মেডিসিনসহ ৫ ক্লিনিক্যাল বিভাগ

সরকারি মেডিকেল কলেজে সিনিয়র শিক্ষক সংকট

ফাঁকা ৩৬৮ অধ্যাপক-সহযোগী অধ্যাপক পদ; বিশেষজ্ঞ জ্ঞান কম পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজের লোগো
বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজের লোগো  © টিডিসি ফটো

দেশে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং পরিবার কল্যাণ বিভাগের অধীনে থাকা সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজগুলোতে অধ্যাপকসহ দুই উচ্চপদে মঞ্জুরকৃত আসনের বিপরীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক ও শিক্ষক নেই। মেডিসিনসহ ৫ ক্লিনিক্যাল বিভাগে এই দুই পদে সারাদেশে সবমিলিয়ে ৩৬৮টি পদ শূণ্য রয়েছে। দেশব্যাপী সরকারি কলেজ ও হাসপাতালগুলোতে অপর্যাপ্ত অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক নিয়েই পরিচালিত হচ্ছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা। ফলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক না থাকায় তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে সার্বিক স্বাস্থ্য শিক্ষায়। 

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য উঠে এসেছে। চলতি বছরের মার্চ মাসের হিসেব অনুযায়ী তৈরি করা এই প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মেডিসিন, সার্জারী, গাইনী ও অবস, পেডিয়াট্রিকস এবং অর্থপেডিকস বিভাগে মোট ৩৬৮ টি অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদ শুন্য। 

“নতুন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করার আগে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করার পাশাপাশি সিনিয়র শিক্ষক বাড়ানো দরকার। সঙ্কটের মধ্য দিয়ে নতুন কলেজ প্রতিষ্ঠা করে এখন অবস্থা হয়ে গেছে পা ঢাকলে মাথা দেখা যায়, আর মাথা ঢাকতে গেলে পা দেখা যায়-ভিসি, বিএসএমএমইউ

কলেজগুলোতে মেডিসিন বিষয়ের ২৪৬টি পদের বিপরীতে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক রয়েছে ৮৬ জন। অধ্যাপক পদে ৬৪টি এবং সহযোগী অধ্যাপক পদে ৯৬টি শুন্য আসন নিয়েই স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সেবা দিচ্ছে এই বিভাগ। তবে অতিরিক্ত ৫১ জন সহকারী অধ্যাপক থাকলেও সবমিলিয়ে ৪২৫ পদের বিপরীতে রয়েছে ৩১৬ জন। সুতরাং ১০৯টি শুন্য পদ নিয়েই চলছে মেডিসিন বিভাগের কার্যক্রম।  

আরও পড়ুনঃ দ্রুত সময়ের মধ্যে ২৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হবে: শিক্ষামন্ত্রী

সক্ষমতার চেয়ে বেশি মেডিকেল কলেজ হওয়াতে এই সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, নতুন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করার আগে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করার পাশাপাশি সিনিয়র শিক্ষক বাড়ানো দরকার। সঙ্কটের মধ্য দিয়ে নতুন কলেজ প্রতিষ্ঠা করে এখন অবস্থা হয়ে গেছে পা ঢাকলে মাথা দেখা যায়, আর মাথা ঢাকতে গেলে পা দেখা যায়৷ 

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ

তিনি আরও বলেন, এই সঙ্কট দূর করতে আমরাও উদ্যোগ নিয়েছি। মেডিকেলে দেশের শীর্ষ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা বাড়িয়েছি। এখন আগের তুলনায় অধিক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠবেন। এতে আগে চেয়ে অধিক পরিমাণ চিকিৎসক দ্রুত পদোন্নতি পাবেন। যার ফলে দেশব্যাপী মেডিকেল কলেজগুলো সিনিয়র শিক্ষক সঙ্কট কেটে উঠতে পারবে।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ৩৭টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে শুধুমাত্র ২টি প্রতিষ্ঠানের মেডিসিন বিভাগেই পর্যাপ্ত অধ্যাপক রয়েছে। মানিকগঞ্জের কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজ এবং রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে এই বিভাগে ১টি করে পদ রয়েছে। পদ সংখ্যা অনুযায়ী অধ্যাপক নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে শুধুমাত্র এই দুই প্রতিষ্ঠানের মেডিসিন বিভাগ। এছাড়া দেশের ৩৫ মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগেই পদ সংখ্যার বিপরীতে অপ্রতুল অধ্যাপক রয়েছেন। এরমধ্যে শুন্য অধ্যাপক নিয়েই চলছে ২২ মেডিকেল কলেজের এই বিভাগটি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ এবং বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগে ৬ পদের সবকগুলোতেই ফাঁকা রয়েছে। 

মেডিসিন বিভাগে কোন অধ্যাপক না থাকা কলেজগুলোর মধ্যে রয়েছে নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ, সুনামগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, যশোর মেডিকেল কলেজ, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ, মাগুরা মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, নওগাঁ মেডিকেল কলেজ, নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজ, নীলফামারী মেডিকেল কলেজ, পাবনা মেডিকেল কলেজ, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ এবং বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ। 

শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ

সার্জারী বিভাগে ১০৮টি পদের বিপরীতে জেষ্ঠ্য দুই পদে রয়েছে ৫৯ জন। অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যথাক্রমে ২৩টি এবং ২৬টি পদ ফাঁকা। অধ্যাপক পদে ২৯টি এবং সহযোগী অধ্যাপক পদে ৩৬টি শুন্যপদ নিয়ে চলছে গাইনী ও অবস বিভাগ। ১১৪টি পদের মধ্যে এই বিভাগে অধ্যাপক ১৯ এবং সহযোগী অধ্যাপক ৩০জন। পেডিয়াট্রিকস বিভাগে সিনিয়র শিক্ষকের এই দুই পদে ৮৯ জন থাকার কথা। এতে শুধুমাত্র ৯ জন অধ্যাপক এবং ২৪ সহযোগী অধ্যাপক পদ পূরণ হলেও শুন্য রয়েছে বাকি ৫৬টি পদ। অর্থপেডিকস বিভাগে ৮৫ জন অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের জায়গায় যথাক্রমে ১৬টি ও ৩১টি পদ পূর্ণ। ৩৮টি শূন্য পদ নিয়ে চলছে এই ক্লিনিক্যাল বিভাগ। 

২ মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগে সর্বোচ্চ ৬টি করে অধ্যাপক পদ ফাঁকা রয়েছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ এবং বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের এই বিভাগটিতে ৬ পদের সবকটি ফাঁকা রয়েছে। ফলে বিশেষজ্ঞ জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এই মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঘাটতি নিয়েই ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছেন তারা।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগে সিনিয়র পদে সঙ্কট হলেও শিক্ষা এবং চিকিৎসা দিতে এই কলেজের সমস্যা পোহাতে হয় না বলে জানিয়েছেন কলেজটির উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. আব্দুল হান্নান মিয়া। তিনি বলেন, আমরা ঠিকঠাকভাবেই কলেজে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করার পাশাপাশি চিকিৎসা প্রদান করে থাকি। তবে জুনিয়রদের পদোন্নতি আরেকটু দ্রুত ঠিকমত দেয়া হলে সঙ্কট আর থাকবে না বলেও মন্তব্য করেছেন এই দায়িত্বশীল শিক্ষক ও চিকিৎসক।

পদোন্নতিজনিত সমস্যার ফলে সিনিয়র পদগুলোতে সঙ্কট দেখা দেয় বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, অনেক শিক্ষক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েও পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছেন। এটা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি জুনিয়রদের সময়মত পদোন্নতি হয়ে গেলে এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠা সহজ হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence