বাবা দিবস উপলক্ষে গল্প: আব্বা

এম মামুন হোসেন
এম মামুন হোসেন  © ফাইল ফটো

সারাদিন তো শুধু ম্যা (মা)...ম্যা (মা) করো। বাবার একটু খোঁজ খবর নিয়ো। আজ বাবা দিবস। কথাটা শুনে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্ধে পড়লাম। আব্বাকে তো আমরা চার ভাই-বোন ভালোবাসি। কিন্তু আব্বুর সঙ্গে যেন একটু দূরত্ব। সব আবদার মায়ের সঙ্গে। বাসা থেকে বের হতে কিংবা কোথাও যাবার আগে মাকে বলি, মা আসি। আব্বা বাসায় থাকলে মা-ই বলেন, তোর আব্বাকে বলে যা। বুঝতাম কোথাও গেলে তো আব্বাকে বলে যাওয়া হয়না, এটা হয়তো মাকে বলেছেন। কিংবা বাইরে গেলে ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা বললেও বলেন, তোর আব্বার সঙ্গে কথা বল।

দেশের বাইরে প্রথম ইউরোপ ট্যুরে গিয়ে এটা মনে ছিল, বাসায় স্কাইপি কিংবা ম্যাসেঞ্জারে কথা বললে আব্বার সঙ্গে কথা বলতাম। কোথাও গেলে মায়ের জন্য কিছু নিলে আব্বার জন্য আলাদা করে কিছু নেয়া হয় না। আব্বা বাদ পড়ে যান। এই তো কয়েকদিন আগে কক্সবাজার গিয়েছিলাম। সবার জন্য এটা ওটা আনলাম। আব্বার জন্য কিছু আনা হয়নি। পরে নিজে পরার জন্য আনা বার্মিজ লুঙ্গি থেকে আব্বাকে একটি দিলাম। আব্বা সবসময় সাদা লুঙ্গি পরেন। কিন্তু আমার আনা বার্মিজ লুঙ্গি আব্বা ঠিকই পরছেন। আমি ‘মইল্লের’ পোলা। বংশে সবার বড়। মইল্লের সন্তান হচ্ছে পূর্ববর্তী কোনো সন্তান মারা গিয়ে তারপরের ভূমিষ্ঠ সন্তানটি মইল্লের হয়ে যায়। এজন্য বাড়তি আদর-যত্ন, ভালোবাসা। তার উপর আমি মা-বাবা দু’পক্ষে প্রথম নাতি। তাই আহ্লাদের পাল্লা ভারি ছিল। আমরা তিন ভাই আর সবার ছোট একটা বোন। অন্য সবাই জানে সবচেয়ে বেশি আমাকে ভালোবাসে। এনিয়ে আমার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছোট বোনের বিস্তর অনুযোগ। তার সবচেয়ে বড় অনুযোগ হচ্ছে আমাদের ছোট বেলায় মায়ের সঙ্গে তিন ভাইয়ের একটি ছবি নিয়ে। মা তাকে রেখে তিন ছেলেকে নিয়ে গিয়ে স্টুডিওতে ছবি তুলেছেন। এখনো বুঝতে চায় না, ওইসময় ওর জন্মই হয়নি।

পুরনো ঢাকায় আমার জন্মস্থান। এখানকার মুখরোচক সব খাবার প্রতিদিনই আব্বা কিনে আনেন। বেকারি কিংবা রেস্টুরেন্টের খাবার কিনে আনতেন। ছোট বেলায় আব্বা বলতেন, ‘যেমন খাওয়া তেমন পড়া’। আব্বাও বিভিন্ন পদের খাবার খেতে পছন্দ করতেন। এখন ডায়াবেটিস হওয়ার কারণে খাবারের প্রতি আগ্রহ নেই। খুবই স্বল্প আহার করেন। আব্বা তার ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারেন না। কিছুটা আÍকেন্দ্রিক। আমিও তার মত এই আÍকেন্দ্রিক উপলব্ধি পেয়েছি। ভালোবাসেন তবে প্রাণখুলে বলতে পারেন না। ‘এক পুরুষে করে ধন, আর এক পুরুষে খায়, আরেক পুরুষ আইস্যা দেখে খাওয়ার কিছু নাই। হায়! আমার তিন পুরুষ।’ এই গান যেন আমাদের পূর্বপুরুষদের নিয়েই গাওয়া।

আমার প্রপিতামহ জমিদারি থাকলেও এই পুরুষে এসে খাওয়ার কিছু নাই। ওই অর্থে বিত্তশালী নই। কিন্তু আব্বা সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তার স্বপ্ন ছিল তার সন্তান বড় হয়ে তার সম্মান বাড়াবে। প্রতি বছরের জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ ‘বাবা দিবস’ পালিত হয়। সন্তানের বাবা হওয়ার পর এবার আমার প্রথম ‘বাবা দিবস’ উদযাপন। ফেসবুকের টাইমলাইনে দেখলাম ছোট বোন, আমার আর আমার মেয়ের ছবি দিয়ে নবীন এই বাবাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। বাবা হওয়ার আনন্দ, উপলব্ধি এ এক অন্যরকম অনুভূতি। ফেসবুক ওয়াল লাইক আর কমেন্টে ভরে যাচ্ছে। ফেসবুকে বাবা দিবস নিয়ে বিভিন্ন পোস্টে ছেয়ে গেছে। সন্তানরা তার বাবার সঙ্গে ছবিসহ আবেগমাখা পোস্ট করেছেন। সামাজিক এই যোগাযোগ মাধ্যমে অনুভূতি প্রকাশ করছেন। পত্রিকাতে এনিয়ে সংবাদ ছাপা হয়েছে। একটি পত্রিকায় দেখলাম, বৃদ্ধাশ্রমে থাকা বাবাদের নিয়ে স্টোরি করেছে।

সন্তানরা বড় হয়ে ত্যাগ করেছেন তাদের জন্মদাতাকে। ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে ভুলে যায়, তাদের বাবাদের স্নেহ-মমতা-ভালোবাসা। নিজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে। বেলা শেষে তাদের ব্যস্ত জীবনে আসবে স্থবিরতা। সূর্য ডুবে, নামবে সন্ধ্যা। ঘড়ির কাটার মতো ঘটনা চক্রাকারে ফিরে এলো। নবীন বাবারা তাদের প্রবীণ বাবাদের সঙ্গে যা করছেন যদি এই ঘটনা ফিরে আসে? গল্প শুনেছিলাম, এক সন্তান ঝুড়িতে নিয়ে তার বৃদ্ধ বাবা-মাকে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসে। তার ছেলে জিজ্ঞেস করে বাবা, দাদু-দিদা কোথায়? বেড়াতে গিয়েছে বলে ছেলেকে সান্ত্বনা দেয় তার বাবা। তখন ছেলে বলে, ‘বাবা যেই ঝুড়িতে করে দাদু-দিদা বেড়াতে গিয়েছে; ওই ঝুড়িটা তুমি মনে করে নিয়ে এসেছো তো। আমিও বড় হয়ে তোমাদের ওই ঝুড়িতে করে বেড়াতে নিয়ে যাব।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence