করিডোর-বন্দর দিয়ে আমরা কোন রাষ্ট্রের প্রক্সি হতে চাই না: ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্ট ‘
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৫, ০৯:২০ PM , আপডেট: ১৪ মে ২০২৫, ০৩:৫৪ AM
দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের টেকসই লাভক্ষতির চুলচেরা বিশ্লেষণ ও আলোচনা-পর্যালোচনা না করে অন্তর্বর্তী সরকার হুটহাট রাখাইনে মানবিক চ্যানেল নিয়ে আরাকান আর্মি কিংবা জাতিসংঘের সাথে আলোচনা করতে পারে না একইভাবে আমেরিকা ও ইজরাইলের সাথে একাধিক সমঝোতা ও চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডকেও চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনায় যুক্ত করতে পারে না বলে জানিয়েছে ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’।
আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত ‘মানবিক করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনায় ডিপি ওয়ার্ল্ডকে যুক্ত করা’ বিষয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ দেশ। আমরা কোনো রাষ্ট্রের প্রক্সি হতে চাই না। কিন্তু গণমাধ্যম মারফত পাওয়া তথ্য, ও চট্টগ্রাম পোর্ট বিষয়ে সরকারের অবস্থান ও বক্তব্য আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করছে। দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কাজ করা প্লাটফর্মগুলোর সাথে সরকারকে অবশ্যই আলোচনায় বসতে হবে, কার সাথে কীভাবে ও কী সমঝোতায় যাচ্ছে সেগুলো স্পষ্ট করতে হবে। জনগণের কনসার্ন (সম্মতি) ছাড়া কিংবা চট্টগ্রাম পোর্ট বিদেশিদের ব্যবস্থাপনায় দেয়া যাবে না। এখানে দুটি বিষয়কে অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে- প্রথমত: রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান রোহিঙ্গাদের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের সাথে নিয়ে করতে হবে, কোনো বৈদেশিক শক্তির স্বার্থে নয়। দ্বিতীয়ত: বাংলাদেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য হুমকি কোনো রাষ্ট্র/সংস্থা/প্রতিষ্ঠানকে এখানে যুক্ত করা যাবে না।
আরও পড়ুন: সচিবালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আওয়ামী লীগের দোসরদের তালিকা প্রকাশ করবে ‘জুলাই ঐক্য’
জিয়া বলেন, রাখাইনে দেয়া অনেকটা আমেরিকার মধ্যস্থতায় ইজরাইলের সাথে আরব রাষ্ট্রগুলোর আব্রাহাম এ্যাকর্ড/চুক্তির মত। যেখানে ফিলিস্তিনের স্বার্থ না দেখে দখলদার ইজরাইলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। অতএব, সীমান্তবর্তী রাখাইন অঞ্চলে গণহত্যায় লিপ্ত আরাকান আর্মি নয়, বরং রোহিঙ্গাদেরকেই প্রাধান্য দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও স্বার্থের মধ্যেই সীমান্তে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্বার্থে জড়িত। একটা মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্র হিসেবে আমরা যেভাবে ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে থাকি, ইজরাইলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি, ঠিক তেমনি আমাদেরকে রোহিঙ্গাদের পক্ষ নিতে হবে, আরাকান আর্মির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। একইসাথে, রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গা নেতৃত্ব তৈরি এবং তাদের কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থাপনার সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে আরাকান অঞ্চলকে রোহিঙ্গা শাসিত (রোহিঙ্গা ডোমিন্যান্ট) স্টেট হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে জুলাই বিপ্লবে সহিংসতাকারীদের ব্যাপারে ফের তথ্য আহ্বান করবে কমিটি
স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির আহ্বায়ক আরও বলেন, দুবাই ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সাথে আমেরিকা ও ইজরাইলের একাধিক সমঝোতা/চুক্তি রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানে প্রচুর ভারতীয় স্টাফ রয়েছে। অতএব, ডিপি ওয়ার্ল্ডকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দরে মার্কিন নৌ জাহাজ ভিড়তে পারবে কিনা, ইজরাইলীরা আসবে কি না, ভারতীয়রা কাজ করবে কিনা এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের সাথে সরকার কীভাবে ও কী কী সমঝোতা/চুক্তি করতে চায়– অন্তর্বর্তী সরকারকে এসব বিষয় স্পষ্ট করতে হবে, জনগণের নিকট খোলাসা করতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী রেজিমের মত কোনো চুক্তি/সমঝোতা গোপন করা যাবে না। উপরোক্ত বিষয়গুলোর বিচার-বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা না করে, বিশেষ করে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা না করে দেশের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বন্দরটির পরিচালনার ভার বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে দেয়া যাবে না। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে বিদেশি প্রতিষ্ঠান আনা লাগবে কেন, সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশিদেরকে প্রশিক্ষণ দিলেই তো হয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার সাথে জড়িত এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সাধারণত সংসদে তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেখানে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কারো সাথে আলোচনা না করে হুটহাট সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এমন হুটহাট সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হয়ে উঠতে পারে।