‘রিপিট ক্যাডার’ ইস্যুতে ৪৪তম বিসিএসের ফল সংশোধন হচ্ছে
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, ০১:৩৭ PM , আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৫, ০১:১৩ PM
৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলে এক হাজার ৬৯০ জন প্রার্থীকে ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। তবে এ তালিকায় পুরোনো বিসিএসে একই ক্যাডারে ইতোমধ্যে নিয়োগ পাওয়া অন্তত ৮০০ জন প্রার্থী ফের মনোনীত (রিপিট ক্যাডার) হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও পিএসসি জানিয়েছে, এ সংখ্যা ৪২৪ জন।
পিএসসি কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য সঠিক হলেও, চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের পর এদের একটি বড় অংশ চাকরিতে যোগ না দিলে বহু পদ শূন্যই থেকে যাবে। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা। তারা বলছেন, প্রায় চার বছর ধরে চলা একটি বিসিএস পরীক্ষায় এমন ফলাফল সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও হতাশাজনক।
চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, যেসব প্রার্থী আগেই একই ক্যাডারে সুপারিশ পেয়েছেন, তাদের বাদ দিয়ে অপেক্ষমাণ উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে নতুন করে ফল প্রকাশ করতে হবে। সেইসঙ্গে অতিরিক্ত পদ বাড়ানোরও দাবি জানাচ্ছেন তারা, যাতে আরও বেশি প্রার্থী সুযোগ পান।
চাকরিপ্রার্থীদের এ দাবির প্রেক্ষিতে পিএসসি ফল সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠির মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, একাধিক বিসিএসে অংশ নিয়ে কেউ যদি আগের মতো একই ক্যাডারে পুনঃসুপারিশ পান এবং সেই পদে যোগদানের আগ্রহ না থাকে, তাহলে তাদের বাদ দিয়ে অপেক্ষমাণদের মধ্য থেকে মেধাক্রম অনুসারে নতুন করে ফল প্রকাশ করা যাবে।
চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা হয়, ‘..শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীগণকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্যপদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থীগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে; আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’
চিঠিতে পিএসসি আরও উল্লেখ করে, ‘রিপিট ক্যাডারের কারণে নতুন ও নন-ক্যাডারে অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এ সমস্যা নিরসনে বিধি সংশোধন জরুরি।’
জানা গেছে, ৪৪তম বিসিএসে চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে আগে থেকেই ক্যাডারে কর্মরতদের তথ্য গুগল ফর্মের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছে পিএসসি। ১৪ থেকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে ৪২৪ জনকে রিপিট ক্যাডার হিসেবে চিহ্নিত করেছে পিএসসি, যদিও এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
তবে বিধি সংশোধন প্রস্তাব গত ৯ জুলাই পাঠালেও এখনও তা অনুমোদন দেয়নি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি সতর্কভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো জটিলতা তৈরি না হয়।
এদিকে, বিসিএসের পদ না বাড়ানোয় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা ইতোমধ্যে স্মারকলিপি, মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও রাজু ভাস্কর্যে অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন। তাদের দাবি, ৪৪তম বিসিএসে অন্তত ৪০০ পদ বাড়ানো হোক।
চাকরিপ্রার্থীরা অভিযোগ করছেন, ৩৮, ৪০, ৪১ ও ৪৩তম বিসিএসে পদসংখ্যা বাড়িয়ে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হলেও এবার উল্টো কিছু পদ শূন্য রেখেই ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম গনমাধ্যমকে বলেন, বিধি মেনেই আমরা ফল প্রকাশ করেছি। তবে চাকরিপ্রার্থীদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে রিপিট ক্যাডারদের তথ্য নিয়েছি। বিধি সংশোধনের প্রস্তাবও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, পদসংখ্যা নির্ধারণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো সরকারকে জানানো হয়েছে। সরকার অনুমোদন দিলে আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হবে।