ভাইভায় ভালো পারফর্ম করার ১০ কার্যকরী কৌশল

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © টিডিসি ফটো

উচ্চঝুঁকির চাকরির ইন্টারভিউ অনেকের কাছেই এক ধরনের মানসিক চাপের নাম। সীমিত সুযোগ, ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা আর নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে উদ্বেগ—সব মিলিয়ে ইন্টারভিউয়ের সময় আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। লিখিত পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেও ভাইভায় অনেকের নার্ভাসনেস কাজ করে। অনেক এই নার্ভাসনেস কিংবা আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির কারণে প্রত্যাশিত নম্বর পাওয়া যায় না। তবে অনেক অভিজ্ঞদের মতে, ভাইভা আদৌ ভয় পাওয়ার কোনো বিষয় নয়। সঠিক প্রস্তুতি ও ইতিবাচক মানসিক অবস্থান থাকলে ভাইভায় ভালো ফলাফল করা সহজ।

চলুন জেনে নেওয়া যাক ভাইভাতে ভালো পারফর্ম করার ১০ টি কৌশল-

মুখস্থ নয়, বুঝে পড়াই আসল: ভাইভায় প্রশ্ন সাধারণত ঘুরিয়ে বা ভিন্নভাবে করা হয়। কেবল মুখস্থ নির্ভর প্রস্তুতি থাকলে প্রশ্নের ধরন একটু বদলালেই উত্তর দিতে সমস্যা হয়। বিষয়বস্তুর মূল ধারণা ও যুক্তি পরিষ্কার থাকলে যেকোনোভাবে প্রশ্ন করা হলেও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়।

চাপের মুহূর্তে ফোকাসই আসল শক্তি: ফোর্বসের একটি প্রতিবেদনে লেখক তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন। তার বাবা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির একজন ফুটবল খেলোয়াড়, যিনি ম্যাচের শেষ মুহূর্তে ফিল্ড গোল করার দায়িত্ব পেতেন। প্রচণ্ড চাপের মধ্যে তিনি কীভাবে স্থির থাকতেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তার উত্তর ছিল, 'আমি শুধু বলটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।' এই উদাহরণ দিয়ে বোঝানো হয়েছে, চাপের মুহূর্তে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো অপ্রয়োজনীয় চিন্তা বাদ দিয়ে মূল কাজের ওপর মনোযোগ দেওয়া।

না জানলে সোজাসাপ্টা উত্তর দেওয়া ভালো: ভাইভায় সব প্রশ্নের উত্তর জানা থাকেনা। কোনো বিষয়ের উত্তর জানা না থাকলে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলার দরকার নেই, বরং ভদ্রভাবে বলা উচিত 'এই অংশটি আমার পুরোপুরি পরিষ্কার নয়।' এতে বোর্ডের কাছে শিক্ষার্থীর সততা ও শেখার মানসিকতা প্রকাশ পায়।

সংক্ষিপ্ত ও পরিষ্কার উত্তর দেওয়া: ভাইভা কোনো বক্তৃতার মঞ্চ নয়। প্রশ্নের মূল উত্তরে আগে দিন। প্রয়োজনে এক বা দুই লাইনে ব্যাখ্যা যোগ করুন। অপ্রয়োজনীয় কথা বললে মূল বক্তব্য হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ইন্টারভিউকে জেরা নয়, সেবার সুযোগ হিসেবে ভাবুন: অনেক প্রার্থী ইন্টারভিউকে নিজেকে প্রমাণের কঠিন পরীক্ষা হিসেবে দেখে নার্ভাস হয়ে পড়েন। অথচ ইন্টারভিউকে যদি নিয়োগদাতার সমস্যা সমাধানের সুযোগ হিসেবে দেখা যায়, তাহলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে।

নিজের গল্পকে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনের সঙ্গে যুক্ত করুন: ভাইভাতে অতীত অভিজ্ঞতার কথা বলার সময় সেটিকে বর্তমান পদের প্রয়োজনের সঙ্গে যুক্ত করা জরুরি। 'এর ফলে', 'এই অভিজ্ঞতার কারণে', 'ফলাফল হিসেবে'—এ ধরনের ভাষা ব্যবহার করলে প্রার্থীর বক্তব্য আরও বাস্তব ও ফলাফলভিত্তিক হয়। এতে শুধু যোগাযোগ দক্ষতাই নয়, প্রার্থীর আত্মবিশ্বাসও স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।

চোখে চোখ রেখে কথা বলা: ভাইভা বোর্ডের এক্সপার্টদের দিকে তাকিয়ে কথা বলা আত্মবিশ্বাসের অন্যতম বড় প্রকাশ। চোখ এড়িয়ে কথা বললে অনেক সময় অস্থিরতা বা অনিশ্চয়তার ভাব ফুটে ওঠে, যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

চাপের মধ্যেও সংলাপ তৈরি করুন: ইন্টারভিউ একতরফা প্রশ্নোত্তর নয়; বরং এটি একটি কথোপকথন। কোনো উত্তর দেওয়ার পর প্রার্থী চাইলে পাল্টা প্রশ্ন করতে পারেন—যেমন, তার অভিজ্ঞতা বা উদাহরণটি পদের সঙ্গে কতটা মানানসই। 

সংখ্যা ও তথ্য আত্মবিশ্বাস বাড়ায়: কোনো প্রশ্নের উত্তরে সংখ্যা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যবহার করলে বক্তব্য আরও স্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য হয়। এতে প্রার্থীর কাজের পরিধি ও প্রভাব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, যা ইন্টারভিউয়ে আত্মবিশ্বাস তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আত্মবিশ্বাস বিশ্বাস নয়, ফোকাসের ফল: আত্মবিশ্বাস কোনো অন্ধ বিশ্বাসের বিষয় নয়। এটি আসে সঠিক মনোযোগ ও কার্যকর আচরণ থেকে। যেমন, একজন দমকলকর্মী আগুনে ঢোকার সময় নিজের ভয় নয়, বরং দায়িত্বের কথাই ভাবেন। দায়িত্বের গুরুত্বই ভয়কে ছাপিয়ে যায়। ঠিক একইভাবে, ইন্টারভিউতেও নিজের নার্ভাসনেস নয়—সমাধান ও সেবার দিকেই মনোযোগ দিলে চাপের মধ্যেও আত্মবিশ্বাস বজায় রাখা সম্ভব। [সূত্র: ফোর্বস, এইচবিআর, ডব্লিউইএফ]


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!