হুমায়ূন আহমেদের সেরা গ্রন্থগুলো
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:১৮ AM , আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:১৮ AM
প্রয়াত লেখক হুমায়ুন আহমেদ এই প্রজন্মের কাছে কতটা জনপ্রিয় তা বলার প্রয়োজন নেই। বাংলা সাহিত্যের আধুনিক জাদুকর তিনি। যা লিখেছেন তাই পেয়েছে পাঠকপ্রিয়তা। তার প্রকাশিত প্রায় ৩০০ টি গ্রন্থের সবগুলোই বাংলা সাহিত্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তার সেরা গ্রন্থের সংখ্যাও অগণিত। আর সেই শ্রেষ্ঠ বইগুলোর মধ্যে এখানে কিছু বই তুলে ধরার চেষ্ঠা করা হল, যেগুলো আসলে না পড়লেই নয়…
জোছনা ও জননীর গল্প
বইটি ২০০৪ সালে একুশে বই মেলায় প্রকাশিত হয়। বইটিকে আসলে শুধু উপন্যাস বললে ভুল হবে। বইটি এঁকোটি উপন্যাসের চেয়েও বেশি কিছু ধারণ করে। উপন্যাসটির মূল বিষয়বস্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। এখানে আপনি অনেক পরিচিত মুখের মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পর্কে জানতে পারবেন। যেমনঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, মওলানা ভাসানী, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, ইন্দিরা গান্ধী সহ অনেকের কথা। মোহমুগ্ধ হয়ে আপনি পড়তে থাকবেন স্বাধীনতার বিজয়গাঁথা , তৎকালীন মানুষের জীবন সংগ্রাম , ক্ষোভ , হতাশা , আনন্দ , বিজয় । বইটিতে রয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর নানা নিপীড়ন ও অত্যাচারের কথা। উপন্যাসে বারবার উঠে এসেছে বীভৎস সেই ভয়াবহতার চিত্র গুলোই। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেকে দেশান্তরিত হয়েছে । অনেকে হারিয়েছে প্রিয়জন কে। আজ আমরা স্বাধীন হয়েছি। কিন্তু ব্যক্তি পর্যায়ে মানুষের অনুভূতি গুলো তখন মুক্তিযুদ্ধের সময় কেমন ছিল তা লেখক ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন এই বইটিতে।
দেয়াল
গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়ার আগেই দেয়াল নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। বিষয়টা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। পরবর্তিতে কিছুটা পরিবর্তন করে উপন্যাসটি প্রকাশ করা হয়। এটি একটি ইতিহাস ভিত্তিক উপন্যাস। যেখানে লেখক দুইটি আখ্যান সমান্তরাল ভাবে লিখে উপন্যাসটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। বইটির প্রথম আখ্যানে রয়েছে অবন্তি নামে এক তরুনির। যে ঢাকা শহরে নিজের পিতামহের সাথে থাকে। তার দাদা কিছুটা রক্ষনশীল মানসিকতার। তিনি সব সময় অবন্তিকে নজরদারিতে রাখেন, অবন্তির মায়ের চিঠি লুকিয়ে পড়েন , অবন্তির গৃহ শিক্ষকের উপরেও নজরদারি করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা ঢাকা শহর থেকে পালিয়ে যায়, আশ্রয় নেয় এক পীরের বাসায়। পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থাকে অবন্তিকে রক্ষা করতে পীর নিজের ছেলের সাথে অবন্তির বিয়ে দেন…অবন্তির আকস্মিক ভাবে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলো মেনে নিতে কিছুটা সমস্যা হয় শুরু হয় জটিলতা।
সরফরাজ খান যিনি অবন্তির পিতামহ, তার পুত্রের বন্ধুদের একজন মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ। অবন্তিদের-বাড়িতে তাঁর আসা-যাওয়া আছে। তাঁর সূত্রে কর্নেল তাহেরও এখানে এসেছেন। এভাবেই প্রথম আখ্যানের সঙ্গে দ্বিতীয় আখ্যানের যোগ সাধিত হয়।
দ্বিতীয় আখ্যানটি সূচিত হয় মেজর ফারুকের বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে। এই পরিকল্পনায় ফারুক ও মেজর রশীদ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ও ওসমানীকে জড়িত করে। পরিকল্পনায় ফারুক ও মেজর রশীদ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ও খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান, কারাগারে চার নেতা হত্যা, কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহী-জনতার বিপ্লব, জিয়াউর রহমানের মুক্তিলাভ ও ক্ষমতাগ্রহণ, খালেদ মোশাররফ ও কর্নেল হুদার হত্যা এবং তাহেরের ফাঁসিতে উপাখ্যানের সমাপ্তি। এই সব কিছুই এই বইয়ে খুঁজে পাওয়া যাবে। বইটিতে গল্পের ভেতর দিয়ে ইতিহাসকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যার ফলে অনেক জটিল বিষয়ও পাঠকের কাছে সহজ রুপে ধরা দিয়েছে।
মধ্যাহ্ন
১৯০৫ সালের গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে এ উপন্যাস রচিত হয়েছে। এটি দুই খন্ডের উপন্যাস। যার প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে এবং দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয় ২০০৭ সাথে। পরবর্তীতে ২০০৮ সাথে দুইটি খন্ড একত্রে অখন্ড আকারে প্রকাশিত হয়। এ উপন্যাসে লেখক একটি ঐতিহাসিক পটভূমিকে পরোক্ষ করেছেন। ঐতিহাসিক পটভূমির অংশ হিসেবে বিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলাকে বেছে নিয়েছেন তিনি! উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র সৎ ব্যবসায়ী হরিপদ সাহা। যিনি এক মুসলিম ছেলেকে আদর করেছিলেন যার কারনে তাকে সমাজচুত করা হয়। একই ধরনের আপরাধে দোষী হলে আরেক চরিত্র ব্রাহ্মণ অম্বিকা ভট্টাচার্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নিজের নাম পরিবর্তন করে সিরাজুল ইসলাম ঠাকুর হয়ে যান। এছাড়া এই উপন্যাসে ফুটে উঠেছে তৎকালীন সময়ের নানা আসংগতির চিত্র। মধ্যাহ্ন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হতে থাকে নানা কাহিনীর সমন্বিত রূপ। উপন্যাসে কখনো কখনো অলৌকিকতা বা অতিপ্রাকৃত ঘটনা লেখক ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। এছাড়াও উপন্যাসটিতে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কিছু সাহিত্যিক যেমন কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ অনেকের কিছু ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। যা উপন্যাসটিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।
দেবী
১৯৮৫ সালে বইটি প্রকাশিত হয়। বইটি হুমায়ুন আহমেদের অন্যতম সৃষ্টি মিসির আলী সিরিজের বই। ইতোমধ্যে হয়ত অনেকেই এই উপন্যাসের অবলম্বনে রচিত চলচ্চিত্রটি দেখে ফেলেছে। কিন্তু বইটি পড়লে আপনি আরো বিস্তারিত ভাবে ঘটনা গুলো অনুধাবন করতে পারবেন। দেবী উপন্যাসের মাধ্যমেই হুমায়ূন আহমেদ প্রথম মিসির আলী পাঠকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। মিসির আলী একজন অতি সাধারণ মানুষ। যিনি মানুষের মন নিয়ে প্রচুর পড়ালেখা করেন এবং মাঝে মাঝে অতিপ্রাকৃতিক বা অলৌকিক বিষয়ের ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করেন। দেবী উপন্যাসে দেখা যায় রানু নামের এক নববিবাহিত মহিলার অলৌকিক ক্ষমতা ও মানসিক সমস্যার সমাধানের জন্য তার স্বামী আনিস মিসির আলীর স্মরণাপর্ন হন। এই সমস্যা কে এবং সেটির সমাধানের চেষ্টাকে কেন্দ্র করে উপন্যাসের ঘটনাবলী সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু এই অলৌকিক শক্তির উৎস আসলে কোথায়? রানু কিভাবে এই শক্তি পেল? এই সবকিছু জানার জন্যে আপনাকে দেবী বইটি পড়তে হবে। বইটি ভৌতিক কোন বই নয়, তবুও রাতের অন্ধকারে একাকী নির্জন ঘরে বসে বইটি পড়লে এর রহস্যময়তা পুরোপুরি অনুভব করতে পারবেন।
দিঘির জলে কার ছায়া গো
দিঘির জলে কার ছায়া গো উপন্যাসটি হিমু চরিত্র যারা পছন্দ করেন শুধু তাদের কাছে নয়, বরং হুমায়ুন আহমেদের প্রায় সকল শ্রেণীর পাঠকদের কাছেই উপন্যাসটি প্রশংসা কুড়িয়েছে। উপন্যাসের মূল চরিত্রের নাম মুহিব। মুহিবের ‘মুহি‘ অক্ষর দুটি উলটো করে লিখলে ‘হিমু‘ হয়। মুহিবের নিজের নামের কারণে বা অন্য কোনো ভালো লাগা থেকেই হোক সে হিমুর ব্যাপারে পাগল। সে হিমুর মতো হতে চায়, খালি পায়ে হাঁটতে চায়, তার অধিকাংশ কাজকে অনুসরণ করতে চায়। হিমুর অনেক কথা তাকে বিভিন্ন সময় সান্তনা দিয়ে থাকে। উপন্যাসের নাম ‘দিঘির জলে কার ছায়া গো’ মূলত একটি নাটকের নাম। যে নাটকে মুহিব অভিনয় করেছিল। এই নাটক করে সে অনেক খ্যাতি পেয়েছিল তাই আর নাটক ছাড়তে পারে নি।
অন্যদিকে হিমুর রূপার মতো মুহিবের রয়েছে লীলা। লীলাই মুহিবের রূপা। তবে লীলার বিয়ে ঠিক হয়েছে। এরপরও দুজনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব রয়েছে। মুহিব আর লীলার একসাথে যখন আনন্দ ঝলমলে দিন গুলো কাটছিলো তখনি নেমে আসলো মুহিবের জীবনে এক কঠিন ঝড়। মুহিবের বাবাকে ধর্ষণের অভিযোগে জেলে পাঠানো হয়। বাবাকে বাঁচাতে মুহিব বাড়ি বিক্রি করে দেয়, এভাবেই উপন্যাসের ঘটনা সামনে এগিয়ে যেতে থাকে…
এই ৫ টি বই ছাড়াও হুমায়ুন আহমেদের যে বইগুলো পড়ে দেখতে পারেন
শঙ্খনীল কারাগার
আগুনের পরশমনি
বাদশাহ নামদার
হিমু সিরিজ
দারুচিনি দ্বীপ
বাদশাহ নমদার
মিশির আলি সিরিজ
অপেক্ষা
নন্দিত নরকে
এইসব দিনরাত্রি
মেঘ বলেছে যাবো যাবো