ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ দাবিতে সায়েন্সল্যাবে বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা
- ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩৬ PM , আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫৪ AM
সাত কলেজকে নিয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ প্রকাশের দাবিতে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার (৬ আগস্ট) সকাল ১১টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নীলক্ষেত মোড় হয়ে সাইন্সল্যাবে অবস্থান করছে। এ সময় সাইন্সল্যাব মোড় সংলগ্ন সকল সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে তীব্র যানজট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা, ‘শিক্ষা সিন্ডিকেট নিপাত যাক, ডিসিইউ মুক্তি পাক; অধ্যাদেশ জারি করো, ঢাকেবি চূড়ান্ত করো; দালালি না শিক্ষা, শিক্ষা শিক্ষা; তালবাহানা বন্ধ করো, অধ্যাদেশ জারি করো; সিন্ডিকেটের গদিতে,আগুন জালো একসাথে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।
অন্যদিকে কর্মসূচি ঘিরে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন সাইন্সল্যাব কিছু সময় অবস্থান করে তারা ক্যাম্পাসে ফিরে যাবেন।
এ সময়ে ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার মৌ বলেন, প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি সরকার থাপে থাপে এ পর্যন্ত মেনে নিয়েছে। আমরা আশাবাদী শেষে দাবিটুকু অধ্যাদেশের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে সেটি যেন মেনে নেয় এটিই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা সাইন্সল্যাবে কিছুক্ষণ অবস্থান করবো এবং ক্যাম্পাসে ফিরে যাবো।

সাইন্সল্যাবে পুলিশের বাড়তি উপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, এই আন্দোলন বাহিরে কেউ ঢুকে বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সেজন্য পুলিশ এখানে অবস্থান করছে এবং তারা তাদের কাজ করছে।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার বলেন, সাত কলেজের বিষয়ে সরকার যে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেগুলোকে আমরা অনেকাংশে গ্রহণ করেছি তবে তারা এখনো কিছু কিছু বিষয় অস্পষ্ট রেখেছে! আমরা আশা করছিলাম গত দিনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ কবে নাগাদ দিবে সেটার স্পষ্ট একটি রোডম্যাপ দিবে, কিন্তু সেটা তারা স্পষ্ট করেনি! আর বর্তমান শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে সম্পন্ন হবে সেটাও স্পষ্ট করেনি। এই বিষয়গুলো স্পষ্ট না করায় আমরা ক্ষুব্ধ।
সরকারি বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী রুমান হাসান তামিম বলেন, ঢাবি অধিভুক্তির পর থেকে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা যেভাবে একের পর এক দুর্ভোগের শিকার হয়েছে সেশনজট, ফল প্রকাশে বিলম্ব, প্রশাসনিক জটিলতা তার ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। অথচ এই শিক্ষার্থীরাই ছিল দেশের রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি ও প্রগতির ফ্রন্টলাইনে। আমাদের ব্যবহার করে শিক্ষা সিন্ডিকেট শুধু নিজের আধিপত্যই টিকিয়ে রাখেনি, বরং আমাদের স্বতন্ত্রতাকে নিঃশেষ করার চেষ্টাও করেছে। কিন্তু এই নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের মধ্য দিয়ে সেই অবিচারের অবসান ঘটছে। আমরা জোরালোভাবে আহ্বান জানাই, ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুত অধ্যাদেশ জারি করে প্রশাসনিক কাঠামো সম্পন্ন করবে এবং ভবিষ্যতের সব সিদ্ধান্তে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে। পাশাপাশি রানিং শিক্ষার্থীদের জীবন অবহেলার শিকার না হয়, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি। তাদের সনদ, রেজাল্টসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়, সেদিকে ইউজিসিকে সুস্পষ্ট নজর দিতে হবে। দেশের উচ্চশিক্ষায় বিদ্যমান সব বৈষম্য ও সিন্ডিকেট ভেঙে একটি স্বচ্ছ, সম্মানজনক এবং শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার আন্দোলন আমরা শুরু করেছি।
এর আগে, সোমবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করে ভিসি-রেজিস্ট্রারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া; অধ্যাদেশ জারির পর নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সনদসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাসহ কয়েকটি দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের কথা জানান সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ দ্রুত জারির জন্য সরকারকে একাধিকবার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। সর্বশেষ ইউজিসিতে বসে অধ্যাদেশের জন্য রাষ্ট্রকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিই। কিন্তু আমাদের হতাশ করে কর্তৃপক্ষ সেপ্টেম্বরে অধ্যাদেশ দেবে বলে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ আগস্ট নতুন ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির গঠনের অগ্রগতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংবাদ সম্মেলনে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি তুলে ধরেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো.মজিবর রহমান। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে সকল রূপরেখা দিলেও নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ কবে হবে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে তথ্য দেননি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।