সাধারণ সর্দি-জ্বরেও অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না: বিএসএমএমইউ

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

মানুষের শরীরে সংক্রমণ সৃষ্টিকারী প্রধান জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত বাংলাদেশের প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের প্রায় ৯০ ভাগ অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়েছে। অনিয়ন্ত্রিত অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার এর প্রধান কারণ— যার ফলে মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট বা প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসা নিতে আসা ৭২ হাজার ৬৭০ জন রোগীর ওপর চালানো গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ফেসবুকের নজরদারি বন্ধ করবেন যেভাবে

সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে বিএসএমএমইউয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক ডেসিমেশন অনুষ্ঠানে ‘সংক্রামক ব্যাধি চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও কার্যকারিতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফলে এ তথ্য তুলে ধরেন বিএসএমএমইউর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বি চৌধুরী।

অ্যান্টিবায়োটিকগুলোকে মূলত তিনটি গ্রুপে ভাগ করা যায়– এর মধ্যে একটি হল 'অ্যাক্সেস গ্রুপ', যা প্রাথমিক সংক্রমণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়; উচ্চ-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া জন্য ব্যবহৃত হয় ‘ওয়াচ গ্রুপ’; এবং অন্যান্য গ্রুপের ওষুধ দিয়ে প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা যায় না, এমন সংক্রমণের জন্য ‘রিজার্ভ গ্রুপ’ ব্যবহার করা হয়।

২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় দেড় বছরে রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা নিতে আসা ৭২ হাজার ৬৭০ জন রোগীর ওপর চালানো এ গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে অন্তত ৭৫ শতাংশ ইনফেকশন হয় টাইফয়েড, ই-কোলাই, স্ট্যাফাউরিয়াস, ক্লিবশিয়েলা ও সিউডোমোনাস ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে। এসব ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অ্যাক্সেস ও ওয়াচ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক অকেজো হয়ে গেছে প্রায় ৯০ শতাংশ।

আরও পড়ুন: সরকারি ৮ ব্যাংকে ৯৭৪ জনের বড় নিয়োগ

গবেষণায় উঠে এসেছে, আইসিইউয়ের রোগীদের যে অ্যান্টিবায়োটিকে চিকিৎসা চলতো, তা এখন ওয়ার্ডের রোগীদেরও দিতে হচ্ছে। যে সব জীবাণু আগে শুধু আইসিইউতে মিলতো, তা এখন কমিউনিটিতেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। এতে বোঝা যায়, পরিস্থিতি কত খারাপের দিকে এগোচ্ছে।

ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী গবেষণা প্রসঙ্গে বলেন, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে, যেগুলোকে একেবারে শেষ ধাপ হিসেবে রিজার্ভ করে রাখা হয়েছে। সে বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, একান্ত বিপদে না পড়লে এই রিজার্ভ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিকগুলো একেবারেই ব্যবহার করা উচিত নয়।

কিন্তু বর্তমানে আমরা দেখছি, অহরহ এসব রিজার্ভ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হচ্ছে। যেগুলো সাধারণত সর্বোচ্চ মুমূর্ষু অবস্থায় আইসিইউতে থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার হওয়া উচিত, সেগুলো এখন হাসপাতালে সাধারণ ওয়ার্ডেই আমরা ব্যবহার করছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, আমরা রিজার্ভের যে অ্যান্টিবায়োটিক গুলো এখনই ব্যবহার করে ফেলছি, এরপরে কিন্তু আমাদের আর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। সেই সময়ে কিন্তু আমাদেরকে অনেক বড় বিপদে পড়তে হবে। তখন দেখা যাবে, সাধারণ সর্দি-জ্বরেও অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না। তখন কিন্তু সামান্য অসুখে আমাদের প্রাণ হারাতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউর ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, অযাচিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে মানুষ এখন অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট বা প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৭০ হাজার লোক মারা যায় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের কারণে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০৫০ সালে গিয়ে দেখা যাবে, করোনা থেকেও বেশি রোগী মারা যাবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্সের কারণে।

অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চিকিৎসক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence