শাহরুখ খানের ব্লকবাস্টার ছবি জাওয়ান রিভিউয়ে দর্শকদের ‘‘বাধভাঙা উচ্ছ্বাস ’’

তারান আদর্শ এবং সুমিত কাদেল এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট ।
তারান আদর্শ এবং সুমিত কাদেল এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্ট ।   © সংগৃহীত

মুক্তির আগেই ৭ দিনে ১০ লাখের উপর টিকেট বিক্রি করে আগেই রেকর্ড করেছে বহুল আলোচিত শাহরুখ খানের ছবি জাওয়ান। আজ মুক্তির প্রথম দিনেই দর্শকদের বাধভাঙা উচ্ছ্বাসের খবর দিয়েছে ভারতের বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যম। অনুরাগীরা উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধমেও।

এছাড়াও ভারতীয় চলচ্চিত্রের ক্রিটিকসরাও এ ছবিকে ব্লক বাস্টার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম তারান আদর্শ, সুমিত কাদেল।  

হিন্দুস্থান টাইমস জাওয়ান রিভিউ সম্পর্কে লিখেছে , কৃষক আত্মহত্যা থেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা বা সমাজের অধঃপতন সবটাই, বলা ভালো সমাজের, সরকারের প্রতিটা সমস্যাকে এই ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে। সরকার বড় বড় ব্যবসায়ীদের সাহায্য করলেও, তাঁদের ঋণ মকুব করলেও বা তাঁরা ঋণ নিয়ে বিদেশ পালিয়ে গেলেও কিচ্ছুটি করতে পারে না অনেক সময়। এদিকে কৃষকদের সুদ দিতে দেরি হলে তাঁদের উপর ব্যাংক কর্মীরা অকথ্য অত্যাচার চালায়। কিন্তু এই চলতে থাকা অবক্ষয় আটকাবে কে? কেই বা প্রতিরোধ করবে অন্যায়ের? আর কীভাবে?

বহু ছোটবেলায় আমরা রবিন হুডের গল্প পড়ে এসেছি। সেটার আঙ্গিকেই এই ছবিতেও ভয় দেখিয়ে চলে অন্যায়কে আটকানোর প্রচেষ্টা। কিন্তু আদতে এই মুখোশধারী কে? কোথা থেকেই বা তাঁর এই ৬ সঙ্গীকে পেলেন? কীই বা তাঁদের ইতিহাস? সেটা বলে দিলে তো সিনেমা দেখতে যাওয়া অর্থহীন। এই উত্তর পেতে চাইলে হলে যেতেই হবে।

তবে এটুকু বলতে পারি গোটা ছবি জুড়ে শাহরুখের বিভিন্ন শেড দেখতে পাবেন। সে কখনও জেলার, কখনও জওয়ান, কখনও সাধারণ মানুষ আবার কখনও...। এক কথায় বলতে গেলে পাঠানের থেকেও জওয়ান ছবিতে বেশি নজর কেড়েছেন শাহরুখ।

রুদ্ধশ্বাস পৌনে তিন ঘণ্টা। এই পৌনে তিন ঘণ্টায় পর্দা থেকে এতটুকু চোখ ফেরানো যায়নি। মাঝের পনের মিনিটের ব্রেক অসহ্য মনে হয়েছে। এতটাই টানটান স্ক্রিপ্ট। এমনই গল্পের বাঁধুনি। আর চমক? ওরে বাবা! এটার জন্য বোধহয় ছবিটা অন্তত দুবার দেখা যায়।

এবার আসি অভিনয়ে। শাহরুখকে নিয়ে নতুন করে কীই বা আর বলি। তাঁর ফার্স্ট লুক থেকে শেষের নাচের দৃশ্য পর্যন্ত হাঁ করে তাকিয়ে থাকা যায়। এই বয়সে এসেও মানুষটা যাঁর সঙ্গেই স্ক্রিন ভাগ করুন না কেন তাঁর সঙ্গেই পর্দাতে আগুন ঝরান। নয়নতারার সঙ্গে এই প্রথম স্ক্রিন ভাগ করলেন কিং খান কিন্তু ভীষণ ভালো লাগল তাঁদের জুটি। নয়নতারা আলাদা ভাবে তাঁর ক্যারিশমা এবং অভিনয়ে নজর কেড়েছেন। দীপিকার রোল ছোট, কিন্তু জরুরি। কী রোল, সেটা দেখলে রীতিমত ছিটকে যেতে পারেন। মানে এমন টুইস্ট অনেকেই ভাবেননি।

অন্যান্য চরিত্রে সানিয়া মালহোত্রা, সঞ্জিতা ভট্টাচার্য, গিরিজা ওক, প্রমুখ বেশ ভালো। বরং সবার তুলনায় খলনায়ক হিসেবে বিজয় সেতুপতি একটু কম কম যেন কোথাও একটা।

এই ছবির অন্যতম ইউএসপি এর মেকআপ এবং মারকাটারি অ্যাকশন দৃশ্য। ওহ মাই গড! একটার পর একটা অ্যাকশন দৃশ্য দেখছি আর ভাবছি কী দেখছি। এখনও ঘোর কাটেনি। অ্যাকশন, মেকআপ বা স্ক্রিপ্টের মতো দুর্দান্ত হল সিনেমাটোগ্রাফি। প্রতিটা দৃশ্য এত নিখুঁত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে যা বাহবা পাওয়ার যোগ্য। প্রথমদিকে গোটা গায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে মারপিট হোক বা জওয়ান রূপে শাহরুখের অ্যাকশন দৃশ্য কিংবা চেজিং সিকোয়েন্স, সবটা মিলিয়ে একটা পাওয়ার প্যাক প্যাকেজ এই ছবি।
অনেকেই ভেবেছিলেন এই ছবির গান হয়তো আপ টু দ্য মার্ক নয়। হয়তো খানিকটা সত্যি, কিন্তু গোটা ছবির সঙ্গে গানগুলো কিন্তু খাপে খাপে মিলে গেছে। জোর করে ঢোকানো হয়েছে বা এমন কিছু কিন্তু বিন্দুমাত্র মনে হয়নি।

সবশেষে রিভিউ বলুন বা শাহরুখের ছবির সংলাপের রেশ, সেটা ধরেই বলি, 'ইটস এ ওয়েক আপ কল। ও ধমকি দে কর নিন্দ সে জাগা রহে হে।' তাই হাতের যা কাজ আছে সব ফেলে শাহরুখ ম্যাজিকে ভিজতে চাইলে এই উইকেন্ডে জওয়ানের একটা শো হয়ে যাক? এটুকু বলতে পারি বিনোদন তো পাবেনই, সঙ্গে শিখবেন আরও অনেক বেশি কিছু। আমাদের মনের সুপ্ত রাগ, কথা ছবির সংলাপ হয়ে বেরিয়ে আসবে কোথাও একটা। অ্যান্ড ইয়েস, কিং খানের জন্য এটা। 'অল ওয়ার্ক অ্যান্ড নো জয় মেকস হ্যান্ডসাম এ ডাল বয়', চার বছর পর পর ফিরে যদি এই কথা বলেন তা হাজারো বার মেনে নিতে রাজি।  

এখন জাওয়ান কি কি রেকর্ড করে তা দেখার অপেক্ষায় ভক্তরা। 


সর্বশেষ সংবাদ