রাখাইনে ‘করিডর’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হবে না তো?

শরিফুল হাসান
শরিফুল হাসান  © টিডিসি সম্পাদিত

মিয়ানমারের রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। আমার শুধু প্রশ্ন, এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে এই দেশের সাধারণ মানুষের মত আছে কী নেই এটা কী সরকার যাচাই করেছে? রাজনৈতিক দলগুলো কী সবাই এই বিষয়ে একমত? আচ্ছা জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া একটা অন্তবর্তীকালীন সরকার কী করিডরের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে?

সরল মনে আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন, এই করিডোর দিয়ে যে-সব মালপত্র যাবে সেখানে অস্ত্র বা মাদক যাওয়া-আসা করবে না সেটা  কীভাবে যাচাই-বাছাই করা হবে? মানবিক করিডর চালু হলে আরাকান আর্মি, বিদ্রোহী বা অন্য কোন গোষ্ঠী বা অপরাধীরা সেটাকে নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ নেবে কী না সেটাও আমি জানতে চাই। নিলে আমাদের করণীয় কী? 

আচ্ছা, এই মানবিক করিডর দেওয়ার বিনিময়ে জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক কোন সম্প্রদায় কী রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে? আমি বুঝলাম রাখাইনে থাকা জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে এই করিডর। কিন্তু কোন কোন শর্তে আমরা করিডর দিচ্ছি? এ বিষয়ে আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমারের সামরিক জান্তার অবস্থান কী একই? 

আচ্ছা, মিয়ানমারের সঙ্গে তো ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, লাওসেরও সীমান্ত আছে। এই দেশগুলোকে কী মানবিক করিডর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে? নাকি শুধু বাংলাদেশকেই করিডর বানানো হবে? দেখেন মানবিক হতে আমার কোন আপত্তি নেই। আমি বরং মানবিক মানুষ। কিন্তু একটু খেয়াল করলে দেখবেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি আমরা, কিন্তু একজনকেও কী ফেরত পাঠাতে পেরেছি? না পারলে কেন পারলাম না? জাতিসংঘ তখন কী করেছে? 

একবার ভাবুন। উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে এখন নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আশ্রয়শিবিরে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সি শিশুর সংখ্যাই ৫ লাখ। প্রতিবছর ক্যাম্পে নতুন করে ৩০ হাজার শিশু যুক্ত হচ্ছে। বিয়েও হচ্ছে ব্যাপক৷ এদের ভবিষ্যৎ কী?

সরকারের কাছে জানতে চাওয়া, কয়েকদিন আগেই তো আপনারা এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানোর কথা বললেন, তাহলে নতুন করে এক লাখ রোহিঙ্গা কীভাবে এলো? বাংলাদেশের জনগণ কী নতুন করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে একমত। আচ্ছা এই ১২-১৩ লাখ রোহিঙ্গা আছে তারা না গেলে কী হবে? জাতিসংঘকে কী আমরা বলতে পারব, মানবিক করিডোর দেওয়ার বিনিময়ে এক বছর দুই বছর পর রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতেই হবে। না পাঠালে তখন জাতিসংঘ কী করবে?

আমি রাখাইনের এই অঞ্চলে নিজে গিয়েছি। শুধু বাংলাদেশ নয় মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ায় কাজ করতে গিয়েও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দুরবস্থা যেমন জানি, তেমনি মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচার, মানবপাচার থেকে শুরু করে নানা অপরাধের নিউজ করেছি। রোহিঙ্গাদের আচরণ থেকে শুরু করে মিয়ানমারের সরকারের আচরণ কেমন কিছুটা বুঝি। সেই বিবেচনায় আমার প্রশ্ন, নতুন করে কোন বিপদ আমরা ডেকে আনছি না তো? 

আমার সবসময় ভয় হয়, জাতিসংঘ, চীনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে দুর্বল ভূমিকা তাতে রোহিঙ্গাদের কখনো মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো নাও যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কী হবে? আশা করছি সরকার বিষয়গুলো বিবেচনা করবে।  

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ, দেখেন আপনারা তো নানা বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত্যের জন্য কাজ করছেন। আপনাদের কাছে অনুরোধ, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে একটা জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করুন। এই দেশের সব রাজনৈতিক দলের কাছে জানতে চান রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অবস্থান কী? জানতে চান করিডর দেব কী না? দিলে কী কী শর্তে দেব? কীভাবে অপরাধমূলক কাজকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে? পৃথিবীর কোন দেশে করিডরের এমন উদাহরণ আছে যেখানে সমস্যা হয়নি?

একজন নাগরিক হিসেবে এই দেশের প্রত্যেকটা নাগরিকের এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার অধিকার আছে। এসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকার নেয় কী করে? কোন আইনে? সরকারকে বলব, এসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়গুলো স্পষ্ট না করে দয়া করে আর মানবিকতা দেখাবেন না। এমন কিছু করবেন না যা বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে যায়। 

আশা করছি নীতি নির্ধারকরা বিষয়গুলো ভাববেন। আশা করি তারা মনে রাখবেন সবার আগে বাংলাদেশ! দেখেন নানা বিষয়ে ভিন্নমত থাকলেও দেশের স্বার্থে সবাইকে এক জায়গায় আসতেই হবে। এ কারণেই বলছি জনগণের মতামত নিন। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করুন। এমন কিছু করবেন না যাতে দেশের ক্ষতি হয়! ভালো থাকুন সবাই! ভালো থাকুক প্রিয় বাংলাদেশ।

লেখক:  ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও বিশ্লেষক


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence