ডা. মোমিনের উদ্ভাবন
চোখ পরীক্ষায় স্মার্টফোন
- জাহিদ হাসান
- প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০২:৫৭ PM , আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৫১ PM
দেশে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপে ভোগা রোগীর চোখে রক্ত ক্ষরণ ও চোখের ফরেন বডি রেটিনা ছিড়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। যেটি কেবলমাত্র রেটিনা বিশেষজ্ঞরাই শনাক্ত করতে পারেন। এক্ষেত্রে রেটিনার ছবি তুলতে হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজন হয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা দামের অত্যাধুনিক কালার ফান্ডাস ফটোগ্রাফ যন্ত্রের। তবে ব্যয়বহুল এ যন্ত্রটি অধিকাংশ হাসপাতালে নেই। তাই রোগীদের রেটিনার ছবি এবং কালার ফান্ডাস ফটোগ্রাফ ডকুমেন্টস ছাড়াই চিকিৎসকের হাতে লেখা প্রেসক্রিপশন ও ডায়াগনোসিস রিপোর্টের উপর নির্ভর করতে হয়।
এমন বাস্তবতায় রাজধানীর ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একজন রেটিনা বিশেষজ্ঞ কালার ফান্ডাস ফটোগ্রাফি মেশিনের আদলে ‘স্মার্টফোন বেজ কালার ফান্ডাস ক্যাম’ নামক একটি যন্ত্র তৈরি করেছেন। যেটি ব্যবহার করে চিকিৎসকরা রোগীর রেটিনার বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ছবি তুলে নির্ভুল চক্ষু সেবা দিতে পারবেন। এজন্য দরকার হবে স্মার্টফোন ও ২০ ডাইঅপ্টার পাওয়ারের একটি লেন্স।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই প্রযুক্তির ব্যবহার হলেও দেশে কালার ফান্ডাস ফটোগ্রাফি যন্ত্রের উপর ভিত্তি করে স্মার্টফোন বেজ কালার ফান্ডাস ক্যাম তৈরি ও এর ব্যবহার এই প্রথম। ইতোমধ্যে যন্ত্রটি চোখের চিকিৎসকদের কাছে বেশ সাড়া ফেলেছে। স্বল্প মূল্যের যন্ত্রটির মাধ্যমে নামমাত্র ফি’তে কম সময়ে চোখের রক্তক্ষরণ ও রেটিনার বিভিন্ন তথ্য চিত্র ধারণ সম্ভব হচ্ছে।
চক্ষু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজারের মতো রোগী বিভিন্ন ধরনের চোখের সমস্যা নিয়ে আসছে। তাদের মধ্যে প্রতিদিন দুই থেকে তিনশর মতো রেটিনার সমস্যা নিয়ে আসছেন। যাদের ৪০ থেকে ৫০ জনেরই ডায়াবেটিস রেটিনাপ্যাথি সমস্যা ধরা পড়ছে।
কিন্তু দেশের কোনো আই ক্যাম্প বা চক্ষু শিবির, মফঃস্বল চিকিৎসকের চেম্বার, ভিশন সেন্টার, চশমার দোকান, ব্র্যাঞ্চ হাসপাতাল, ক্লিনিক, উপজেলা হেলথ কমপেস্নক্স ও প্রাইভেট আই হাসপাতালে উচ্চমূল্যের কালার ফান্ডাস ফটোগ্রাফি যন্ত্র থাকে না। এ ক্ষেত্রে ওই সব চিকিৎসাকেন্দ্রে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করে চোখের ডাক্তার ছাড়াও প্যারামেডিকস, অপটোমেট্রিকসরা রোগীর চোখের ছবি তুলে টেলিকমিউনিকেশনের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারবেন। রেটিনার ছবির প্রিন্ট কপি রোগী ও অভিভাবকদের দেখিয়ে সমস্যার মাত্রা ও কাউন্সিলিং করাতে পারবেন। তাই সরকারি ব্যবস্থাপনায় এটি তৈরি করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের রেটিনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও যন্ত্রটির উদ্ভাবক ডা. মোমিনুল ইসলাম বলেন, এটি মূলত স্মার্ট মোবাইল ফোন ব্যবহার করে চোখের রেটিনা পরীক্ষা করার একটি সাধারণ যন্ত্র। স্বল্পমূল্যের এই যন্ত্রটি ব্যবহার করে চিকিৎসকরা রোগীদের সহজে চোখের সমস্যা পরীক্ষা করতে পারবেন। আক্রান্ত ব্যক্তির চোখে রক্ত ক্ষরণের পরিমাণ বা কোন ধরনের চিকিৎসার প্রয়োজন সহজেই জানাতে পারবেন। যেকোনো চিকিৎসক মোবাইলে রেটিনার ছবি তুলে শেয়ারইট, ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ ও ই-মেইলে রোগীর কোন আত্মীয় বা রেটিনা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারবেন।
উদ্ভাবিত পদ্ধতিটির বিষয়ে জানতে চাইলে ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের পরিচালক (মেডিকেল সার্ভিস) ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কালার ফান্ডাস ফটোগ্রাফির মতো ছবি তুলে পরীক্ষা করা যায়। রোগীকে রেটিনার অসুখ সম্পর্কে বোঝানো যাবে। যেসব হাসপাতালে উচ্চমূল্যের রেটিনা পরীক্ষা যন্ত্র থাকে না। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা সহজেই রোগীর রেটিনার ছবি ধারণ করতে পারবেন।
হাসপাতালটির রেটিনা বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার বলেন, সাধারণত রেটিনার ছবি তোলার একটি অত্যাধুনিক যন্ত্রের দাম সর্বনিম্ন ১০ লাখ টাকা। যেমন ইনডাইরেক্ট অপথোলমস্কোপ ও ডাইরেক্ট অপথোলমস্কোপ যার মাধ্যমে রেটিনার ছবি দেখা গেলেও ছবি তোলা যায় না। এ ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা দামের লেন্স লাগানো উদ্ভাবিত যন্ত্রটি (স্মার্টফোন বেস ফান্ডাস ক্যাম) ব্যবহার করে শতভাগ স্বচ্ছ ও বড় আকারে চোখের রেটিনার ছবি তোলা যায়। আবার সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় বড়দের ছবি তোলার পাশাপাশি অপারেশন থিয়েটারে বাচ্চাদের চোখের রেটিনার ছবি তুলে পরীক্ষাও সহজ হয়। চোখের পরবর্তী সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করা যায়।
স্মার্টফোন বেজ ফান্ডাস ক্যাম তৈরিতে সহায়তাকারী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. আমিনুল হক খালিদ বলেন, কালার ফান্ডাস ফটোগ্রাফি পদ্ধতিতে ‘স্মার্টফোন বেজ ফান্ডাস ক্যাম’ তৈরি ও এটির সফল ব্যবহার দেশে এই প্রথম। যেটি ২০১৮ সালে অফথালমোলজি সোসাইটি বাংলাদেশের (ওএজবি) জাতীয় কনফারেন্সে গুরুত্ব পেয়েছে।
সহজলভ্য হওয়ায় অনেক চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বারে ব্যবহার করছেন। কারণ এটি ব্যবহার করে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ছাড়াও অন্যান্য চিকিৎসকরা চোখের নার্ভ বা স্নায়ু দেখতে পারেন। প্রান্তিকের চিকিৎসকরা এটি ব্যবহার করে টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে বিশেষজ্ঞদের কাছে রেটিনার ছবি পাঠিয়ে দ্রুত চিকিৎসা সিদ্ধান্ত আসতে পারেন বলে মন্তব্য করেন।
যোগাযোগ করুন:
ডা. মোমিনল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক ও কনসালটেন্ট, রেটিনা বিভাগ
রেটিনা ও ফ্যাকো সার্জন ও ইউভিয়াটিস বিশেষজ্ঞ (ইস্পাহানি ইসমালিয়া চক্ষু ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল), ফেলোশিপ ভিট্রিও রেটিনা ফেলোশিপ ইউভিয়া (শংকর নেত্রালয়, চেন্নাই, ইন্ডিয়া) মোবাইল নম্বর: ০১৯৭৬২০০১৫১