সচিবালয়ে কর্মরতদের ‘সচিবালয় ভাতা’ প্রদানের প্রস্তাব
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:০০ PM , আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:১৯ PM
সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতন কাঠামো তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন/সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় করছে পে কমিশন। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় করতে যান বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। এ সময় সচিবালয়ে কর্মরতদের ‘সচিবালয় ভাতা’ প্রদানসহ বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন তারা।
অ্যাসোসিয়েশনের লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে ৮ম পে-স্কেল জারির পর ১০ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি বিলসহ দ্রব্য/সেবার মূল্য কয়েক দফা বৃদ্ধি পেয়েছে। সে তুলনায় সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের কোনো আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়নি। বর্তমান বাজার মূল্যের সাথে সমন্বয় করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের মূল্য নির্ধারণ, পরিবহন ও বিক্রয় করছে। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের বেতন সমন্বয় করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে দুটি পে-স্কেলের সমমর্যাদাসম্পন্ন অনতিবিলম্বে নতুন পে-স্কেল জারি করা প্রয়োজন।
প্রস্তাবনায় অধিক বৈষম্য দূরীকণের লক্ষ্যে বিদ্যমান ২০টি বেতন গ্রেডের পরিবর্তে ১০টি গ্রেডে বেতন পুননির্ধারণ এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাতের ব্যবধান কমিয়ে আনতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া সব কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য পদোন্নতি ব্যতিরেকে একই পদে চাকরির ৪, ৮, ১২ ও ১৫ বছর পূর্তিতে উচ্চতর বেতন গ্রেড প্রদানের ব্যবস্থা করতে প্রস্তাব করা হয়েছে। পেনশনের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশের পরিবর্তে ১০০ শতাংশ নির্ধারণ, গ্র্যাচুইটি ২৩০ টাকার পরিবর্তে ৪০০ টাকা নির্ধারণ, বিগত সরকারের আমলে পেনশন ৫০ শতাংশ সমার্পণের নিয়ম বাতিল করে ১০০ শতাংশ পেনশন উত্তোলনের সুযোগ পুনর্বহাল, চাকুরি থেকে অবসরের (পেনশনে) সময় পেনশনের মূল বেতন ১০০ শতাংশ ঠিক রেখে আনুতোষিক এবং অবসরের সময়ে জমাকৃত ছুটি হতে ১২ মাস পিআরএল ছুটি বাদ দিয়ে বিদ্যমান ১৮ মাসের ছুটির নগদায়ন প্রথার স্থলে অবশিষ্ট সমুদয় ছুটি নগদায়ন (লাম্পগ্রান্ট) প্রদানেরও প্রস্তাব করেছেন নেতারা।
অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, মাসিক নীট পেনশনপ্রাপ্ত অবসরভোগী ও আজীবন পারিবারিক পেনশনভোগী ৬৫ বছর ঊর্ধ্ব পেনশনভোগীর নীট পেনশনের পরিমাণ ৫০ শতাংশের পরিবর্তে ৮০ শতাংশ অন্যান্য পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে নীট পেনশনের পরিমাণ ৪০ শতাংশ এর পরিবর্তে ৭০ শতাংশ নির্ধারণ, বিদ্যমান গৃহনির্মাণ ঋণ ৭৫ লাখ টাকার পরিবর্তে ব্যাংকের ন্যায় ১ কোটি ২৫ লাখ নির্ধারণ, চক্রবৃদ্ধি সুদের পরিবর্তে সরল সুদ নির্ধারণ, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চালুকৃত গৃহনির্মাণ ঋণ এর মাসিক কিস্তি হিসেবে শুধুমাত্র বাড়িভাড়া ভাতা এর সমপরিমাণ অর্থ কর্তন এবং অবশিষ্ট অর্থ পেনশন থেকে সমন্বয়ের ব্যবস্থাকরণ করতে হবে।
আরও পড়ুন: গ্রেড কমানো নিয়ে একমত পে কমিশন
‘সচিবালয় ভাতা’ নামে বিশেষ ভাতা চালুর প্রস্তাব করে অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, দুদক, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, কারা কর্তৃপক্ষ, বিজিবি, পুলিশ, এনএসআই, কোস্টগার্ড, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা, র্যাব, ডিজিএফআই, পিজিআরসহ প্রায় ৮ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী রেশনের পাশাপাশি ৩০-৭০ শতাংশ হারে ঝুঁকিভাতা/ বিশেষ ভাতা পাচ্ছে। পক্ষান্তরে, সচিবালয় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র এবং সকল নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া সত্ত্বেও এখানে যারা কাজ করেন তাদেরকে কোনো ভাতা দেওয়া হয় না। সে কারণে বাংলাদেশ সচিবালয়ের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের জন্য ‘সচিবালয় ভাতা’ নামে বিশেষ ভাতা চালু করা প্রয়োজন।
এছাড়া অভোগকৃত নৈমিত্তিক ছুটির বিপরীতে পঞ্জিকাবর্ষ শেষে কর্মচারীর স্কেল অনুযায়ী নগদায়নের ব্যবস্থা করা; চিকিৎসা ও শিক্ষা ভাতার হার বাড়ানোসহ অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। পে কমিশনের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের আহবায়ক মো. আবদুল খালেক ও সদস্য সচিব মো. সফিউদ্দিনের নেতৃত্বে সংগঠনের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন।