সমাজবিজ্ঞানে পড়েও সফল ফ্রিল্যান্সার, মাসিক আয় লক্ষাধিক

  © সংগৃহীত

দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন মাহমুদুল হাসান । এখন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। পেয়েছেন ‘ন্যাশনাল ফ্রিল্যান্সার কনফারেন্স ২০২৩’-এ সম্মাননা। ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা  দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন  তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস

 

আমি দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার বাসিন্দা। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। ফ্রিল্যান্সিং এর শুরুটা হয় যখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি। আমার ইচ্ছা  ছিলো পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু একটা করবো। ফ্রিল্যান্সিং এর ব্যাপারে ২০১০ সালের দিকে প্রথম জানতে পারি। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক শেষে আমি বুয়েটের প্রিপারেশন শুরু করি। বুয়েটে পড়ার আমার খুব ইচ্ছা ছিলো কিন্তু আমার সেখানে হয়না। বুয়েটে না হওয়ার পর আমার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ চলে যায়। তারপর আমি ডিফেন্সে চেষ্টা শুরু করি। যখন  ডিফিন্সেও হয়না তখন দিনাজপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হই এবং ঠিক করি আমাকে কিছু একটা করতেই হবে। তখন একটা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করছিলাম কিন্তু সেটা আমার ভালো লাগছিলো না। ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে যেহেতু আমি আগে জানতাম পরে আমি চিন্তা করি এটা নিয়েই কাজ করি। বাসায় যখন এ ব্যপারে জানাই তারা এ বিষয়ে রাজী ছিলো না। এ সম্পর্কে তারা আসলে জানতো না যে কম্পিউটার থেকেও আয় করা সম্ভব। তারা ভেবেছিলো আমি পড়াশোনা করবো না এটার পেছনেই সময় নষ্ট করবো। তবে আমার মধ্যে একটা জেদ ছিলো যে না আমি কম্পিউটার কিনবো এবং ফ্রিল্যান্সিংটা শেখবো। তারপর আমি গার্মেন্টসে চলে যাই। সেখানে ৬-৮ মাসের মতো চাকরি করে কম্পিউটার কিনে কাজ শেখা শুরু করে দিই। নিজে নিজেই শুরু করে সবকিছু। মেন্টর হিসেবে তেমন কেউ ছিলো না। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঘুরে ঘুরে দেখতাম। ইউটিউবে তখনো সবকিছু ছিলো না। আমি কিছু ব্লগ দেখতাম ওখান থেকেই আমি অনেক কিছু জানতে পারি এছাড়াও আরও কিছু ওয়েবসাইট থেকে জানতাম। প্রোগ্রামিং নিয়ে আগানোর ইচ্ছা ছিলো তারপর সেখান থেকে আমি ডিজাইনিংয়ে যাই। 

আমার ইচ্ছা ছিলো ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করা। তারপরে আমি ফটোশপ শেখা শুরু করি। সেই সাথে এই সম্পর্কিত আরও অন্যান্য বিষয়গুলোও শেখা শুরু করি। এগুলো শিখতে গিয়ে আমার লোগো ডিজাইনিংয়ের প্রতি একটি আলাদা আগ্রহ কাজ করে। আমি এটা নিয়েই কাজ করি আমার আর ওয়েব ডিজাইনে যাওয়া হয়না। প্রথম কাজ হিসেবে আমি একটি লোগো ডিজাইন কন্টেস্টে অংশগ্রহণ করি এবং সেখানে আমি রানার আপ হই। এই রানার আপ হওয়ার পর আমার মধ্যে আগ্রহটা আরও বেশি কাজ করে। আমার মনে হতে থাকে যে প্রথম কন্টেস্টেই আমি রানারআপ হলাম তাহলে তো আমাকে দিয়ে হবে। এর কিছুদিন পর আমি একটা কন্ট্রাক্ট পাই যা মোটামুটি ৯০ ডলারের ছিলো। এটাই ছিলো আমার ফ্রিল্যান্সিং থেকে প্রথম আয়। 

এখানে অনেকেই এসে ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতার আসলে অনেক কারণ থাকতে পারে যেমন অনেকে নামমাত্র ফ্রিল্যান্সিং শিখে। ট্রেনিং সেন্টার গুলো যে খুব ভালোমত সব শেখায় তা কিন্তু না তারা তাদের মতো শেখায়। যদি নিজে ভালো মতো সেগুলো চর্চা না করি তাহলে দেখা যাবে ওগুলো যত ভালো প্রতিষ্ঠান থেকেই শেখা হোক না কেন লাভ হবে না। যদি দক্ষ না হওয়া যায় তাহরে মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়া সম্ভব না। অনেকে আছে যারা অল্প কাজ শেখেই মার্কেপ্লেসে আসে এবং হতাশ হয়ে যায়। এছাড়াও অনেকে শুধু টাকার পেছনে দৌড়ায় তাদের এ চিন্তাকে দেখে অনেক ভুয়া ট্রেনিং সেন্টার আছে যারা অফার করে দুই মাসের মধ্যে টাকা ইনকাম করার সুযোগ করে দেওয়ার। অনেকে তাদের এই ফাঁদে পা দেয় এবং প্রতারিত হয়। আবার অনেকে টাকা ইনকাম করতে চায় একাউন্ট খুলে বসে আছে কিন্তু পোর্টফোলিওর কোনো ঠিক নেই। তার টার্গেট টাকা ইনকাম করা নিজের স্কিল ডেভেলপ করা নয়। এটা করতে গিয়ে অনেকে ব্যর্থ হয়ে যায়। এছাড়াও অনেকের ধৈরয কম তারা অল্পতেই অনেককিছু করতে চায়। এটা একটা ধৈর্য্যর বিষয় তিন-টার বছরেও অনেকে কিছু করতে পারে না। আবার অনেকের ইংলিশে দক্ষতা কম যার ফলে সঠিকভাবে কমিউনেকশনটা হয়ে ওঠে না যার ফলে ভালো ভালো কাজ পাবে না স্বাভাবিক। 

পোর্টফোলিওটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটি সেক্টরের উপর নির্ভর করে যে আমি কোন সেক্টর নিয়ে কাজ করছি। যেমন আমি ডিজাইনার আমি যদি পোর্টফোলিও বিল্ডআপ করতে চাই তাহলে আমাকে আমার যে কাজগুলো আছে হোক সেগুলো কোনো ক্লায়েন্টের বা প্র্যাক্টিস করা সেগুলোকে এ সম্পর্কিত ওয়েবসাইটগুলোতে পোস্ট করতে হবে নিয়মিত। যখন আমি আমার ভালো ভালো কাজগুলো দিয়ে রাখবো তাহলো আমার একটা পোর্টফোলিও বিল্ড হয়ে যাবে। এ পোর্টফোলিও গুলো যদি আমি কোনো ক্লায়েন্টকে দেই তখন তারা সহজেই কাজগুলো দেখতে পারে তারপর প্রজেক্ট অফার করে। এভাবে আসলে পোর্টফোলিও বিল্ডআপ করা যায়। আমি যদি নতুন হয়ে থাকি তাহলে যারা এক্সপার্ট, যারা এর আগেও কাজ করেছে তাদের কাজগুলো দেখতে পারি ফলে ওইগুলো থেকে ধারণা নিয়ে নিজের মতো করে কাজ করে তা পোর্টফোলিওতে দিতে পারি। এভাবে একটা দুইটা করে নিজের পোর্টফোলিও বিল্ডআপ করা সম্ভব। 

বর্তমানে দেশে পেপাল না থাকায় আমাদের পেমেন্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে খুব সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কাজ শেষে তার অর্থ নেওয়ার জন্য আমাদের অনেকটা ঘুরিয়ে সে টাকাটা নিতে  হচ্ছে। ১০ টাকা আয় করলে ৩-৪ টাকা আমদের সে অর্থ গ্রহণ করতেই চলে যায় বিভিন্ন জায়গায় ফি দিয়ে। এছাড়াও অনেক ক্লায়েন্ট আছে যারা শুধু পেপাল ব্যবহার করতে পারে অন্যমাধ্যম তারা জানেনা যার ফলে আমাদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমরা কাজটা পাইনা। 

নতুনদেরকে আমি বলবো জন্য গাইডলাইন এটাই থাকবে যে ফ্রিল্যান্সিং একটা মাধ্যম যার দ্বারা আমি একটা দক্ষতা জানি সেটা কাজে লাগাবো। প্রধান বিষয় হচ্ছে দক্ষতা। আমি যে সেক্টরেই কাজ করি সেটা সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা থাকতে হবে। পরিপূর্ণ দক্ষ না হয়ে এ মার্কেপ্লেসে আসা যাবে না। অনেকে দেখা যায় কাজ ঠিকমতো না জেনেই মার্কেটপ্লেসে আসে তারপর ক্লায়েন্ট যখন কাজ দেয় সে ঠিকমতো করতে পারে না ফলে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের প্রতি একটি নেতিবাচক ধারণা হয় যে তারা কাজ পারে না এবং পরবর্তীতে তারা কাউকে কাজ দিতে চায়না। এটা দেশের জন্যেও অনেক ক্ষতির। দ্বিতীয়ত, ধৈরয ধরতে হবে। ৫-৬ মাস বা বছর পার হয়ে যাবে কাজ পাওয়া যাবে না তবুও হাল ছাড়া যাবে না। নিজের দক্ষতা বাড়াতে হবে। এটা সবাই পারে না। যারা পারে তারাই সফল হয়। তৃতীয়ত, অনেকে বলে এই সেক্টর ভালো না এটার কোনো ভবিষ্যত নেই। এধরনের কথাগুলোয় কান দেয়া যাবে না। এ সেক্টরে দক্ষতা থাকলে সম্ভাবনা প্রচুর। পাশাপাশি আমাদের বাংলাদেশে মানুষের ইংলিশে দক্ষতা যেহেতু কম সেটা বাড়াতে হবে। যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে হবে, ভালো নেটওয়ার্কিং থাকতে হবে। যে সেক্টরে কাজ করছি সেখানকার কমিউনিটির সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence