ধনী দেশ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি আদায়ে বাংলাদেশ ব্যর্থ হচ্ছে

ফারিহা সুলতানা অমি
ফারিহা সুলতানা অমি  © টিডিসি ফটো

দেশে-বিদেশে নানা আয়োজনে গত ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে নিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও পালিত হয় দিবসটি। পরিবেশ সচেতনতার মূল লক্ষ্য নিয়ে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি দিনদিন তীব্র হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নাজুক অবস্থায় আছে, এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

বাংলাদেশে জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে বড় একটা অংশ তরুণ-কিশোর। পরিবেশের এই যুক্তিক ও যুগোপযোগী আন্দোলনে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের মেয়েরাও। সমানতালে তারা চালিয়ে যাচ্ছে জলবায়ু সংগ্রাম।

বাংলাদেশে পরিবেশ ও জলবায়ু আন্দোলনে যেকজন তরুণ-তরুণী প্রথম সারিতে কাজ করছেন তাদের মধ্যে পরিবেশকর্মী ফারিহা সুলতানা অমি একজন। তিনি যশোর জেলার সদর উপজেলার এস এম আজিজুর রহমান ও আফরোজা সুলতানা দম্পতির বড় মেয়ে। অমি শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের (জামালপুর) এমবিবিএস চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

ফারিহা মূলত জলবায়ু বিষয়ক সংগঠন ব্রাইটার্স সোসাইটি অব বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারের দায়িত্বে রয়েছেন। পাশাপাশি তিনি ফ্রাইডেস ফর ফিউচারের ক্লাইমেট এক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করেন। তরুণ প্রজন্মের চোখে জলবায়ু ও পরিবেশ আন্দোলন; বাংলাদেশে পরিবেশ আন্দোলনের প্রভাব ইত্যাদি নানান বিষয় নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে কথা বলেছেন অমি। তার কথাগুলো শুনেছেন ডেইলি ক্যাম্পাসের সিলেট প্রতিনিধি ডি এইচ মান্না

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কেমন আছেন?
ফারিহা সুলতানা অমি: আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে কতদিন থেকে কাজ করছেন? 
ফারিহা সুলতানা অমি: আমি ২০১৮ সাল থেকে নিয়মিত কাজ করছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার পরিবেশকর্মী হয়ে ওঠার গল্প শুনতে চাই
ফারিহা সুলতানা অমি: আমি যশোরেই বেড়ে ওঠি। বাসায় প্রচুর বই পড়া হতো। স্কুলের লাইব্রেরী থেকে অনেক বই সংগ্রহ করে পড়তাম। এভাবেই আস্তে আস্তে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। লেখালেখি আর প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসাটা এভাবেই শুরু হয়েছিল। আমি স্কুল, কলেজে থাকা অবস্থায় জলবায়ু বিষয়ক অনেক বিতর্ক করেছি।

সেখান থেকেই বুঝতে পারলাম যে বাংলাদেশ জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে প্রচুর পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বে ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতি পূরণের সেই ন্যায্য দাবি আদায় করতে ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ। তখনই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জলবায়ু আন্দোলন সম্পর্কে আরও বেশি জানার চেষ্টা করি। ধীরে ধীরে জানার আগ্রহ আর কাজ করার আগ্রহ বাড়লো এভাবেই শুরু হলো কাজ।

এখন এই পরিবেশ আন্দোলনই জীবনের বড় একটি অংশ। জলবায়ুর ন্যায্য দাবি আদায়ের সংগ্রামে আজীবন থাকতে চাই। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে চাই।

আরও পড়ুন: জাতীয় পরিবেশ পদক পেল বুয়েট

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: মেডিকেলে অধ্যায়নরত অবস্থায় পরিবেশ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হলেন। ডাক্তার হওয়ার পর সাধারণ মানুষদের নিয়ে কি কোন বিশেষ পরিকল্পনা আছে?
ফারিহা সুলতানা অমি: মেডিকেলের পড়াশোনার এত চাপ রেখেও নিজের দায়িত্ববোধ থেকে যেহেতু পরিবেশ আন্দোলনের সাথে আছি সুতরাং ডাক্তার হওয়ার পর তো আর মানুষের কাছ দূরে থাকার কথা নয়। আমার অবশ্যই, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে আপনাদের সংগঠনের কোন কর্মসূচী ছিল কিনা
ফারিহা সুলতানা অমি: হ্যাঁ। আমাদের সংগঠনের বেশ কিছু দল এ বছর উঠান বৈঠকের আয়োজন করে। সেখানে তারা একেবারে গ্রাম থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষদেরকে জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানায়। এর বাইরেও আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কী হচ্ছে এটা জানতে ৭ দিনের একটি সার্ভেতে অংশ নিয়েছিলাম। যেটা রংপুর বিভাগের ৭ জেলায় ৭ দিনে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার সংগঠন কি শুধু জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে?
ফারিহা সুলতানা অমি: না, তবে জলবায়ু নিয়ে কাজগুলোই আমাদের প্রধান ফোকাস। এর বাইরেও আমরা মানসিক স্বাস্থ্য আর নারীর ক্ষমতায়নকেও গুরুত্ব দিচ্ছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পরিবেশ আন্দোলনে আপনি কাকে অনুসরণ করেন?
ফারিহা সুলতানা অমি: সত্যি বলতে সেভাবে কোন ব্যক্তিকেই অনুসরণ করা হয় না। তবে বেশকিছু মানুষের কাজ খুবই অনুপ্রেরণা দেয়। তার মধ্যে অন্যতম সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাদের এ কাজে কখনো কোন ধরনের সংকটে পড়তে হয়েছে কিনা
ফারিহা সুলতানা অমি: প্রায় সবসময়ই হয়। বিশেষত দক্ষতা বৃদ্ধি ও আর্থিক সহায়তার ব্যাপারগুলোতে আমাদের তরুণেরা পিছিয়ে আছে। এ ব্যাপারে প্রতিনিয়তই চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সাংগঠনিক কাজ কি আপনার মেডিকেলে পড়াশোনার প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে?
ফারিহা সুলতানা অমি: সেভাবে কখনো বাধা মনে হয়নি। আসলে সময়ের সঠিক ব্যবহার করলে সবকিছু করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নারী হিসেবে কি কাজের ক্ষেত্রে কখনো বাধা পেয়েছেন?
ফারিহা সুলতানা অমি: কিছু ক্ষেত্রে তবে সেগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আসলে কাজ থামানোর কথা মাথায় আসেনি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশে জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা কতটা প্রয়োজন.?
ফারিহা সুলতানা অমি: অনেক বেশি, গুরুত্বের দিকে প্রথম দিকে। না হলে আসলে ৫০ বছরে আমাদের অবস্থা পুরোপুরি খারাপ হয়ে যাবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সাম্প্রতিক কালে উষ্ণায়ন এবং তৎসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ এক নতুন মাত্রা পেয়েছে, বাংলাদেশে এর কি কি প্রভাব পরবে.?
ফারিহা সুলতানা অমি: প্রথমত আমরা আবাদি জমি হারাবো। দ্বিতীয়ত আমাদের প্রচুর জনগোষ্ঠী ঘরহারা হবে। এই দুই ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে প্রভাব পড়বে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: তরুণ প্রজন্মের মাঝে জলবায়ু নিয়ে কাজ করার আগ্রহ কেমন দেখছেন?
ফারিহা সুলতানা অমি: আমার দেখায় অবশ্যই বেড়েছে। তরুণেরা অনেক বেশি জানতে চায় জলবায়ু পরিবর্তন আর এর সম্পর্কিত বিষয়গুলো সম্পর্কে। দিনদিন এই আন্দোলনে তাদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্য কি বলবেন?
ফারিহা সুলতানা অমি: নিজের কাজটা আমাদের সবার ঠিকভাবে করে যাওয়া দরকার। আর একটা ব্যাপার মনে রাখা দরকার, আমি দেশকে ভালো কিছু দিলে দেশও আমাকে দেবে। এসো সবাই মিলে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইতিপূর্বে আন্তর্জাতিক কোন জলবায়ু সম্মেলনে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল?
ফারিহা সুলতানা অমি: লন্ডনে কপ ২৬-এ যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো, কিন্তু তখন আমার মেডিকেলের প্রথম প্রফ (পরিক্ষা) চলছিলো তাই যাওয়া সম্ভব হয়নি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ফারিহা সুলতানা অমি: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্যেও অনেক শুভ কামনা রইলো।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence