করোনার প্রভাবে সব শিক্ষাস্তরেই ঝরছে শিক্ষার্থী

করোনার প্রভাবে সব শিক্ষাস্তরেই ঝরছে শিক্ষার্থী
করোনার প্রভাবে সব শিক্ষাস্তরেই ঝরছে শিক্ষার্থী  © ফাইল ছবি

দেশীয় শিক্ষার প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সব স্তরে প্রতিবছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। মেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বাল্যবিয়ে, ছেলেদের কর্মে প্রবেশ এবং সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার কারণের সঙ্গে মহামারীর প্রভাব—মূলত শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার কারণ। এমন অবস্থায় দেশে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ারোধে অভিভাবকদের আরও সচেতনতা, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বৃত্তির পরিধি বৃদ্ধি এবং কর্মমুখী শিক্ষা বিস্তারের পরামর্শ দেশের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের।

কোভিড মহামারী দেশের যেসব খাতে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে শিক্ষা তার অন্যতম একটি খাত। সরকারের দেয়া তথ্য বলছে, বাংলাদেশে মহামারীর কারণে ঝরে পড়েছে প্রায় ১৭ লাখ ৬২ হাজার শিক্ষার্থী। দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মোট ২ লাখ ৪৯ হাজার ১৫৯ জন শিক্ষার্থী তাদের পড়াশোনার পাঠ গুছিয়ে নিয়েছেন বা উচ্চশিক্ষা থেকে ঝরে পড়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যুরো অব এডুকেশনাল ইনফরমেশন অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকস (ব্যানবেইস) ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, একইসময়ের মধ্যে দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা-স্তরে ঝরে পড়েছে ৬২ হাজার ১০৪ জন এবং প্রাথমিকে এ সংখ্যা ১ লাখ ৪৫ হাজার ৭১৯ জন।

প্রসঙ্গত, কোভিড মহামারীর কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আংশিকভাবে পুনরায় চালু করা হয়। মহামারীর কারণে বাংলাদেশে ৫৪৩ দিনের জন্য স্কুল বন্ধ ছিল। যা বিশ্বে দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি।

আরও পড়ুুন: বড় সংকটে দেশের শিক্ষা খাত

ইউজিসির প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, ২০২০ সালে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ছিল ৪৬ লাখ ৯০ হাজার ৮৭৬ জন এবং ২০২১ সালে সেটা কমে দাঁড়ায় ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ৭১৭ জনে। অন্যদিকে ব্যানবেইসের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ে ৬২ হাজার ১০৪ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৫২ হাজার ৮৩৮ জন ছাত্রী।

২০২১ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক শুমারি অনুযায়ী, ২০২০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল ২ কোটি ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৬৯১ জন এবং পরের বছর সংখ্যাটি এসে দাঁড়ায় ২ কোটি ১ লাখ ৯৭২ জনে। পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়া ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭১৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ১০ লাখ ছাত্রী। ২০২২ সালের আগস্টে প্রকাশিত মাউশির প্রতিবেদন অনুসারে, অন্তত ৪৭ হাজার ৪১৪ জন ছাত্রী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে এবং ২০২১ সালে ৭৭ হাজার ৭০৬ শিশুকে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করতে হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে পাঠদানের বাইরে থাকার ফলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে—এটি আগে থেকেই আমরা আশঙ্কা করছিলাম এবং এখন তাই হচ্ছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার বাইরে থাকার ফলে যে শূন্যতা তা পূরণ করার জন্য যে আত্মবিশ্বাস দরকার তা তারা হারিয়ে ফেলেছে; আমাদের এখন এ আত্মবিশ্বাস পূরণে কাজ করতে হবে। আর শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার পেছনে যেসব বিষয়কে দায়ী করা হয়েছে তা যৌক্তিক। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার শিক্ষার্থীরা যখন পূর্ণ বা আংশিক কর্মে গিয়ে দেখলো তাদের পাঠ্যক্রম আর বাস্তব অভিজ্ঞতার মাঝে বড় ফারাক কাজ করছে তখন তারাও আর ফেরার চিন্তা করেনি।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত বিভিন্ন কোর্সে বা প্রোগাম ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও সরকারি কলেজগুলোতেও বর্তমানে নিয়মিত পাঠদান বা ক্লাস পরীক্ষা হয় না। তাহলে শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন বা শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ করা সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষা আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিত বদলে কাজ করতে পারছে না। সেজন্য আমাদের সামগ্রিক শিক্ষা নিয়ে আরও কাজ করতে হবে এবং ঝরে পড়া রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে—যুক্ত করেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই অধ্যাপক।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence