রোগমুক্তি ও স্থায়ী সুস্থতায় ৫ মৌসুমী ফল, খেলে কী হয়?

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

বাংলাদেশে এখনো বাজারে মিলছে গ্রীষ্মের রসালো সব মৌসুমী ফল। আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, তরমুজ, জামরুল, লটকন, গাব, আতাফল, আনারসসহ নানা রকম দেশি ফল দখল করে আছে বাজার। স্বাদ ও গন্ধে অনন্য এই ফলগুলো শুধু জিভ তৃপ্তই করে না, বরং শরীরকেও দেয় প্রয়োজনীয় পুষ্টি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মৌসুমী ফল রাখলে বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, কমবে ক্লান্তি আর সুস্থ থাকবে শরীর।

প্রাকৃতিক প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে মৌসুমী ফল
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে ক্লান্তি কাটাতে এসব রসালো ফলের জুড়ি নেই। কেবল তৃপ্তিই নয়, মৌসুমী ফলে থাকে প্রাকৃতিকভাবে রোগ-বালাই প্রতিরোধ করার ক্ষমতা। এসব ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, মিনারেল ও ফাইটোকেমিক্যালস, যা ভাইরাসজনিত জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর।

কেমিক্যাল মুক্ত, হজমে সহায়ক
দেশি মৌসুমী ফল সাধারণত গাছেই পাকে, ফলে কৃত্রিমভাবে পাকানোর জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। এগুলো সতেজ এবং স্বাদে-ঘ্রাণে থাকে প্রাকৃতিক। ফলে হজমে সমস্যা হয় না, বরং হজম প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে।

পুষ্টি বেশি, খরচ কম
বিদেশি ফলের তুলনায় দেশি মৌসুমী ফলের দাম অনেক কম। এক কেজি আমলকি খেলেই পাওয়া যায় কমলার চেয়ে ২০ গুণ বেশি ভিটামিন সি। একইভাবে আম, কাঁঠাল, জাম ইত্যাদিতে থাকে বহু পুষ্টিগুণ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং দীর্ঘস্থায়ী সুস্থতা নিশ্চিত করে।

আরও পড়ুন: যেসব কারণে রোজ সকালে ডিম খাওয়া উচিত

কোন ফল খেলে কী উপকার পাবেন

আম
এই ফলটিতে রয়েছে ক্যারোটিনয়েড, যা কোলন ও ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। আমে থাকা পটাশিয়াম ও আঁশ উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় ডায়াবেটিস রোগীরাও পরিমাণমতো আম খেতে পারেন।

জাম
কালো জামে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন ও পটাশিয়াম, যা হৃদরোগ ও ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এর বিচিও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উপকারী। জামে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের টিস্যুকে রক্ষা করে।

কাঁঠাল
জাতীয় ফল কাঁঠাল শুধু সুস্বাদুই নয়, এতে আছে প্রোটিন, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। কাঁঠালের ফাইটোকেমিক্যালস ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে এবং কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

লিচু
লিচুতে থাকে ক্যালসিয়াম, আয়রন, কপার, ফোলেট ও ভিটামিন সি। এটি রক্ত তৈরিতে সহায়ক এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। এছাড়া এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধে কাজ করে।

আনারস

আনারসে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও এনজাইম ব্রোমেলিন, যা হজমে সহায়তা করে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও সর্দি-কাশি প্রতিহত করতে সাহায্য করে। ব্রোমেলিন প্রদাহ কমায় ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এছাড়াও আনারস ত্বককে উজ্জ্বল ও সতেজ করতেও সাহায্য করে।

প্রতিদিন কতটুকু ফল খাবেন
বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া উচিত। এটি হতে পারে একাধিক মৌসুমী ফলের মিশ্রণ। গ্রীষ্মকালের এসব ফল শুধু শরীরকে ঠান্ডা রাখে না, বরং শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও জোগায়।

দেশি মৌসুমী ফল শুধু সস্তা নয়, পুষ্টিগুণেও বিদেশি ফলকে হার মানায়। তাই মৌসুমে ফলের বাজার থেকে ঘরে আনুন আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু খাবেন মনভরে, পুষ্টি পাবেন পর্যাপ্ত। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন খান মৌসুমী ফল।


সর্বশেষ সংবাদ