শিক্ষকদের বেতন কম হলে ধান্দাবাজি চলবেই: কামরুল হাসান মামুন

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, ‘আমি ভেবে পাই না যিনি যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনিই কিভাবে তার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্টটাইম শিক্ষক হন। শিক্ষকদের বেতন কম হলে এইরকমভাবে ধান্দাবাজি চলবেই। এইটা বন্ধ না করলে দেশে ধান্দাবাজির চাষাবাদও চলবেই। আর বন্ধ করতে হলে শিক্ষকদের উন্নত স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের বিকল্প নেই।’

সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।

ঢাবি অধ্যাপক বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ এখন যেন একটি স্বায়ত্তশাসিত একক প্রতিষ্ঠানের মতো কাজ করছে। প্রতিটি বিভাগের রয়েছে নিজস্ব শিক্ষক, নিজস্ব শ্রেণীকক্ষ, নিজস্ব ল্যাব এবং যন্ত্রপাতি। এই অবকাঠামো, শিক্ষক কিংবা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অন্য কোনো বিভাগের সঙ্গে ভাগাভাগি করা হয় না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন শিক্ষার্থী ছিলাম, তখন গণিত, রসায়ন, ও পরিসংখ্যানের মতো বিষয়গুলি আমাদের সাবসিডিয়ারি বিষয় হিসেবে ছিল। ওই বিভাগের শিক্ষকরাই আমাদের ক্লাস নিতেন, এবং এটি তাঁদের একাডেমিক দায়িত্বের অংশ ছিল। সেই ন্যূনতম পর্যায়ের আন্তঃবিভাগীয় সহযোগিতাও এখন আর দেখা যায় না।’ 

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, ‘বর্তমানে, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অন্য বিভাগে ক্লাস নেন পার্ট-টাইম শিক্ষক হিসাবে। কি আশ্চর্য! অথচ আগের দিনে কোনো শিক্ষক যখন নিজ বিভাগের বাইরের শিক্ষার্থীদের পড়াতেন, তখনও সেই পাঠদানের ওয়ার্কলোড মূল বিভাগের দায়িত্ব হিসেবেই গণ্য হতো। তখন শিক্ষকেরা শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড বা একাডেমিক মিটিংয়ে অংশ নিলেও কোনো বাড়তি “এনভেলপ মানি” গ্রহণ করতেন না।’

তিনি বলেন, ‘আমি ভেবে পাই না যিনি যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনিই কিভাবে তার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্টটাইম শিক্ষক হন। শিক্ষকদের বেতন কম হলে এইরকমভাবে ধান্দাবাজি চলবেই। এইটা বন্ধ না করলে দেশে ধান্দাবাজির চাষাবাদও চলবেই। আর বন্ধ করতে হলে শিক্ষকদের উন্নত স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের বিকল্প নেই। 

অর্থাৎ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কোনো কার্যকর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বা সমন্বয় কাঠামো নেই। কোনো বিভাগে যদি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী শিক্ষক থাকেন, তাহলে সেই বিভাগ অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ, ভালো মানের ল্যাব কিংবা বেশি সুবিধা পেয়ে যেতে পারে, অথচ অন্য বিভাগ সেসব থেকে বঞ্চিত হয়।’

ঢাবি অধ্যাপক বলেন, ‘এই সমস্যাগুলোর অনেকটাই সহজে সমাধান করা সম্ভব হতো একটি ‘শেয়ারিং অ্যান্ড কেয়ারিং’ সংস্কৃতির মাধ্যমে। যেমন, প্রতিটি অনুষদে একটি করে লেকচার থিয়েটার থাকতে পারত, যেখানে সংশ্লিষ্ট অনুষদের সব বিভাগের ক্লাস একটি কেন্দ্রীয় রুটিন অনুযায়ী পরিচালিত হতে পারত। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গার অপচয় কমে যেত এবং স্থান ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ত।’

তিনি বলেন, ‘এই লেকচার থিয়েটারে বিভিন্ন মাপের শ্রেণীকক্ষ, অডিটোরিয়াম, ইনডোর খেলাধুলার জায়গা, ক্যাফেটেরিয়া, এমনকি ছোট দোকানও থাকতে পারত। এর ফলে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সামাজিক মেলবন্ধন গড়ে উঠত।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু বর্তমানে, প্রতিটি বিভাগ এতটাই স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হয় যে অনেক শ্রেণীকক্ষ অব্যবহৃত বা খুব কম ব্যবহৃত থেকে যায়। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গার অপচয় হয় এবং সেইসঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও ব্যাহত হয়। এইসব সভ্য সিস্টেম যদি বিশ্ববিদ্যালয়েই চর্চিত না হয় তাহলে দেশ থেকে এইসব কিভাবে আশা করব?’


সর্বশেষ সংবাদ