ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পেলেন এক মাদ্রাসার অর্ধশত শিক্ষার্থী

তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা
তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা  © টিডিসি ছবি

এ বছর দেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষায় তা’মীরুল মিল্লাত ট্রাস্ট পরিচালিত তিনটি মাদ্রাসার ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা মিজানুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, প্রতিষ্ঠানটি থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে।

তিনি বলেন, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুশৃঙ্খল পরিবেশ, পাঠদানে শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং কঠোর তদারকির ফলে প্রতিবছর আশানুরূপ ফলাফল করছেন শিক্ষার্থীরা। মূলত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতিবছর দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ হচ্ছে। এ বছর প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৫৫ জন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

আরও পড়ুন: ঢাবি-গুচ্ছের পর এবার জাবিতে চমক তা’মীরুল মিল্লাতের বুশরার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটে ভর্তির সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে— আমিনা বুশরা তৃতীয়, আশরাফুল আলম চতুর্থ, আহমাদ সাদিক ১৭৩তম, সাঈদ ১৯৭তম, শহিদুল ইসলাম ২০১তম, অলিউল্লাহ ৩৭০তম, আলিফ মাহমুদ ৫৩৭তম, সাইফুদিন নাঈম ৬১২তম, আরিফুল ইসলাম ৭৭৫তম, মিনহাজুল ইসলাম ৮৮০তম, সোয়াইব হোসেন ৯৫২তম, মনিরুজ্জামান ১৩০০তম, ইয়াসিন আরাফাত ১৩৮১তম, মারফ আজিজ ১৪৩৯তম, আব্দুল্লাহ আল জুবারের ১৫৯৯তম, নাইমুর রহমান ১৬৯৭, সাইয়েদুজ্জামান নুর আলভী ১৮৬৬তম, মুজাহিদ সিফাত ১৯৮৮তম এবং দেলোয়ার হোসেন ১৯৯৪তম।    

ভর্তির সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও রয়েছে— ইসমাইল হোসেন নাদিম, ফখরুদ্দিন সিফাত, ওমহিবুল্লাহ রায়হান, সিহাদ আকন্দ, মইনুল মুরসালিন, ফাহিম ফিরদৌস, মুজাহিদুর রহমান, মুনতাসির বিল্লাহ, সগির বিন ইসমাদল, আলি হাসান মর্তুজা, মোহাম্মদ সিফাতুল্লাহ, সাইফুদ্দিন, আলি হাসান মুজাহিদ, ইয়ামিন প্রমুখ।

আরও পড়ুন: জাবির ভর্তি পরীক্ষায় চমক একই মাদ্রাসার ৫ শিক্ষার্থীর 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয়, ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৯৪তম এবং ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৪০তম স্থান অর্জন করেছেন মাদ্রাসাটির ছাত্রী আমিনা বুশরা। সেইসঙ্গে গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মানবিকের ‘বি’ ইউনিটে ৮০তম স্থান অর্জন করেন। তাছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ‘বি’ ইউনিটে ১ম এবং ‘সি’ ইউনিটে ৬৮তম এবং ‘ই’ ইউনিটে ২য় স্থান অর্জন করেছেন তিনি।

প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি বেশি উল্লেখ করে বুশরা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে আমি যতটুকু চেয়েছি তারচেয়েও বেশি পেয়েছি। আমি অত্যন্ত খুশি। এই ফলাফল আসলেই অনেক আনন্দের। আমি চেষ্টা করেছি, আল্লাহ সফলতা দিয়েছেন। এই অনুভুতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। নিজের সম্মান, মাদ্রাসা ও পরিবারের জন্য কিছু করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। আমার শিক্ষকগণ ও আমার পরিবারের সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।

আরও পড়ুন: ঢাবি, চবি, রাবি, জাবি ও গুচ্ছে সেরা দশে এই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলে সেরা ১০ জনের তালিকায় জায়গা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মাদ্রাসাটির শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম। চলতি বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটে ৯ম, ‘খ’ ইউনিটে ৪র্থ, ‘গ’ ইউনিটে ২য় স্থান অর্জন করেছেন। গুচ্ছ অন্তর্ভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় হয়েছেন ১০ম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটে ১ম স্থানসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৫ম স্থান অর্জন করেন।

এ সাফল্যের জন্য আশরাফ তার বাবা–মা ও নিজের চেষ্টা মাদ্রাসার মোটিভেশানকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বাবা–মা অনেক কষ্ট করেছেন আমার জন্য। আমিও চেষ্টার কোনো ত্রুটি করিনি। মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি, আলহামদুলিল্লাহ।

ভালো ফলাফলের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কখনো ঘড়ি ধরে পড়িনি। সময় নষ্ট না করে নিয়মভাবে পড়ার চেষ্টা করতাম। নিয়মিত পড়াশোনা, অধ্যবসায়, সর্বোচ্চ চেষ্টা এবং আল্লাহর রহমত তার এ সাফল্য এনেছে বলে মনে করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া মাদ্রাসাটির আরেক শিক্ষার্থী সায়েদুজ্জামান নুর আলভী বলেন, দেশসেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য রহমত ও সৌভাগ্যের বিষয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে মাদরাসার অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলীর যথাযথ পাঠদান ও অনুপ্রেরণা এবং তা'মীরুল মিল্লাতের শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। আলিম শ্রেণির একদম শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কেন্দ্রীক যথাযথ পড়াশোনার কারণে আল্লাহর রহমতে আমরা এত ভালো রেজাল্ট অর্জন করতে পেরেছি।

তা’মীরুল মিল্লাত মাদ্রাসাকে শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান বলেন, দেশের মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা। প্রতিবছর আল্লাহর অশেষ রহমতে দেশের প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় আমাদের শিক্ষার্থীরা সন্তোষজনক ফলাফল অর্জন করছে। দেশ বিদেশে সুনামের সাথে পড়াশোনা করছে। আগামী দিনে এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও আশা ব্যক্ত করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ