পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী-বিএনপিপন্থী দুই অধ্যাপকের হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি ও মগ-পিরিচ ছুঁড়ে মারার অভিযোগ

দুই শিক্ষক
দুই শিক্ষক  © টিডিসি সম্পাদিত

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) দুই শিক্ষকের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাদিকুর রহমান ও অধ্যাপক ড. ফারুক হাসানের মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। পরে এই ঘটনার পর উভয়জন একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন; একজন মগ-পিরিচ ছুঁড়ে মারারও অভিযোগ করেছেন। অপরজন অভিযোগ তুলেছেন, তার সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে।

অধ্যাপক ড. সাদেকুর রহমান অভিযোগ করে জানান, বিভাগের পিয়নের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে অধ্যাপক ফারুক হাসান তাকে দেখা করতে বলেছেন। পরে তিনি অধ্যাপক ফারুক হাসানের চেম্বারে গেলে সেখানে উপস্থিত না থাকায় বেরিয়ে আসার সময় তার দেখা মেলে। পরে ফারুক হাসান তাকে নিয়ে পুনরায় তার চেম্বারে প্রবেশ করেন।

অধ্যাপক সাদিকুর রহমান বলেন, অধ্যাপক ফারুক হাসানের চেম্বারের চেয়ারে বসতেই রিমান্ডের মতো জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয় আমাকে। মিটিং কেন ডেকেছি, তাকে কেন ডাকিনি—এসব নিয়ে তিনি আক্রমনাত্মকভাবে প্রশ্ন করতে থাকেন। 

‌‌‘‘তখন আমি রুম থেকে বের হতে চাইলে তিনি ছিটকিনি লাগিয়ে দেন এবং আমার ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তির সময় আমার হাত কেটে যায় ও ফোন ভেঙে যায়।”

আরও পড়ুন: কুয়েটে ৫ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার, ৩২ জনকে সতর্ক

তিনি আরও বলেন, চেম্বারে তখন আরও দুই শিক্ষক—অতিয়া শাহীন ও রায়হান সজিব উপস্থিত ছিলেন। আমি একা, অধ্যাপক ফারুক হাসানসহ তারা তিনজন। আতিয়া সরে যেতে অনুরোধ করলেও তিনি সহযোগিতা করেননি। দরজার ছিটকিনি খুলে মুখ বের করে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করি। পাশের পরীক্ষার হল থেকে অনেকে ছুটে আসে।

অন্যদিকে অধ্যাপক ড. ফারুক হাসান বলেন, আমরা তিনজন শিক্ষক রুমে বসে ছিলাম। আমাদের বাদ দিয়ে বিভাগীয় মিটিং হয়েছে। অধ্যাপক সাদিকুর রহমান রুমে ঢুকে এমন ভঙ্গিতে কথা বলেন যেন আমাকে মারবেন। তিনি ফোন হাতে ছিলেন, রেকর্ডিং করছিলেন কিনা জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে টেবিলের মগ-পিরিচ ছুঁড়ে মারেন। আমার টেবিলের কাচ ভেঙে যায়, আমি অল্পের জন্য রক্ষা পাই।

তিনি আরও বলেন, আমি ডিপার্টমেন্টের মান সম্মানের কথা ভেবে বিষয়টি বাড়াইনি। উনার হাত কীভাবে কেটেছে জানি না, তবে ধস্তাধস্তিতে আমার হাতেও ব্যথা পেয়েছি।

জানা গেছে, অধ্যাপক ড. ফারুক হাসান বিএনপিপন্থী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) এর হাবিপ্রবি শাখার সাধারণ সম্পাদক। তিনি বিএনসিসির প্রফেসর আন্ডার অফিসার (পিইউও) এবং কৃষক সেবার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।  

অন্যদিকে, অধ্যাপক ড. সাদেকুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং বিগত আওয়ামী লীগ আমলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়র আওয়ামীপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত।

আরও পড়ুন: ঢাকা কলেজের ১৮৪ বছরের ঐতিহ্য কি সংকটের মুখে?

এ বিষয়ে কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান বাহাদুর বলেন, আজ দুপুর আড়াইটার দিকে ঘটনা শুনেছি। এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অভিযোগের কন্টেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপক ড. ফারুক হাসানের বিরুদ্ধে পূর্বেও অশালীন ও অশোভন আচরণের অভিযোগ রয়েছে। ২০০৫ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্রদের সামনে অশালীন বক্তব্য প্রদান করেন, যার ফলে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বিভাগের স্টাফরা বাথরুমে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।

এছাড়াও ছাত্রদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ফেল করানোর হুমকি, সহকর্মীদের প্রতি অবমাননাকর আচরণ এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাদিকুর রহমানের ‘দাড়ি ছিঁড়ে ফেলা’ ও ‘প্যান্ট খুলে ফেলার’ হুমকি এবং সিনিয়র শিক্ষক ড. সাইফুল হুদাকে খুনের হুমকি দিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার ঘটনাও নথিভুক্ত রয়েছে বলে জানা গেছে।


সর্বশেষ সংবাদ