শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হবে বন্ধুর মতো
- আবদুর রহমান
- প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২০, ০৪:১৭ PM , আপডেট: ০৩ মে ২০২১, ১২:২০ PM
চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন মনির উদ্দিন আহমেদ। পরে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে ৩৫তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডারে উর্ত্তীণ হয়ে বর্তমানে নোয়াখালী সরকারী কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন। আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শিক্ষক পেশার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নোয়াখালী প্রতিনিধি আবদুর রহমান-
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে কেন নিলেন?
মনির উদ্দিন আহমেদ: সেই এইচএসসির সময় থেকে কোচিং-টিউশনে জড়িত। ছাত্র-ছাত্রীদের বা অন্য কাউকে পড়তে দেখলে আমি তৃপ্তি পাই। এছাড়া আমার মনে হয় এটি খুব সৃজনশীল পেশা, অন্যদের উদ্দীপিত করার জন্য শিক্ষকতার চেয়ে কার্যকর পেশা আর কি হতে পারে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষক দিবসে আপনার প্রিয় শিক্ষক সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন।
মনির উদ্দিন আহমেদ: আসলে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যাদের কাছে পড়েছি তাঁরা সবাই হয়তো প্রিয় শিক্ষক নয়। তবে শিক্ষা জীবনের প্রত্যেক স্তরেইে এমন কিছু মানুষ পেয়েছি যাদেরকে নিঃসন্দেহে আমি ভালো শিক্ষক বলবো। আমি সৌভাগ্যবান তাঁদের সান্নিধ্য পেয়ে। কেউ যদি এতজনের মধ্যে এমন কাউকে বাছাই করতে বলে সেটি আসলে খুবই কটিন হবে। আমার প্রিয় শিক্ষক অনেকজন। খুব ছোট ছিলাম বলে প্রাথমিকে যে শিক্ষক হাই বেঞ্চে বসিয়ে দিতেন, সেই শিক্ষক থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর বিদায়ের সময়ে যে শিক্ষক বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন সে শিক্ষক পর্যন্ত অনেকেই আমার প্রিয় শিক্ষক। আমি ভালোবাসি তাঁদের শ্রদ্ধাকরি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দোয়া করি উনাদের সবার জন্য।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার মতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?
মনির উদ্দিন আহমেদ: দুনিয়াতে যে সব সেরা সম্পর্ক আছে। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক সেগুলোর একটি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হয় বন্ধুর মত। এ সম্পর্ক হবে আন্তরিক। কারণ শিক্ষার্থীর অন্তঃর্নিহিত শক্তি জাগ্রত করার জন্য শিক্ষক সিলেবাসের বাইরে ও অনেক বিষয় আলোচনা করেন। সেসব আলোচনায় যদি শিক্ষক বন্ধুর মত আবরন করেন তবে বিষয়গুলো যদি শিক্ষার্থীরা সহজে গ্রহন ও ধারন করতে পারে। সৌহাদ্যপূর্ণ এবং ঘনিষ্ট হওয়া উচিত। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক। শিক্ষার্থী শ্রদ্ধা ও সম্মান করবে আর শিক্ষক স্নেহ করবে। ভাল-মন্দ, নীতি-নৈতিকতা শিখাবে, আন্তরিক সম্পর্ক ছাড়া শিক্ষা তেমন ফলপ্রসূ হয় না। তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হওয়া উচিত বন্ধুত্বপূর্ণ। ঘনিষ্ট ও আন্তরিক।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সন্দেহ নেই, আজও যখন শিক্ষকদের নৈতিকতা নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে তখনও শিক্ষকদের প্রতিই আমাদের ভরসা করতে হবে। কেননা শিক্ষকরাই প্রজন্মের পরিচর্যার মাধ্যমে একটি জাতির ভিত্তি গড়ে দেন এবং নতুন দিনের পথে জাতির পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষক হিসেবে আপনার পেশাটা কি আপনি উপভোগ করতে পারছেন?
মনির উদ্দিন আহমেদ: যেহেতু নিজ পছন্দ করে এ পেশায় এসেছি। আর আমি আমার কাজকে ভালোবাসি। আমার শিক্ষার্থীদের পছন্দ করি। ভালোবাসি ফলে কিছু অপ্রাপ্তি থাকলে ও হতাশা আমাকে কখনো গ্রাস করতে পারে নি। সামাজিক মর্যাদায়, স্বীকৃতি ও বৈষম্যে ইত্যাদিতে অন্যান্য পেশায় আমার সমমানের সাথে অনেকের বেশ ফারাক রয়েছে। যা সমাজে চলতে গেলে বুঝা যায়। তাই হয়তো আমাদের সমাজে অনেকে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন না। তবে আমি নিজেকে নিজের পেশাকে নিয়ে ভালো আছি। আনন্দ উপভোগ করছি। পড়াশোনা করছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে শিখছি এবং শিখাচ্ছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পেশাগত দায়িত্ব পালনে আপনি কি কোনো সমস্যাবোধ করেন? সেগুলো কেমন?
মনির উদ্দিন আহমেদ: আমাদের সমাজে যে সার্বিক পরিস্তিতি বর্তমানে বিরাজ করছে তার থেকে শিক্ষাঙ্গন ও বাদ নেই। যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো সমাজেরই অংশ সামাজিক প্রতিষ্ঠান। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে খুব বেশি পরিমানে না হলেও কখনো কখনো সমস্যা ফেস করতে হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন বহিরাগতদের দ্বারা সৃষ্ঠ সমস্যা, ক্লাস চলাকালীন ক্লাসে না করে কিছু শিক্ষার্থী রাজনৈতিক মিছিলে অংশগ্রহন ইত্যাদি কিছু বিষয় প্রতিনিয়তই ঘটে যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষাঙ্গন গুলোতে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষকতায় আপনি কি কাউকে অনুসরণ বা অনুকরণ করেন? পেশাগত দায়িত্বপালনে এ-প্রসঙ্গে আপনার মতামত জানতে চাই?
মনির উদ্দিন আহমেদ: জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে যা শিখেছি। এখনো যা শিখছি সেগুলোকে সব সময় শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করতে চাই, করি। নির্দিষ্ট করে বললে কাউকে অনুসরন করি বলাটা ঠিক হবে না। বরং আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের কাছ থেকে যা শিখছি, পরিবার যে শিক্ষা দিয়েছে। নিজের মধ্যে যা আছে সব কিছুর সমন্বয় করেই মূলত নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালন করি। যেমন আমার পরিবার শিখিয়েছে অন্যকে সহযোগিতা কর, শিক্ষক শিখিয়েছে কিভাবে শিক্ষার্থীর শক্তি ও দূর্বলতা চেনা যায়। কোন বিষয়ে কতটা সহজ ও মধুরভাবে উপস্থাপন করা যায়। ইত্যাদি শিক্ষা আমার পেশাগত জীবনে খুব কাজে লাগে। আমাকে শক্তি যোগায়, উৎসাহ প্রদান করে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে; তাদের উদ্দেশ্যে এবং যারা ভবিষ্যতে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে আজকের এই দিনে কিছু বলুন।
মনির উদ্দিন আহমেদ: এখনেই বলবো শিক্ষকতা শুধুমাত্র কোন পেশা নয়। এটা একটা ব্রত ও বটে। তাই অর্থ দিয়ে শিক্ষকতাকে পরিমাপ করা যাবে না। যিনি শিক্ষক তিনি সর্বস্থানেই শিক্ষক। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। প্রবাদ আছে, “দেখেই যেন মনে হয়, গুরুমন সর্বদা শান্ত রয়” যেহেতু শিক্ষার মূল লক্ষ্য ভাল মানুষ তৈরি করা। সেহেতু শিক্ষকের মধ্যে ভাল। গুনাবলী না থাকলে শিক্ষার্থীদের ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। আমরা যারা শিক্ষক এবং যারা ভবিষ্যতে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিবে বলে ভাবছি তারা অব্যশই মনে রাখবো। মোজাফফর আহমেদ এর একটি কথা- শিক্ষাকতা একটি ধর্ম। একে জীবনে ধারন করতে হয়। জ্ঞানী মাত্রই শিক্ষক হতে পারে না। তাইতো বলা হয়- “দুজন বিদ্বান হলেও পরিতাজ্য”। তাই ভাল চরিত্রের অধিকারী হতে হবে শিক্ষকদের। সত্য ও ন্যায়ের শিক্ষা দিতে হবে। তাদের উৎসাহ প্রদান করতে সৃজনশীল বিষয়ে। তবেই শিক্ষক জীবনের সার্থকতা।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
মনির উদ্দিন আহমেদ: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্য শুভ কামনা রইলো।