পুরুষদের মধ্যে কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে, কী বলছে গবেষণা?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫৯ PM , আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১১:৩৭ AM
বিশ্বজুড়ে কিডনি ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। পুরুষদের মধ্যে এই রোগ হওয়ার প্রবণতা নারীদের চেয়ে বেশি। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ কিডনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রাণ হারিয়েছেন ১ লাখ ৫৬ হাজারের বেশি মানুষ। গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, পুরুষদের মধ্যে কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে ধূমপান, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই গবেষণাটি ইউরোপিয়ান ইউরোলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় অংশ নিয়েছেন বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা ক্যান্সার ও ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ। গবেষণার নেতৃত্ব দেন ড. আলেসান্দ্রো লারচার এবং তাঁর সহকর্মীরা।
প্রকাশিত এ গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে কিডনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮৪০ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১ লাখ ৫৫ লাখ ৯৫৩ জন। গবেষকদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৭৯১ জন এবং মৃত্যু হতে পারে ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৬১ জনে, যা যথাক্রমে ৭২% ও ৯৬% বৃদ্ধি।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, কিডনি ক্যান্সারের পেছনে রয়েছে প্রধানত জিনগত প্রবণতা ও জীবনধারাগত ঝুঁকি। কিছু জিন যেমন VHL, MET, TSC1/2, FH, BAP1, BRCA2, CHEK2 ও PTEN-এ ত্রুটি থাকলে আক্রান্তের সম্ভাবনা বাড়ে। এছাড়া পুরুষদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি, এবং পারিবারিক ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান ও জাতিগত বৈশিষ্ট্যও একটি ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ, পরিবেশ দূষণ এবং ব্যায়ামের অভাব কিডনি ক্যান্সারের পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
গবেষণা অনুযায়ী, কিডনি ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের ৫ বছরের মধ্যে বেঁচে থাকার হার ৪০% থেকে ৭৫% পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। উন্নত দেশগুলোতে যেখানে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে বাঁচার হার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
আরও পড়ুন: করোনা ভ্যাকসিনে সরকারি তহবিল বন্ধ করছে ট্রাম্প প্রশাসন
বিশ্ব স্বাস্থ্য নীতিনির্ধারক ও চিকিৎসকদের জন্য গবেষণাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। গবেষকরা বলছেন, বিগত পরিসংখ্যান এবং ভবিষ্যতের পূর্বাভাস একত্রে ক্যান্সার প্রতিরোধ ও স্ক্রিনিং কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে যাঁদের পরিবারে কিডনি ক্যান্সারের ইতিহাস আছে, তাঁদের জন্য জেনেটিক টেস্টিং এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
গবেষক ড. রিকার্ডো কাম্পি বলেন, এখনই সময় সচেতনতার। আমাদের তথ্য বলছে, কিডনি ক্যান্সার দ্রুত বাড়ছে, কিন্তু এর অনেকটাই প্রতিরোধযোগ্য। যদি আমরা ঝুঁকি উপাদানগুলো নিয়ন্ত্রণে নিতে পারি, তবে ভবিষ্যতের মৃত্যুহার অনেকটাই কমানো সম্ভব।’