শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ গণস্বাক্ষরতা অভিযানের

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের মতবিনিময় সভা
গণস্বাক্ষরতা অভিযানের মতবিনিময় সভা  © টিডিসি ফটো

শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে গণস্বাক্ষরতা অভিযান। একই সঙ্গে শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন কিনা তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য মনিটরিং ব্যবস্থাকে জোরদার করার লক্ষ্যে বাজেটে বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) ‘শিক্ষার ন্যায্যতাভিত্তিক বাজেট: আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ সুপারিশ করা হয়।

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের সুপারিশ মালায় বলা হয়েছে,  উপবৃত্তি হিসেবে প্রদেয় অর্থের পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং প্রান্তিক অঞ্চল ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শতভাগ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করতে হবে। কারিগরি শিক্ষার শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপবৃত্তির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

শিক্ষাখাতে বরাদ্দকৃত বাজেটের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য মনিটরিং ও সমন্বয় জোরদার করা এবং বাজেট বিভাজনের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের মধ্যে সমন্বয়হীনতা পরিহার করা প্রয়োজন। 

শিক্ষাবাজেট নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে ( ইউনিয়ন/উপজেলা) বিশেষ করে স্কুল পর্যায়ে আলোচনা করতে হবে। উপজেলা পর্যায়ে সরকারি বরাদ্দকৃত বাজেট জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। জেলা পর্যায়ে বাজেটের অব্যয়িত অর্থ সংশ্লিষ্ট জেলার চর, হাওর, উপকূলীয় ও ভৌগোলিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যয় করার নির্দেশনা বাজেটে থাকা দরকার। 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবং মাদ্রাসাগুলোতেও মিড-ডে মিল ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এক সময় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেয়েদের ফলিক এসিড দেওয়া হতো, এখন দেওয়া হয় না। এ ব্যবস্থা পুনরায় চালু করতে হবে। এজন্য বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন। 

মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সবার লেখাপড়া অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করতে হবে। সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের খাতা, কলম, টিফিনবক্স, ব্যাগ, ছাতাসহ বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ দেওয়া প্রয়োজন। এজন্য বাজেটে বরাদ্দ থাকতে হবে।

অনেক স্কুলে কম্পিউটারগুলো ব্যবহার করা হয় না বলে এক সময় অকেজো হয়ে যায়। এগুলো চালু রাখা ও কম্পিউটার মেরামতের জন্য বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। স্মার্ট নাগরিক গড়তে হলে স্মার্ট পরিকল্পনা নিতে হবে, স্মার্ট বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। সকল বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব ও সায়েন্স ল্যাব স্থাপন ও ব্যবহারের জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে।

স্কুল লাইব্রেরিতে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে উদ্দীপনামূলক /কাউন্সিলিং বিষয়ক বই সরবরাহ করা এবং সকল স্কুলে মিউজিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য বাজেট প্রয়োজন।

বাজেট তৈরিতে তৃণমূল পর্যায়ের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। বর্তমান বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষাখাতে স্কুলভিত্তিক ও স্থানীয় চাহিদাভিত্তিক বাজেট প্রণয়ন করা প্রয়োজন ।

কারিকুলামে মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে জনবান্ধব করে তোলার লক্ষ্যে নতুন কারিকুলামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিক্ষানীতিকে যুগপোযোগী করা এবং কারিকুলাম বাস্তবায়নে জন্য যে অর্থ প্রয়োজন তার জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে।

বিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠদান পদ্ধতিতে যে বৈষম্য রয়েছে তা নিরসন করা এবং পাঠ্যবইয়ের মান উন্নয়ন করার জন্য বরাদ্দ প্রয়োজন। দুর্যোগকালে যাতে শিক্ষা চলমান থাকে সেজন্য পূর্বপরিকল্পনা করা এবং বাজেটে বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন ।

প্রতিটি ক্লাস্টারে একটি করে ডে-কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা করা এবং বিদ্যালয় পর্যায়ে ব্রেষ্ট ফিডিং কর্নার তৈরি করার জন্য বাজেট রাখা দরকার। আন্তঃবিদ্যালয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের টুর্নামেন্ট আয়োজনের ব্যবস্থা করার জন্য বাজেট রাখতে হবে।

বাংলাদেশ সরকার নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে এবং নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা নারীকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সহায়ক। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৫০.৪৭ % নারী। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে বাজেটে সম-বরাদ্দ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অধিক-বরাদ্দ দিতে হবে।

মাধ্যমিক স্কুলে বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত, দারিদ্রপীড়িত, প্রত্যন্ত এলাকার মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলে ভালো টয়লেট, স্যানিটারি প্যাড, সাবান, টিস্যু ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ সংক্রান্ত স্কুলভিত্তিক বাজেট রাখার জন্য জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে।

সকল স্কুলে ওয়াশব্লক স্থাপন করা, ওয়াশরকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং জরাজীর্ণ ওয়াশব্লক মেরামত করা দরকার। এজন্য বাজেটে যথাযথ অর্থসংস্থান প্রয়োজন ।

জেন্ডার সমতা সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি স্কুলে একজন নারী শিক্ষককে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া দরকার। বাল্যবিবাহের নেতিবাচক দিককারী সচেতন করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী সচেতনতাবিকাশী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাজেট বরাদ রাখা প্রয়োজন।

যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধার জন্য মেয়েদের স্কুলে আসতে দিতে অভিভাবকদের অনীহা থাকে। স্কুলে আসা-যাওয়ার জন্য সড়কপথে যানবাহন এবং নদী/হাওর পার হওয়ার জন্য ওয়াটার বাস/নৌকার বন্দোবস্ত করতে হবে। এজন্য এলাকাভিত্তিক ও স্কুলভিত্তিক বরাদ্দের ব্যবস্থা থাকা দরকার।

নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ বিষয়ে শিক্ষাক্রমে আরো বেশি জোর দেওয়া এবং ইভটিজিং ও স্কুল বেইজড ভায়োলেন্স বন্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন । 

কোভিডকালে শিক্ষায় ঘটে যাওয়া অন্যতম নেতিবাচক দিক ছিল মেডেনের বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রমে নিয়োজিত হওয়া। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনতে যথাযথ নীতিমালার আওতায় বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।

প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং তাদের লেখাপড়া, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে।

আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা দরকার। আদিবাসীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।

আদিবাসীদের মধ্যে যাদের মাতৃভাষায় স্ক্রিপ্ট আছে তাদের সকল জনগোষ্ঠীর জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষা চালু করা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও মনিটরিংয়ের জন্য বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence