রেজাল্ট নিয়ে মন খারাপ, তাহলে শোনো
- মুহম্মদ সজীব প্রধান
- প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২২, ০৭:০১ PM , আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২২, ০৭:৫৩ PM
পরীক্ষায় বন্ধুদের মতো চমৎকার রেজাল্ট করতে পারোনি তাই মনটা আজ মেঘলা আকাশের মতো অন্ধকার হয়ে গেছে, তাইনা? চারদিকে পরিচিত মানুষের সামনে যেতেও দ্বিধা হচ্ছে। দরজা বন্ধ করে একাকী হতাশার সাগরে হারিয়ে যাচ্ছো। আমি জানি এই মুহূর্তে পুরো পৃথিবীটা তোমার বিরুদ্ধে মনে হচ্ছে এবং নিজেকে ব্যর্থ ভাবছো।
চলো, তোমাকে ১টি বাস্তব গল্প শোনাই। আমার গ্রামের ছোটভাই আদনান। সে মোটামুটি ভালো স্টুডেন্ট এবং পরীক্ষাও ভালোই দিয়েছিলো। কিন্তু যেদিন রেজাল্ট দিয়েছিলো সেদিন আকাশটা তার মাথার ওপর ভেঙে পড়েছিলো। তার জিপিএ আসে ৩.৩৩ অর্থাৎ বি গ্রেড যা খুবই খারাপ রেজাল্ট হিসেবেই আমরা বিবেচনা করে থাকি। রেজাল্টের পর তার বাবা মাও তাকে বুঝতে পারেনি বরং সবাই তাকে তাচ্ছিল্য করেছিলো।
আরও পড়ুন: স্কুলে স্কুলে বাঁধভাঙ্গা উল্লাস শিক্ষার্থীদের
তবে এর পরের গল্পটা অন্যদিকে মোড় নেয়। আদনান ছিলো দৃঢ়চেতা মনোবলের। অতঃপর সে কলেজ থেকে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে। নিজের সাথে নিজের চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাতদিন এক করে পড়াশোনা করে। ফলশ্রুতিতে, এইচএসসি পরীক্ষায় ঈর্ষণীয় ফলাফল অর্জন করে সে। এরপর শুরু হয় আসল লড়াই। ছেলেটা ভর্তি পরীক্ষায় দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের স্বনামধন্য আরো ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের স্থান দখল করে নেয় যা সবাইকে অবাক করে দেয়। এবার বলো, ২বছর আগে যে ছেলেটা ‘বি’ গ্রেড পাওয়ায় সবাই তাকে ব্যর্থ ভেবেছিলো সে ছেলেটা কি আসলেই ব্যর্থ? নিশ্চয়ই সে এখন সফলতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এবার চলো জনৈক পণ্ডিতের গল্প শোনাই। স্কুল জীবনে একজন পণ্ডিত ক্লাসে কখনোই পড়া পারতেন না। একদিন তার শিক্ষক তাকে চরম অপমান করে ক্লাস থেকে বের করে দেন। তারপর তিনি নদীর পাড় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরছিলেন। স্কুল থেকে বাড়ি বেশ দূরে ছিল তাই ক্লান্ত হয়ে পাথরের একটি ঘাটে খানিকটা বসে বিশ্রাম নেন। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন গ্রামের মহিলারা মাটির কলস দিয়ে পানি নেওয়ার সময় যেখানে কলস রাখেন সে স্থানটি ক্ষয় হয়ে গর্তে রূপ ধারণ করেছে যা তাকে ভীষণ ভাবায়। তখন তিনি ভাবতে লাগলেন মাটির কলসের ঘষায় যদি পাথর ক্ষয় হতে পারে তাহলে আমি চেষ্টা করলে আমার ব্রেন কেন ধারালো হবেনা?
তারপর তিনি নিরলস পরিশ্রম করে এক মাস পর ক্লাসে যান। তখন তার সেই শিক্ষক তাকে আবারো পড়া জিজ্ঞেস করে অবাক হন। তাকে বইয়ের যেখান থেকেই প্রশ্ন করা হয় তিনি সেখান থেকেই নির্বিঘ্নে জবাব দিতে থাকেন। তারপর সময়ের সাথে সাথে তিনি হয়ে ওঠেন সে সময়ের প্রথিতযশা পণ্ডিত।
তুমিও আজ হয়তো রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় মন খারাপ করছো কিংবা কান্না করছো। আমি তোমাকে বলছি, চোখের পানি মুছো আর নিজের সাথে প্রতিশ্রুতি দাও যে আগামী ২ বছরের মধ্যে নিজেকে বদলে দিবে। যদি তুমি এইচএসসি এবং ভর্তি পরীক্ষায় তোমার সেরাটা দিতে পারো তাহলে নিজেকে প্রমাণ করতে এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট সামান্যতম প্রভাব ফেলবে না। তাই এখন থেকেই এমন কিছু করো যাতে আজ যারা ভাবছে তুমি জীবনে কিছুই করতে পারবেনা তাদের ধারনা যাতে ধূলিসাৎ হয়ে যায়। চ্যালেঞ্জ নাও, আত্মবিশ্বাস রাখো এবং পরিশ্রম করো। মনে রেখো দিনশেষে, সাফল্য আসবেই। অফুরন্ত শুভ কামনা তোমার জন্য।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।
ই-মেইল: sajibprodhanbd@gmail.com