‘একলা চলো রে’ নীতিতে প্রথম বিসিএসেই ক্যাডার জবির শুভ

মো. আব্দুল আউয়াল শুভ
মো. আব্দুল আউয়াল শুভ  © টিডিসি ফটো

মো. আব্দুল আউয়াল শুভ। তিনি সম্প্রতি প্রকাশিত ৪৩তম বিসিএস শিক্ষা (প্রাণিবিদ্যা) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি পড়ালেখা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। তার বন্ধুরা যখন অনার্স শেষ করে মাস্টার্স শুরু করেছিলেন, তখন তিনি ছিলেন তাদের থেকে ব্যতিক্রম। তিনি মাস্টার্সে ভর্তি না হয়ে শুরু করেন বিসিএস প্রস্তুতি। কঠোর অধ্যবসায় পেয়েছেন সাফল্যও। অনার্স শেষে তার এ সফল বিসিএস যাত্রার গল্প শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের—আফরিন সুলতানা শোভা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রথম বিসিএসেই সফলতা পেলেন। আপনার অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাই।
আব্দুল আউয়াল শুভ: বিসিএস একটা স্বপ্নের নাম, আবেগের জায়গা, ভালোবাসার জায়গা। যেটার জন্য মানুষ জীবনের সবকিছু ছেড়ে দিয়ে লেগে থাকতে পারে। একটা স্বপ্ন পূরণ করতে আনুষঙ্গিক সবকিছু সেই কেন্দ্রিক ভাবতে পারে, তেমনি ছিলাম আমি। আমি জীবনের প্রতিটা সময় এই সাফল্যের সন্ধানে ব্যয় করেছি। ফলে হারাতে হয়েছে অনেক সুন্দর মুহূর্ত।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষা জীবন সম্পর্কে বলুন।
আব্দুল আউয়াল শুভ: আমি কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ নিয়ে এসএসসি, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া বিজ্ঞান কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ নিয়ে এইচএসসি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে ৩.২২ সিজিপিএ নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করি।

May be an image of 1 person, temple and text

আমি স্কুলে এভারেজ স্টুডেন্ট ছিলাম। এসএসসি পাসের পর আমার কক্সবাজার পলিটেকনিকে সিভিল এ চান্স হয়। কিন্তু আমার মনে হলো জীবনে অনেক বড় কিছু হতে হবে। তাই বাসার বাইরে যেতে হবে। সেই সময়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমার পরিবারের সাথে দীর্ঘ সময় কাটানোর সৌভাগ্য হয়নি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে? প্রিলি প্রস্তুতির টেকনিক সম্পর্কে জানতে চাই।
আব্দুল আউয়াল শুভ: প্রিলি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অনার্সের প্রথম বর্ষ থেকে আমি নিজেকে স্থির করি যে প্রথম বিসিএসে ক্যাডার হবো। তাই বিভিন্ন বিসিএস আইকনদের প্রস্তুতি, পরামর্শ ইত্যাদি দেখতাম ও নোট করে রাখতাম। পাশাপাশি প্রচুর অংক ও ইংলিশের টিউশন করাতাম।

অনার্সের চতুর্থ বর্ষের শুরুতে কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে ইংলিশ,  আন্তর্জাতিক, বাংলার (সাহিত্য, ব্যাকরণ) বেসিক ধারণা নিয়েছি। কোভিড শুরুর দিকে ফাইনালি সব রুটিন করে পড়া শুরু করি ও প্রচুর মডেল টেস্ট দিতাম। প্রথমে অনেক কম মার্ক আসতো তবে শেষের দিকে ভালো মার্ক আসতো। কারণ শুধু ১০-১২টা ভুল হতো।

প্রিলি পরীক্ষাতেও একই কাজ হয়। বাসায় এসে মিলিয়ে দেখি সেই দশ থেকে বারোটা ভুল হয়েছে। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাই। প্রিলির জার্নিতে আমার বন্ধু শুভ, নুর, সুজন, তাসলিম, সাকিব, সামিরের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস লিখিত পরীক্ষার অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?
আব্দুল আউয়াল শুভ: লিখিত প্রস্তুতির ক্ষেত্রে, লিখিত পরীক্ষা আমার জন্য একদম নতুন ছিল। প্রিলির প্রস্তুতির সময় আমরা গ্রুপ করে মডেল টেস্ট দিতাম, কিন্তু লিখিত প্রস্তুতির সময় আমি খুব একা হয়ে যাই। কারণ গ্রুপ মেম্বাররা কেউ প্রিলি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি। যাইহোক ক্যাডার তো হতেই হবে আমাকে। তাই ‘একলা চলো রে’ নীতি অবলম্বন করলাম।

May be an image of 1 person, motorcycle, scooter, road and text

কনফিডেন্স কোচিংয়ের লাইব্রেরিতে সারাদিন সময় দেওয়া শুরু করলাম। সেখানে দেখলাম আমার মত অনেকেই নতুন, প্রথম লিখিত প্রস্তুতি দিচ্ছে ও অনেককে দেখলাম আগে এক বা দুইবার লিখিত পরীক্ষা দিয়েছে। অতঃপর কিছুটা ভরসা পেলাম। সিনিয়র ভাই, আপুদের কাছে লিখিত ভাল করার টেকনিক জানতে তাদের প্রায়ই বিরক্ত করতাম। তাই বিথি আপু, রুহুল আমিন ভাই, তমা, লাবণ্যসহ লাইব্রারির সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকব।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: লিখিত প্রস্তুতিতে কোন দিকটি আপনাকে এগিয়ে রেখেছিল? 
আব্দুল আউয়াল শুভ: প্রথমে আমি সিলেবাস বোঝার চেষ্টা করলাম। অনুবাদ করলাম নিজে নিজেই। বিগত বছরের প্রশ্ন দেখে ধারণা নিলাম আমাকে কি কি বাদ দিয়ে পড়তে হবে। কারণ লিখিত বইগুলো অনেক বড় বড় যেন দেখেই ভয় লাগে।

লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আমি প্রচুর কোচিংয়ে মডেল টেস্ট দিতাম। বলতে গেলে মডেল টেস্টের জন্যই পড়তাম। পরীক্ষাগুলোতে টপ ফাইভের মধ্যে থাকতাম। দেখতে দেখতে ফাইনাল রিটেন এক্সাম চলে আসলো। পরীক্ষাগুলো একটানা হওয়ায় দেয়া খুব কষ্টসাধ্য হয়। পরীক্ষার হলে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তারপরও আমার মন বলছিলো, আমাকে এবারই ক্যাডার হতেই হবে। তাই আমি আমার ১০০% দিয়ে পরীক্ষা শেষ করেছিলাম।

তবে একটা কথা না বললেই নয়, পরীক্ষাকালীন সময় আমার বন্ধু শুভ, নুর, সামির আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছে, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এভাবে পরীক্ষা দিলাম এবং ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে নিলাম।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিসিএস প্রস্তুতির এ দীর্ঘ যাত্রায় কি কি ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন, এ সময় আপনার লাইফস্টাইল কেমন ছিল?
আব্দুল আউয়াল শুভ: আমার বিসিএস জার্নিতে আমি অসংখ্যবার হতাশায় ভেঙে পড়েছি। আবার উঠে দাঁড়িয়েছি স্বপ্ন পূরণের লক্ষে। প্রায় চার বছর অসংখ্য হাজার ঘণ্টা পড়াশোনা করেছি। শতশত নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি টেনশনে। বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়দের ফোন রিসিভ করিনি, দেখা করিনি, ব্যস্ততা দেখিয়েছি, দাওয়াতে অংশগ্রহণ করিনি। 

আমি টিউশনের ক্ষেত্রে বড় ভাইদের সহযোগিতা না পেয়ে নিজেই টিউশন মিডিয়া চালু করি। ফলে নিজেও টিউশন পাই এবং অন্যদের টিউশনের ব্যবস্থা করি। এটা আমাকে আর্থিক সচ্ছলতা দিয়েছে, সাথে গণিত শিখিয়েছে। তবে অনার্স শেষ বর্ষে থাকাকালীন চলমান প্রায় দশটি টিউশন আমি ছেড়ে দেই; শুধুমাত্র  নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন এর লক্ষ্যে। কারণ আমি জানতাম বড় কিছু পেতে হলে ছোট ছোট বিষয়গুলো ছাড় দিতে হবে।

আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে যে কাজটা আমার বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখবে শুধু সে কাজটাই করতাম। অন্যথায় করতাম না। আমি কখনো ট্রেনে, কখনো বাসের মধ্যে, কখনো বা রাস্তার ধারে যেখানেই থাকতাম, সর্বোপরি প্রতিটা সময় বিসিএস নিয়ে ভাবতাম, পড়াশুনা করতাম।

আমি এ্যাপেয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে প্রিলি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মাস্টার্স না করার কঠিন সিদ্ধান্ত নেই। তাই প্রাণের ক্যাম্পাস এরিয়া থেকে সব বন্ধু-বান্ধবদের বিদায় দিয়ে ফার্মগেটে চলে আসি। আমার সহপাঠীরা সবাই ছিল একদিকে আর আমি অন্যদিকে। আমার মনে হয় এটাই ছিল আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। কারণ মজার বিষয় আমার বন্ধু-বান্ধবরা সবেমাত্র মাস্টার্স পাশ করেছে, আর আমি এখন বিসিএস ক্যাডার।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভাইভা অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাই। ভাইভার জন্য কোন দিকটাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ?
আব্দুল আউয়াল শুভ: ভাইভা সব সময়ই অনিশ্চিত একটা বিষয়। তাই আমি আমার নিজের সম্পর্কে আগে ধারণা নিতে শুরু করি। আমার প্রথম পছন্দের সাথে আমাকে ফিট করার চেষ্টা করি। এর জন্য যা কিছু করার প্রয়োজন আমি তাই করেছি। অবশেষে ভাইভা বোর্ডের আমাকে সেই কমন প্রশ্নগুলোই করা হয়েছিল। প্রায় ২৩ মিনিট রেখেছিল। পরিশেষে গ্রুপের সবার সাথে কথা বলার পর দেখলাম ভাইভা বোর্ডে ১৬ জনের মধ্যে আমার পরীক্ষাই সবচেয়ে ভালো হয়েছে।

May be an image of 1 person, elephant and suit

ভাইভার পর ফাইনাল রেজাল্টের জন্য মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। যেখানে মন চায় তো সেখানে ঘুরতে যেতাম। ফাইনাল রেজাল্টের দিন খুবই অস্থির ছিলাম। বিকেলে জানতে পারি ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। বন্ধুরা বারবার কল দিচ্ছিলো, ধৈর্য নিয়ে রেজাল্টা দেখলাম। কিছুসময় পর দেখি রোল ১১০৯৩৬৭৮। অনেক সময় পর বুঝতে পারলাম আমি ক্যাডার হয়ে গেছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নতুনদের জন্য কি পরামর্শ দেবেন?
আব্দুল আউয়াল শুভ: আগে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। এরপর সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যা করার তাই করতে হবে। প্রিলির বইগুলো কত ভালো করে পড়া হলো, তার চেয়ে কতবার পড়া হলো তা জরুরি। এদিকে মনোযোগ দিন।

লিখিত প্রস্তুতির ক্ষেত্রে কম পড়ে খাতায় কতটুকু ভালো আউটপুট দিতে পারা যায়, সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আর সবশেষ ভাইভা প্রস্তুতির ক্ষেত্রে নিজেকে ভালো করে চিনতে শিখতে হবে। সেই সাথে পছন্দের প্রথম ক্যাডারটির অফিসার হিসেবে নিজেকে মনে করত হবে। এরজন্য যে গুনাগুনগুলো থাকা প্রয়োজন সেগুলো নিজের মধ্যে নিয়ে আসার দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। মা-বাবার দোয়া নিতে হবে। সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হবে। সাথে পরিকল্পিত পরিশ্রম, অধ্যবসায়, ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাস থাকলে সফলতা আসবেই।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence