যেসব সাধারণ ভুলের কারণে নষ্ট হচ্ছে মস্তিষ্ক
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫০ AM
মস্তিষ্ক মানবদেহের সবচেয়ে জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। চিন্তা, স্মৃতি, সিদ্ধান্ত, আবেগ—সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের কিছু সাধারণ অভ্যাসই ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দিচ্ছে—আমরা হয়তো টেরও পাচ্ছি না।
জেনে নিন, কোন কোন ভুল অভ্যাস আপনার মস্তিষ্কের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া
নিয়মিত রাতে কম ঘুমালে শুধু ক্লান্তিই নয়, মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক টক্সিন দূর করে ও তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করে। তাই ঘুমের অভাবে স্মৃতিশক্তি কমে, মনোযোগ নষ্ট হয়, এমনকি মানসিক ভারসাম্যও নষ্ট হতে পারে।
অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
অতিরিক্ত চর্বি, চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ কমায়। এসব খাবার দীর্ঘমেয়াদে স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল করে ও আলঝেইমারসহ বিভিন্ন স্নায়ুবিক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এর পরিবর্তে ফল, সবজি, বাদাম ও মাছ মস্তিষ্কের জন্য বেশি উপকারী।
অতিরিক্ত মোবাইল ও স্ক্রিন টাইম
ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইল, ট্যাব বা কম্পিউটারের সামনে থাকা শুধু চোখের ক্ষতি নয়, মস্তিষ্কেও চাপ ফেলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত আসক্তি মনোযোগ কমায়, ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় ও মানসিক অস্থিরতা বাড়ায়।
অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা মাদকগ্রহণ
অতিরিক্ত চা, কফি বা এনার্জি ড্রিংকস সাময়িকভাবে মস্তিষ্ককে সক্রিয় করলেও দীর্ঘমেয়াদে তা স্নায়ুতে চাপ ফেলে। মাদক বা নিকোটিন তো আরও ভয়াবহ—এগুলো মস্তিষ্কের কোষ ধ্বংস করে দেয় এবং যুক্তিবোধ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
ব্যায়াম শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্কের জন্যও প্রয়োজন। হাঁটা, দৌড়ানো বা যোগব্যায়াম মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। যারা দীর্ঘ সময় বসে কাজ করেন কিন্তু ব্যায়াম করেন না, তাদের মস্তিষ্ক দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ
অতিরিক্ত চিন্তা বা স্ট্রেস মস্তিষ্কে কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যা স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগের ক্ষতি করে। দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ ডিপ্রেশন ও স্নায়বিক দুর্বলতার কারণ হতে পারে।
লবণ ও চিনি বেশি খাওয়া
অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়িয়ে মস্তিষ্কের ক্ষতি করে, আর বেশি চিনি স্নায়ুর কার্যক্রমে বাধা দেয়। এসব কারণে মনোযোগ কমে যায় এবং চিন্তাশক্তি দুর্বল হয়।
সকালের নাশতা না খাওয়া
অনেকে তাড়াহুড়ায় সকালের নাশতা বাদ দেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়, ফলে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত শক্তি পায় না। এতে মনোযোগে ঘাটতি, ক্লান্তি ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস ঘটে।
একঘেয়ে জীবন ও শেখার আগ্রহের অভাব
মস্তিষ্কও শরীরের মতো অনুশীলন চায়। নতুন কিছু শেখা, বই পড়া বা সৃজনশীল কাজ না করলে মস্তিষ্কের কোষ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। নিয়মিত শেখার চর্চা মস্তিষ্ককে তরতাজা রাখে।
মস্তিষ্কের যত্ন মানেই জীবনযাপনের যত্ন। পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম আর মানসিক প্রশান্তি—এই চারটি অভ্যাসই মস্তিষ্ককে রাখবে দীর্ঘদিন সক্রিয় ও সতেজ।