ডায়াবেটিস থেকে হৃদরোগ: নানা সমস্যায় উপকারী জাম
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫, ০৫:৩৮ PM , আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫, ১১:৪২ AM

চলছে মধুমাস। আম, কাঁঠাল, লিচুর মতোই বাজারে এখন রসালো ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এক ফল হচ্ছে জাম। স্বাদে টক-মিষ্টি এই মৌসুমি ফল শুধু জিভেই তৃপ্তি আনে না, শরীরকেও দেয় বহু উপকার। বহু যুগ ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়ে আসছে জাম এবং এর বীজ, পাতা ও ছাল।
চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের মতে, জামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজ ও ফাইবার। এসব উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো থেকে শুরু করে ত্বক, হজম, হার্ট ও চোখের যত্নেও সহায়ক।
চলুন দেখে নেওয়া যাক, জাম খেলে কী কী উপকার পাওয়া যায়—
মস্তিষ্ক ও মানসিক সতেজতা
জামে থাকা গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ও ফ্রুকটোজ শরীর ও মনকে করে চাঙা। ক্লান্তি কাটাতে এক গ্লাস জামের শরবত হতে পারে দারুণ সহায়ক। স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও জামের কার্যকারিতা রয়েছে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
জাম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত জাম খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশেষ করে খালি পেটে এক চা চামচ জামের বীচির গুঁড়া খেলে উপকার মেলে।
মুখ ও দাঁতের যত্নে
জামের পাতা ও ফল মুখের দুর্গন্ধ দূর করে, দাঁত ও মাড়ি শক্ত করে এবং দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে। আয়ুর্বেদে জামের পাতাকে ব্যবহার করা হয় মুখগহ্বরের নানা সমস্যার চিকিৎসায়।
হজমে সহায়ক
জামে রয়েছে ফাইবার ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা হজমশক্তি বাড়ায়। কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া ও বদহজম দূর করতেও জাম কার্যকর।
রক্তশূন্যতা দূর করে
আয়রনসমৃদ্ধ জাম রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে, যা শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পরিবহন নিশ্চিত করে।
হার্ট ভালো রাখে
জামের উচ্চ পটাশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদ্রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এতে স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
জামের ক্যালোরি কম, আবার রয়েছে উচ্চমাত্রায় ফাইবার। ফলে এটি খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
জামে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান শরীরকে রোগ থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত জাম খেলে সর্দি-কাশি, ইনফেকশন এমনকি ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক হতে পারে।
ত্বকের যত্নে জাম
জামে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের জন্য দারুণ উপকারী। এটি ত্বককে রোদে পোড়া, ব্রণ ও অ্যালার্জির সমস্যা থেকে রক্ষা করে এবং ত্বককে করে উজ্জ্বল ও মসৃণ।
চোখের যত্নেও উপকারী
বৃদ্ধ বয়সে চোখের স্নায়ু ও দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে সাহায্য করে জাম। এটি ইনফেকশন ও রাতকানা প্রতিরোধেও সহায়ক।
আরও পড়ুন: কিডনিতে পাথর কেন হয়, যেভাবে করবেন প্রতিরোধকিডনিতে পাথর কেন হয়, যেভাবে করবেন প্রতিরোধ
যেসব ক্ষেত্রে জাম খাওয়া এড়িয়ে চলবেন
খালিপেটে জাম খাওয়া ঠিক নয়, কারণ এতে অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে।
কিডনি রোগীরা জাম খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
অধাপাকা জাম খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে, তাই শুধুমাত্র পাকা জাম খাওয়াই নিরাপদ।
গরমকালের এই মৌসুমি রত্ন জাম শুধু খেতে সুস্বাদু নয়, বরং এর রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। তবে নিয়ম মেনে ও পরিমাণ মতো খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। তাই আজই যুক্ত করুন জাম আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায়।