আর ঘরে থাকতে চান না শিক্ষার্থীরা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আহ্‌বান

আর ঘরে থাকতে চান না শিক্ষার্থীরা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আহ্‌বান
আর ঘরে থাকতে চান না শিক্ষার্থীরা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আহ্‌বান

করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধের এই ঘোষণা আছে। এর মধ্যে দেশের সবকিছু প্রায় স্বাভাবিক হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে এবং পরীক্ষাগুলোর কী হবে, তা জানার প্রবল আগ্রহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এই পরিস্থিতিতে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার বিষয়ে কী ভাবছে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা? এ বিষয়ে জানতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। লিখছেন মো. আরিফুল ইসলাম-

মো: তাসনিম হাসান আবির
মো: তাসনিম হাসান আবির
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বর্তমান করোনা মহামারির ভেতর পাঁচ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। এরই মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রায় সকল অফিস আদালত চালু হয়েছে। তাই এই পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলাটা জরুরি। প্রথম পর্যায়ে স্কুল, কলেজ বন্ধ রেখে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া উচিত। তারপর ক্রমান্বয়ে অন্যগুলো চালু করতে হবে। কারণ দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের মানসিক দিকটি বিবেচনায় এনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেপ্টেম্বরের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে ধীরে ধীরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া উচিত।

মাহমুদুর রহমান
মাহমুদুর রহমান
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বিষয়টা খুবই জটিল এই মুহূর্তে। খুলে দেয়া এবং না খোলা দুটো বিষয়েই একটা বড় জনগোষ্ঠীর ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। তবে দেশে যেহেতু করোনা পরিস্থিতির প্রকোপ কমে এসেছে, আপাত দৃষ্টিতে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করছি, খুলে দেওয়া উচিত। যেহেতু প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, সেহেতু আমি আশা করছি তারা নিজের এবং সমাজের কথা বিবেচনা করেই তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে।

 

 

 

 

ফারিয়া খান রিচি
ফারিয়া খান রিচি
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। তবুও দেখা যায় নেটওয়ার্কজনিত সমস্যা বা নেটের উচ্চমূল্যের কারণে সকলের অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাছাড়া অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার মাধ্যমে শিক্ষার মান কতটুকু বজায় থাকে তা নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যায়। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়াকেই অধিক যুক্তিসঙ্গত মনে করি। যদি সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব না হয় তবে বিশ্ববিদ্যালয় না খোলাই শ্রেয়।

 

 

 

সবুজ আহমেদ
সবুজ আহমেদ
তৃতীয় বর্ষ, মার্কেটিং বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ঘরে বসে দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তবে অনলাইনে ক্লাস চলার কারণে আবার ফিরে এসেছি ক্লাসরুমে। ভার্চুয়াল মাধ্যমে ক্লাস হচ্ছে ঠিকই কিন্তু দেখা নেই প্রাণের প্রিয় বিদ্যাপিঠের অথচ যেখানে প্রতিদিন হাজারো শিক্ষার্থীর সমাগম থাকতো। আবার ফিরে যেতে চাই আমার ২০৬, ২০৭ নাম্বার ক্লাসরুমে। শিক্ষকের লেকচার শুনে মুখোমুখি জ্ঞান আহরণ করা, প্রতিনিয়ত চায়ের কাপে আড্ডা, মুক্তমঞ্চে বিকেলটা কাটানো এবং শহীদ মিনারে বসে গল্প করা। চাই ক্লাসের করিডর জুড়ে সারাটাদিন কাটিয়ে দিতে।

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুস্থ থাকা। দেশে প্রতিনিয়ত মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে এবং দুনিয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছে অনেকেই। শিক্ষক, সহপাঠী, সিনিয়র, জুনিয়র এবং আমার ক্যাম্পাসের প্রিয় মানুষগুলো ভালভাবে বেঁচে থাকুক। পরিস্থিতি সর্বোচ্চ অনুকূলে আসলে ঠিক ওই সময়েই খোলা হোক সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

সাবিহা তাসনিম
সাবিহা তাসনিম
ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন সায়েন্স
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাসায় অবস্থান করছি। দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন অনলাইনেই পাঠদান চলছে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে অনেক শিক্ষার্থীই অংশগ্রহণ করতে পারছে না। যার মূল কারণ ডিজিটাল ডিভাইস এবং ডাটা কিনার সামর্থ্যের অভাব। দেখা যায় যে ডিজিটাল ডিভাইস থাকা সত্ত্বেও ডাটার উচ্চ মূল্য শিক্ষার্থীদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয় বলে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের হার কম।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমরা সেশন জটের আশংকায় আছি। যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে হয়তো সেশন জটের আশংকা কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে সবার জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। বিশ্ববিদ্যালয় শত শত শিক্ষার্থীদের সমাগম। যথাযথ নিরাপদ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সকলের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠবে না। সেক্ষেত্রে শত শত জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। আর আজকের যুব সমাজ আগামীর ভবিষ্যৎ। যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হয় তবে ক্রমান্বয়ে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। একসাথে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে হয়তো সকলের জীবনে আশংকায় পড়ে যাবে।

যেহেতু শিক্ষার্থীদের জীবনের কথা ভেবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে সেহেতু ‌খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে আগে সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। আর পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা করে ধাপে ধাপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে খুলে দেওয়া যেতে পারে।

জাহাঙ্গীর আলম রিয়াদ
জাহাঙ্গীর আলম রিয়াদ
দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম

দেশের সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খুলে দিলেও শিক্ষাখাত এখনো অচল রয়েছে। আমার মতে, স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন না খুললেও আপাতত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া উচিত। কারণ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা যথেষ্ট ম্যাচুয়েড। তারা নিজেদের সচেতনতা সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে। প্রতিষ্ঠানগুলো যতই অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষার ব্যবস্থা করুন না কেনো, আসলে তা স্বাভাবিকের তুলনায় ৩০% কাভার হয় না। তাই দ্রুত কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।

 

 

 

কাওছার হোসেন
কাওছার হোসেন
বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাসহ সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাও চলছে না। অনলাইনে ক্লাস চললেও সকল শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না। এতোদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা যেন এক বিরল দৃষ্টান্ত। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এতোদিন বন্ধ পেয়ে যেমনি পড়ার প্রতি অনিহা চলে এসেছে, তেমনি চলে এসেছে সৎ ও অসৎ সঙ্গের সংমিশ্রণ। তাই আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। আশা করি, শিক্ষামন্ত্রী সব দিক বিবেচনা করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

 

 

সাজ্জাদ হোসেন
সাজ্জাদ হোসেন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

যেহেতু ইচ্ছে-অনিচ্ছে সত্বেও দেশে সবকিছুই অনেকটা স্বাভাবিকভাবে চলছে। তবে কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখাটা অনেকটা বোকামির শামিল। ঘরে থাকা নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে মূলত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে তা কতোটুকু রূপ নিচ্ছে তা সবার জানা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে অপরিকল্পিত অনলাইন ক্লাস চলছে। কিন্তু তেমন ফলদায়ক হচ্ছে না। তাই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে প্রায় শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করে অনলাইন কার্যক্রম চালাতে হবে নতুবা স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে হবে।

 

 

 

নুরুল আমিন
নুরুল আমিন
বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

গত পাঁচ মাস ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পড়াশোনায় দারুন ব্যাঘাত ঘটেছে। এমনকি মনে সেমিস্টার ড্রপ ও সেশনজটের চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। মাঝে মাঝে অনলাইনে ভার্চুয়াল ক্লাস করালেও অর্থের সংকটের কারণে ডাটা ঢোকানো ও গ্রামীণ জনপদের শিক্ষার্থী হওয়ায় নেটের সমস্যার কারণে ক্লাসগুলো করা হয়ে উঠে না।

বাংলাদেশ আইডিবির তথ্যানুসারে, মহামারি করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত সংখ্যা কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে সীমিত আকারে সকল প্রকার অফিস-আদালত যানবাহন চলাচলের নির্দেশ দিয়েছেন। সেহেতু সকল প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্ষিপ্ত আকারে সিলেবাস করে পরীক্ষা নিলে সেমিস্টার ড্রপ ও সেশনজটের চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারব। পূর্বের ন্যায় মানসিকভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারব। এর ফলে আমরা মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে রেহাই পাব এবং পড়াশোনায় মনোযোগী হবো।


সর্বশেষ সংবাদ