরেন্স ভাতা, অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাতা,দেশে বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ) নিশ্চিত করার দায়িত্ব কি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নয়? ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে রাষ্ট্রকে অবশ্যই শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট ও টেলিফোন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষক নিজের অর্থ ব্যয় করে করোনা দুর্যোগের মধ্যেও অনলাইন ক্লাস নিচ্ছে, ক্লাস/ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করছে, মোবাইলের টাকা খরচ করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবদের সাথে যোগাযোগ কাখছে কিন্তু ইন্টারনেট ও মোবাইল ভাতা প্রাপ্তি হতে তারা বঞ্চিত। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ শিক্ষক দেশ বিদেশ হতে পিএইচডি ডিগ্রিধারী। তাঁরা যখন উচ্চতর ডিগ্রির জন্য গবেষণারত থাকেন, তখন তাঁরা বৃত্তিসহ পূর্ণ বেতন-ভাতা পান। অথচ সমপর্যায়ের শিক্ষাদানে নিয়জিত থাকলেও কলেজের শিক্ষকদের উচ্চতর গবেষণার সুযোগ কতটুকু? এমনকিএমফিল/পিএইচডি ডিগ্রি তথা উচ্চতর ড্রিগ্রি অর্জনের জন্য এতদিন যে বিশেষ ইনক্রিমেন্ট পেতেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাগণ, নানা অজুহাতে তাও এখন বন্ধ করে রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। কোথাও যেন কেউ নেই আমাদের ন্যায্য দাবির পক্ষে কথা বলার।

পদোন্নতির ক্ষেত্রেও বৈষম্য ব্যাপক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা সত্ত্বেও প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রেডে পদসৃষ্টিসহ পদোন্নতির ক্ষেত্রে সমতা সৃষ্টি এখনো সম্ভব হয়নি শিক্ষা ক্যাডারে। শিক্ষা ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদোন্নতি পদ চতুর্থ গ্রেড। অথচ চতুর্থ গ্রেড কোনো পদোন্নতি পদ নয়, এটা সিলেকশন গ্রেড পদ-যা নতুন বেতন স্কেল অনুযায়ী অকার্যকর। অন্য কাডাগুলোতে পঞ্চম গ্রেড থেকে থেকে পদোন্নতি পেয়ে ৩য় গ্রেডে উন্নীত হয়, কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারে পঞ্চম গ্রেড(সহযোগী অধ্যাপক) থেকে থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়ে চতুর্থ গ্রেডে উন্নীত হয়-যা চরম বৈষম্যের এক উজ্জল উদাহরণ(অনেকেই সহযোগী অধ্যাপক থাকাকালিনই চতুর্থ গ্রেডপ্রাপ্ত)।

এভাবে সুযোগ সুবিধা ও অধিকার বঞ্চিত হয়ে নিজেরাই যেন বিবেকহীন অবস্থায় নিপতিত হচ্ছে জাতির বিবেক শিক্ষক সমাজ। যারা নিশ্চিত করবে কোয়ালিটি এডুকেশন, মানুষ গড়ার কারিগর সেই শিক্ষকদের কোয়ালিটি নিশ্চিত করা আজ সময়ের দাবি। কারণ পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা ও অধিকার বঞ্চিত শিক্ষক দিয়ে আর যাইহোক কোয়ালিটি এডুকেশন সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষকের মর্যাদা দেওয়া হয়; যা আমাদের দেশে নেই। ভারতে শিক্ষক দিবসে সকল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের প্রিয় শিক্ষককে স্নরণ করে,আশির্বাদ নেয়, মিষ্টিমুখ করায়, উপহার দেয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুও শিক্ষকদের মর্যাদা দিতেন। দেশ পুনর্গঠনে তিনি দেশবিদেশে উচ্চতর ডিগ্রিধারী শিক্ষকদেরকে সরাসরি উচ্চপদে( ২০% ) নিয়োগের ব্যবস্থা করেছিলেন(যা পরবর্তীকালে ১০% হয়), দুজন শিক্ষাবিদকে তিনি শিক্ষা সচিব পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে শিক্ষকদেরকে মর্যাদার আসনে বসানোর সে ধারা আর অব্যাহত থাকেনি।

তবে শিক্ষাবান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওনার সরাসরি শিক্ষক প্রয়াত প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান ও জীবন্ত কিংবদন্তি প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলামকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ সে ধারা অব্যাহত রাখেনি। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছেন; সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে শিক্ষকের মর্যাদা দানের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

আজ শিক্ষক দিবসে বিশ্বব্যাপী শিক্ষককে বিনম্রচিত্তে স্মরণ করার দিনটিতেও তো তাদেরকে স্মরণ করার যেন কেউ নেই তাদের পাশে। শিক্ষাবান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিব স্যার শিক্ষকদের নানাবিধ সমস্যা সমাধানে আন্তরিক। কিন্তু তবুও কেন যেন আজ নানা সমস্যা ও সংকটে নিপতিত শিক্ষক সমাজ, যা অতিদ্রুত দূর হওয়া প্রয়োজন। সর্বোপরি, সরকারি উদ্যোগে জাতীয়ভাবেও শিক্ষক দিবস পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করি এবং এসডিজি-৪ অনুযায়ী মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে শিক্ষকদের সুদৃঢ় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।

 

লেখক: ড. কুদ্দুস সিকদার, সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক, ঢাকা কলেজ


সর্বশেষ সংবাদ