পাবিপ্রবি প্রেসক্লাবের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সেমিনার ও স্মারক উন্মোচন

সেমিনার
সেমিনার  © টিডিসি ফটো

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) প্রেসক্লাবের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আনন্দ র‍্যালী, সেমিনার ও স্মারক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে এক বর্ণাঢ্য আনন্দ র‍্যালির মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের শুরু হয়।

আনন্দ র‍্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কনভেনশন হলে গিয়ে শেষ হয়। পরবর্তীতে সকাল ১১ টায়  অনুষ্ঠিত হয় “চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনার।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস. এম. আব্দুল আওয়াল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. শামীম আহমেদ, নওগা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো: হাছানাত আলী। 

সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক, বিশিষ্ট কবি ও গবেষক অধ্যাপক আব্দুল হাই শিকদার। এ ছাড়া বিশেষ আলোচক হিসেবে অংশ নেন দৈনিক যুগান্তর-এর সহ-সম্পাদক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক, দৈনিক ইত্তেফাক-এর রাজনীতি ও নির্বাচন বিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সাঈদুর রহমান।

আরও পড়ুন: ঐকমত্য কমিশন নিষ্কৃতি পেতেই কিছু সুপারিশ দিয়ে কাজ শেষ করেছে: সালাহউদ্দিন

বক্তব্যে অধ্যাপক আব্দুল হাই শিকদার বলেন, ‘সংবাদ হলো মানুষের খবর ও চিন্তার কালেকশন। আর পত্রিকা হলো সমাজের আয়না—সমাজের প্রকৃত দর্পণ। শাসক সমাজ সংবাদ দেখলে ভীত হয়, কারণ সংবাদপত্র সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ। এই চতুর্থ স্তম্ভটি বাংলাদেশে মারাত্মকভাবে অবমানিত হয়েছে।

সংবাদপত্র হলো সাধারণ মানুষের স্কুল। পৃথিবীতে অনেক প্রাণী আছে, যাদের কোনো স্কুল নেই—তারা প্রকৃতির পাঠশালা থেকে শিক্ষা নেয়। তেমনি সংবাদপত্রই হলো মানুষের প্রকৃত পাঠশালা, যেখানে সমাজ প্রতিনিয়ত শেখে ও নিজেকে গড়ে তোলে।

জালালউদ্দিন রুমি, যিনি কবিদেরও কবি, তিনি বলেছেন—“সেই বুদ্ধিজীবী নিকৃষ্ট, যিনি রাজদরবারে যাতায়াত করেন, আর সেই রাজাই উত্তম, যিনি জ্ঞানীদের সঙ্গে মেলামেশা করেন।”

জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা আকবর কবির একবার বলেছিলেন, “এই সাংবাদিক সম্প্রদায় পুরোপুরি বিবেকবর্জিত, চরিত্রহীন ও ক্রয়যোগ্য।” কিন্তু আমি বলব, সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা যেখানে সব জানতে হয়, সব বুঝতে হয়। সাংবাদিকের কাজ সত্য বলা—সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলা।

দুঃখজনকভাবে, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রায় ৭০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, দুই হাজারের বেশি সাংবাদিকের হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র সাংবাদিক আবুল হাসানের মতো মানুষকেও তাঁর নিজের চেম্বারে নির্যাতন করা হয়েছে।

খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাভোগ করতে হয়েছে। আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চারটি মামলা দেওয়া হয়েছে—প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা, রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও অন্যান্য অভিযোগে। অথচ আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। এই রাষ্ট্র গঠনে আমারও ভূমিকা আছে। একজন মুক্তিযোদ্ধাই পারে আরেকজন মুক্তিযোদ্ধার বিচার করতে।

বুদ্ধি যখন প্রবল হয়ে ওঠে, লালসা তখন দুর্বল হয়। কিন্তু বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা এখনো অর্জিত হয়নি। শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিব—উভয়ের শাসনকালই ছিল বিভীষিকাময়, স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় ভরা সময়।

আমাদের কর্তব্য হলো—দেশকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সঠিক পথে এগিয়ে নেওয়া। সেই পথ হলো গণতান্ত্রিক, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। যদি আমরা সে পথে অগ্রসর হই, তাহলে দেশের আকাশ থেকে অন্ধকার দূর হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।”

প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. এস. এম. আব্দুল আওয়াল বলেন, “নলেজ ইজ পাওয়ার” আমি দৃঢ়ভাবে এতে বিশ্বাস করি। আপনি যত বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন, ততই আপনি নিজেকে, আপনার সমাজকে এবং আপনার সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে পারবেন।

আমাদের মধ্যে দল, মত বা চিন্তার ভিন্নতা থাকতে পারে— এটা স্বাভাবিক। কিন্তু একটি বিষয়ে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, আর তা হলো আমাদের দেশের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।

মতের পার্থক্য থাকবে, পথের ভিন্নতা থাকবে— কিন্তু দেশের প্রশ্নে, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে আমরা পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি সুষ্ঠু ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যেতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। একসময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে, আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে, রক্তাক্ত করা হয়েছে। আমরা সেই বাংলাদেশ, সেই বিশ্ববিদ্যালয় আর দেখতে চাই না।

আমরা যে দলেই থাকি, যে মতাদর্শই অনুসরণ করি না কেন— আমাদের লক্ষ্য একটাই হওয়া উচিত: একটি সুন্দর, নিরাপদ ও প্রগতিশীল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা।

আরও একটি কথা বলতে চাই— আমাদের সাংবাদিক ভাই-বোনেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যার খবর তুলে ধরেন, এটা তাদের দায়িত্ব এবং সেটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে একই সঙ্গে আমি অনুরোধ করব, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিবাচক দিক, সাফল্য ও অর্জনগুলোকেও সামনে নিয়ে আসুন।”

আরও পড়ুন: সচিবালয়ে কর্মরতদের ‘সচিবালয় ভাতা’ প্রদানের প্রস্তাব

বিশেষ অতিথিরা তাঁদের বক্তব্যে জুলাই অভ্যুত্থানে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের সাহসী ভূমিকা নিয়ে নানা আলোচনাসহ সাংবাদিকতায় নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানান।

সেমিনারের শেষপর্যায়ে ‘জুলাই আন্দোলনের স্মৃতিকথা’ নিয়ে বিপ্লবের দিনলিপি শিরোনামে একটি স্মারকগ্রন্থ উন্মোচন করা হয়, যা প্রেসক্লাবের সদস্যরা যৌথভাবে প্রকাশ করেন। অতিথিরা স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনা প্রশংসা করেন এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণাধর্মী সাংবাদিকতা চর্চায় আরও উৎসাহী হওয়ার পরামর্শ দেন।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ডিন,চেয়ারম্যান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী,বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য, প্রেসক্লাবের সদস্য ও স্থানীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ