দেশে করোনা সংক্রমণ কমলেও বাড়ছে মৃত্যু

করোনাভাইরাসে মৃত্যু
করোনাভাইরাসে মৃত্যু  © সংগৃহীত

দেশে চলছে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ। গত কয়েকদিনের পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যায় সংক্রমণ কিছুটা নিম্নমুখী হলেও মৃত্যু বাড়ছে। তবে গত বছরের তুলনায় নতুন আক্রান্তের বিপরীতে মৃত্যু অনেক কম। তবে মৃতদের মধ্য বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি।

আরও পড়ুন: এলিজাবেথ জানালেন, কে হবেন ব্রিটেনের পরবর্তী রানি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় সংক্রমিত আরও ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে দৈনিক মৃত্যু ৩০-এর ওপরে থাকল। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৩৬ জনের মধ্যে ২৫ জনই ঢাকা বিভাগের। এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর ৪৩ দশমিক ৮৫ শতাংশই এ বিভাগের বাসিন্দা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট ৩৫ হাজার ৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৮ হাজার ৩৫৯ মানুষের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ নিয়ে গত দুই দিন দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ১০ হাজারের নিচে এবং শনাক্তের হার ২৫ শতাংশের নিচে থাকল। এর আগে টানা ১২ দিন শনাক্তের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি ছিল।

দেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি প্রায় সাড়ে তিন মাস নিয়ন্ত্রণে থাকার পর এ বছর জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে রোগী বাড়তে শুরু করে। প্রায় দুই বছর ধরে চলা এই মহামারিতে দেখা গেছে, নতুন রোগী বাড়তে থাকার তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মৃত্যুও বাড়তে শুরু করে। সংক্রমণের এমন চিত্র বিশ্লেষণ করে দেশে দৈনিক মৃত্যু আগামী কিছুদিনের মধ্যে আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে ওমিক্রন ঢেউয়ের মধ্যেই ‘নিওকোভ’ শনাক্তের খবর জনমনে নতুন করে একধরনের ভয় তৈরি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে নানা তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। তবে নিওকোভ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটালেও এখনই ভয়ের কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অণুজীববিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল। তিনি বলেন, ২০২০ ও ২০২২ সাল, দুটো কিন্তু ভিন্ন জিনিস। ২০২০ সালে আমাদের বৈশ্বিক কমিউনিটিতে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করার মতো তেমন অ্যান্টিবডি ছিল না। ফলে এটি প্যানডেমিক (মহামারি) আকারে ছড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। এখন গত দুই বছরে আমরা বিভিন্ন ধরনের ভেরিয়েশন অব কনসার্নের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে দেহের ইমিউন সিস্টেম অনেকটা শক্তিশালী করে ফেলেছি।

আরও পড়ুন: অনুমতি ছাড়া পেন্টাগনে প্রবেশ, গ্রেফতার করা হল মুরগিকে

যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেন, বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা হলো দক্ষিণ আফ্রিকার এক বিশেষ প্রজাতির বাদুড়ের শরীরে থাকা নিওকোভ ভাইরাসে যদি কোনোভাবে স্পাইক প্রোটিনের বিশেষ মিউটেশন হয়, যাতে তারা মানুষের এসিই-টু রিসেপ্টরের সঙ্গে বন্ধন সৃষ্টি করার সক্ষমতা অর্জন করে, তাহলে তা অতিদ্রুত ছড়িয়ে পড়বে মানুষের মাঝে। এমনকি সঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপ না নিলে এ রূপান্তরিত নিওকোভ আরেকটি মহামারির সূচনা করতে পারে। যার সংক্রমণে মৃত্যুর হার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে সংক্রমণের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১৮ লাখ ৫৩ হাজার ১৮৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩৯১ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৫৬০ জনের। গতকাল পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।


সর্বশেষ সংবাদ