দেখে মনে হচ্ছে সাত কলেজ-ঢাবির যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে
- মো. বিন ইয়ামীন মোল্লা
- প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০১৯, ০৩:৫৪ PM , আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:২১ PM
সমস্যাটা ঢাবি শিক্ষার্থী বনাম ঢাবি প্রশাসন এবং সাত কলেজের শিক্ষার্থী বনাম ঢাবি প্রশাসনের। ঢাবির শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল চায়। কারণ, অনেক সময় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাবির বলে পরিচয় দেয় এবং সার্টিফিকেটে ঢাবি লেখা থাকাটা ঢাবির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ণ করে বলে ঢাবি শিক্ষার্থীরা যে দাবী করেন তা অযৌক্তিক নয়।
এছাড়া এমনিতে ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে চলতে ফিরতে ঢাবি প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার উপর আরো প্রায় এক লাখ সত্তর হাজার শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেওয়াটা মরার উপর খারার ঘা এবং জোর করে ঢাবি প্রশাসনের দ্বারা অসম্ভবকে সম্ভব করার ব্যর্থ চেষ্টা। তাই বলা যায়, ঢাবি প্রশাসনের কাছে ঢাবি শিক্ষার্থীদের সাত কলেজ অধিভুক্তি বাতিলের এই দাবী সম্পূর্ণ ন্যায্য ও যৌক্তিক।
অন্যদিকে ঢাবি প্রশাসনের কাছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবী গুলো যেমন, ৯০ দিনের মধ্যে ত্রুটিমুক্ত ফলাফল প্রকাশসহ একটি বর্ষের সব বিভাগের ফল একসঙ্গে প্রকাশ করা। ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্সের সব বর্ষের ফলে গণহারে অকৃতকার্য হওয়ার কারণ প্রকাশসহ খাতার পুনর্মূল্যায়ন করা। সাত কলেজ পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ভবন রাখা। প্রতিমাসে প্রতিটি বিভাগে প্রতি কলেজে দুই দিন করে মোট ১৪ দিন ঢাবি শিক্ষকদের ক্লাস নেয়া এবং সেশনজট দুর করতে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশসহ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালু করা। দাবীগুলোর একটি দাবী ও অযৌক্তিক নয়।
ভুক্তভোগীদের সমস্যার চিত্র দেখলে দেখা যায় যে, পরীক্ষায় উপস্থিত থাকার পরও রেজাল্টে অনুপস্থিত দেখাচ্ছে। ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা দেয়ার পরও রেজাল্ট আসছে না বা কখনো এক সাবজেক্টে ইম্প্রুভ দিলে অন্য সাবজেক্ট এ আবার ফেল দেখাচ্ছে। অদ্ভুত সব কান্ড। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও এখন এগুলো থেকে মুক্তি চায়। আশাকরি এ পর্যন্ত আমার কথায় ঢাবি বা সাত কলেজের কেউ ভিন্নমত পোষণ করবেন না।
ধরুন একটা দেশী গাভী তার বাচ্চার জন্য দৈনিক ৩ লিটার দুধ উৎপাদন করে। কিন্তু তার বাচ্চার চাহিদাই আরো বেশী সেখানে প্রতিবেশী গাভীর বাচ্চাকে যদি এনে যুক্ত করা হয় আর গাভীকে চাপ দেয়া হয় যে, হে গাভী আরো দুধ দে, হে গাভী আরো দুধ দে।এমন পরিস্থিতিতে ভালো-মন্দ খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে হয়তো আরো আধা কেজি খানিক উৎপাদন বাড়তে পারে এর বেশী চাপ দিলে গাভীর মরে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।
ওই বিষয়টি সাত কলেজের ভাই বোনদের ও বুঝা উচিৎ আর ঢাবির ভাই বোনেরা তো হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।
* এখন কথা হলো এই সমস্যার দায় কার?
এই সমস্যার দায় যেমন ঢাবির শিক্ষার্থীদের না তেমনি সাত কলেজের ভাই বোনদের ও না। এই প্যাঁচটা লাগিয়ে গেছেন ঢাবির সাবেক ভিসি স্যার আ. আ. ম. স. আরেফিন সিদ্দিক স্যার। সম্প্রতি এই বিষয়ে আন্দোলনের ঘটনায় কারো রাগ ক্ষোভ হয়ে থাকলে আরেফিন স্যারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন তিনি কেন এমনটা করেছেন।
* সমাধান কি?
সম্প্রতি আন্দোলনের হাক ডাকের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সাত কলেজ বনাম ঢাবি যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে। এই প্রস্তুতি দেখেই আসলে লেখাটি লেখা। সাথে সাথে আশেপাশের দর্শকদের দেয়া ব্যাপক উস্কানির ফলে যদি খেলটা যুদ্ধের পথেই চলে যায়। তাহলে নিঃসন্দেহে কোন পক্ষের কোন দাবীই আর আলোর মুখ দেখবে না। উল্টো সুন্দর আন্দোলনগুলো ভুতে গিলে খাবে।
তাই সাত কলেজের ভাই বোনদের প্রতি আহবান, আপনারা আপনাদের যৌক্তিক আন্দোলন করছেন করেন তবে ঢাবির শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ বানাইয়েন না। ঢাবির শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান, আপনারা আপনাদের যৌক্তিক আন্দোলন করছেন করেন তবে সাত কলেজকে প্রতিপক্ষ বানাইয়েন না। যাবতীয় দেন-দরবারের মালিক যেহেতু ঢাবি প্রশাসন তাই বুঝাপড়া যা করার তাদের সাথেই করার চেষ্টা করেন।
এছাড়া সর্বশেষ বাস্তবসম্মত সমাধান যেটা হতে পারে বলে মনে হয়, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যেন আরও ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই জন্য পর্যায়ক্রমে ঢাবির অধিভুক্ত থেকে বাতিল করে সাত কলেজের জন্য আলাদা কোন বোর্ড বানিয়ে দিলে আশাকরি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ও আর আইডেন্টিটি ক্রাইসিস এ ভুগবে না। নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয়ে স্ব-গৌরবে খুশি থাকবেন। ঢাবি শিক্ষার্থীরা ও নিজেদের সবটুকু স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রেখে সুখে থাকবে।
লেখক: মো. বিন ইয়ামীন মোল্লা
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়