কাজে মনযোগ ধরে রাখার উপায়

এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

যেকোনো কাজে সাফল্যের পূর্বশর্ত মনযোগ দিয়ে কাজ করা। প্রতিনিয়ত আমাদের অসংখ্য কাজ করতে হয়। কিন্তু সব সময় কাজে মনযোগ ধরে রাখতে পারি না। কাজে মনযোগ ধরে না রাখতে পারলে শুধু কর্মদক্ষতা কমে যায় না, বরং কাজের মান, কাজ করার ইচ্ছা, আগ্রহ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। ফলে কোনো কাজই ঠিকঠাকভাবে করা হয়ে উঠে না। দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা আমাদের অনেকের জন্য হয়ে উঠেনা। কিন্তু কিছু কৌশল অবলম্বন করলেই আমরা কাজে মনযোগ ধরে রাখতে পারি। আর মনযোগ সহকারে কাজ করলেই সে কাজে সফলতা ত্বরান্বিত হয়। তাহলে দেরি না করে দেখে নেই আমরা যেসব কৌশল অবলম্বন করলে কাজে মনযোগ ধরে রাখতে পারব।

কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করুন: যেকোনো কাজ শুরু করার আগে সে কাজের সময় সীমা নির্ধারণ করাটা জরুরী। কত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করতে হবে। তা যদি আগে থেকে জানা যায় ,তাহলে কাজে গতি বাড়ে। সময় বেঁধে দেয়া থাকলে নিজের মন অবচেতন মনে একটা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটা শেষ করার জন্য মন তাড়াহুড়া করে। ফলে বোঝা যায় কত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করতে হবে। মনে রাখতে হবে- কাজের মধ্যে বারবার ঘড়ি দেখলেও মনযোগে বিঘœ ঘটে।

কাজের তালিকা আগেই তৈরি: আগামীকাল কি কি কাজ করতে হবে তা আগেই ঠিক করে নিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ তালিকার প্রথম দিকে রাখতে হবে ।তারপর একটু কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এভাবে পর্যায়ক্রমে তালিকা তৈরি করলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ বাকি থাকবেনা। আগামীকাল কি কি কাজ করতে হবে তা যদি আগেই ঠিক করে রাখা যায়। তাহলে কাজের গতি ঠিক থাকে।মনেযোগও ঠিক থাকে। অন্যদিকে সময়ও বাঁচানো যায়। যদি একদিন আগে কাজের শিডিউল তৈরি করা সম্ভব না হয়; তাহলে ঘুম থেকে উঠে সকালে সর্বপ্রথম গুরুত্বানুসারে কাজের তালিকা তৈরি করে নিতে হবে। কাজটা করতে কত সময় লাগবে সেটাও লিখে রাখতে হবে। কাজের তালিকা তৈরি করলে গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলো ঠিকমত করা যায়। আর কাজে মনেযোগ ঠিক থাকে।

কাজের মাঝে কিছু বিরতি: একটানা অধিক সময় কাজ করলে কাজে মনযোগ না থাকারই কথা। কারণ একটানা অনেক সময় কাজ করলে স¦াভাবিকভাবে আমাদের মানব মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে যায়। কাজের গতি কমে যায়। তাই কাজের গতি ঠিক রাখার জন্য। কাজে মনযোগ ধরে রাখার জন্য কাজের মাঝে ৪-৫ মিনিটের বিরতি নিন। একটু হাঁটা চলা করুন। চা পান করুন বা সামান্য নাশতা করতে পারেন। আলো বাতাসে গিয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারেন। এতে সতেজতা আসবে। আর কাজেও গতি,মনযোগ দুটোই থাকবে।

একসাথে একাধিক কাজ নয়: আমরা অনেকেই একসাথে একাধিক কাজ করতে যাই। ফলে কোনো কাজই ঠিকঠাকমত হয়ে উঠেনা। তাই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সময় সেই নির্দিষ্ট কাজটিই এক মনে করতে হবে। অন্যদিকে মন দেয়া যাবেনা। কম্পিউটার একসাথে একাধিক কাজ করতে পারলেও মানুষের মস্তিষ্ক একাসাথে একাধিক কাজ করতে গেলে কোনোদিকেই ফোকাস ঠিক রাখা যায়না। তাই যে কাজটি করছেন শুধুমাত্র সেই কাজটিই করুন। সেই কাজের প্রতি ফোকাস রাখুন।সেই কাজটি শেষ হলে অন্য কাজে হাত দিন।

কাজের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করুন: একটা কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি যে,ভালো পরিবেশে ছেলে মেয়েদেরকে বড় হতে দিন।তাহলে ছেলে মেয়েদের উপর এর প্রভাব পড়বে।তারাও ভালো মানুষ হয়ে উঠবে। ঠিক তেমনি ভালোভাবে কোনো কাজ সম্পন্ন করার জন্য সে কাজের অনুকূল পরিবেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। কাজের জন্য অনুকূল পরিবেশ যতটা থাকবে কাজটা তত অল্প সময়ে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সহজ হবে। তাই কাজ করার সময় কাজের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করুন। কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাশে রাখুন।

সামাজিক মাধ্যম থেকে দূরে থাকুন: বর্তমান সময়ে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেনো আমাদের জীবনের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। কিছু সময় পর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করতে না পারলে যেনো অস্থির হয়ে যাই। কিন্তু কাজের সময় ঘন ঘন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করলে কাজের নির্ঘাত ব্যাঘাত ঘটবে। তাই কাজ করার সময় যথা সম্ভব ফেসবুক , ইউটিউব, হোয়াটসআ্যপ, ভাইবার, ইমো প্রভৃতি থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে হবে। হাতের স্মার্টফোনটিও একটু দূরে রাখতে হবে। যাতে ঘন ঘন চোখে না পড়ে আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নোটিফিকেশন চেক করার জন্য ব্যস্ত হয়ে না উঠি।
কাজের অনুপ্রেরণা খুুঁজুন: যেকোনো কিছু করার জন্য অনুপ্রেরণার প্রয়োজন হয়। যেকাজটি কারতে চান সেটি করে আপনার লাভ কি হবে? কেনো কাজটি করতে চান? এগুলো আগে থেকে ভেবেই তার মধ্যে যেকোনো অনুপ্রেরণা খুঁজুন। কাজের জন্য অনুপ্রেরণা পেলে কাজটি করার জন্য আপনার আগ্রহ, উদ্যোম বেড়ে যাবে। আর যখনি আপনার কাজের আগ্রহ উদ্যেম বেড়ে যাবে তখনই কাজে পূর্ণ মনযোগ ধরে রাখতে পারবেন। আর কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করা আপনার জন্য সহজ হবে। তাই যেকোনো কাজ করার সময় অনুপ্রেরণা নিয়ে, আগ্রহ নিয়ে, কাজটিকে ভালোবেসে করুন।

শরীর সুস্থ রাখুন: মানব জীবনে শরীর সুস্থ রাখা সুখি হওয়ার অন্যতম নিয়ামত। সুস্থ না থাকলে যেনো পুরো জীবনটাই বৃথা। সুস্থতা যেমন জীবনের প্রতিটি পদে পদে গুরুত্বপূর্ণ। তেমনি কাজে মনযোগ ধরে রাখার জন্যও শরীর সুস্থ রাখা অন্যতম শর্ত। শরীর সুস্থ না থাকলে কোনো কাজেই মন বসানো যায় না। শরীর সুস্থ রাখার জন্য পরিমিত খাবার খান,পানি পান করুন,ব্যায়াম করুন। এছাড়া শরীর সুস্থ রাখার জন্য অনান্য উপায় অবলম্বন করুন। মনে রাখতে হবে.দেহ ঘড়িটা ঠিকমত সায় দিলে মন ঘড়িটাও ঠিকমত সংকেত দিবে। আর শরীর মন ঠিক থাকলে যেকোনো কাজে মনযোগ ধরে রাখা সহজ হয়।

আরো কিছু কৌশল: কাজে মনযোগ ধরে রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন। স্বাস্থ্যসম্মত পরিমিত খাবার খান।প্রচুর পানি পান করুন। আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেনো প্রার্থনা করুন। প্রার্থনায় মন সতেজ থাকে আর যেকোন কাজে মনযোগ দিতে তো আপনার মনই আপনাকে তাড়না করে। তাই আজ থেকেই মনযোগ দিয়ে কাজ করুন। হয়ে উঠুন সফল সুন্দর মানুষ।


সর্বশেষ সংবাদ