‘শরীফার’ গল্পে পরিবর্তন নিয়ে যা বললেন কমিটি প্রধান

অধ্যাপক আবদুর রশীদ ও সপ্তম শ্রেণির বই
অধ্যাপক আবদুর রশীদ ও সপ্তম শ্রেণির বই  © ফাইল ছবি

সপ্তম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের শরীফ থেকে শরীফা হওয়ার গল্প নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে। বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটির প্রধান করা হয়েছে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুর রশীদকে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মুফতি মাওলানা কফিল উদ্দীন সরকার, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল হালিম এবং ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবদুর রশিদ।

জানতে চাইলে পর্যালোচনা কমিটির প্রধান অধ্যাপক আবদুর রশীদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের যে অংশ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোনো কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন মনে হলে সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে। এরপর মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’ 

শরীফ থেকে শরীফা হওয়ার গল্পে কী ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘কমিটিতে আমি একা না। আমাদের আরও সদস্য রয়েছেন। কাজেই গল্পে কতটুকু পরিবর্তন হবে কিংবা কী ধরনের পরিবর্তন হবে সে বিষয়ে এখনই বলা যাচ্ছে না। সবার পরামর্শের ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

বিষয়টি নিয়ে গত মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছিলেন, পাঠ্যবইয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠী সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক পাঠ অংশের উপস্থাপনায় কোনো বিতর্ক বা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়ে থাকলে এবং বিশেষজ্ঞরা মনে করলে কিছুটা পরিবর্তন আনা যেতে পারে। তবে বইয়ে শব্দটি ‘ট্রান্সজেন্ডার নয়’, ‘থার্ড জেন্ডার’ আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেটি আইনি স্বীকৃত, যাঁরা জৈবিক (বায়োলজিক্যাল) কারণে তৃতীয় লিঙ্গ বা সামগ্রিকভাবে সমাজে ‘হিজড়া’ নামে পরিচিত।

এর আগে গত শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে শরীফ থেকে শরীফা হওয়ার গল্পের অংশটুকু ছিড়ে প্রতিবাদ জানান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসফির খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব। এই ঘটনায় পরবর্তীতে তাকে চাকরি থেকে অব্যহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সেমিনারে আসিফ মাহতাব নতুন কারিকুলামের সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পাঠ্যবইটি নিয়ে আসেন। পরে আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পাঠ্যবই ‘শরীফ’ থেকে ‘শরীফা’ হওয়ার গল্প আছে। আমি বইটি বাজার থেকে কিনে নিয়ে এসেছি। এখানে লেখা আছে ছোটবেলা সবাই আমাকে ছেলে বলতো। কিন্তু আমি নিজেই একসময় বুঝলাম আমার শরীরটা ছেলের মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে। 

“সে (ছেলে) যদি মেয়ে হয় তাহলে তার বিয়ে হবে কার সঙ্গে? অবশ্যই ছেলের সঙ্গে। তার মানে এটা সমকামী, যা আমাদের দেশে অবৈধ। কিন্তু সেটাকে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে এই গল্পের মাধ্যমে। এটাতো স্কুলে ছেলেমেয়ের এক প্রকার ব্রেনওয়াশের মতো করা হচ্ছে, যেটা ইউরোপ-আমেরিকাতে করা হয়।”

এরপর সেমিনারে সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা এই বইটি বইয়ের দোকান থেকে ৮০ টাকা দিয়ে কিনে গল্পটির পাতা দুটি ছিঁড়বেন। পরে দোকানে আবার দিয়ে দিবেন। দিয়ে বলবেন, সেটি অর্ধেক দামে বিক্রি করতে। যাতে মানুষ সতর্ক হয়। 

জানা গেছে, ২০১৩ সালের নভেম্বরে সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়।

মূলত সপ্তম শ্রেণির এই পাঠ্যবইয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিবন্ধকতা থাকলে সমাজে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও সেখানে তাদের বেড়ে উঠা, সামাজিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত, শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ না থাকা ইত্যাদি উঠে এসেছে এই অধ্যায়ে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence