বুটেক্সে হল থেকে মোবাইল চুরি, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

শহীদ আজিজ হল
শহীদ আজিজ হল  © সংগৃহীত

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) শহীদ আজিজ হল থেকে মোবাইল ফোন চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। গত ১৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়টির শহীদ আজিজ হলের ২১৩ নম্বর রুম থেকে এ চুরির ঘটনা ঘটে। 

হল সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন সকালে এক শিক্ষার্থী ক্লাস শেষে হলে ফিরে বিশ্রাম নিচ্ছিলো, কিছুক্ষণ পর রুমমেটের ডাকে জেগে উঠে দেখে নিজের মোবাইল ফোনটি নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে অন্য একটি ফোন থেকে কল দিলে ফোন বন্ধ পায়। ঘটনাটি জানাজানি হলে দ্রুত প্রভোস্ট কক্ষে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাওয়া হয়, কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলায় মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। পরবর্তীতে প্রভোস্ট স্যারের সহযোগিতায় ফুটেজ দেখতে সক্ষম হলেও জানা যায়, ৯-১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কোনো রেকর্ডই সংরক্ষিত নেই। উল্লেখ্য ঐদিন উক্ত সময়ে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী (নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত) ওয়াশরুম পরিষ্কার করেন। পরবর্তীতে উনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে উনি অস্বীকার করেন ফোন চুরির বিষয়টি।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অপরাধী ধরা পড়েনি এবং চুরি যাওয়া ফোন উদ্ধার হয়নি। শিক্ষার্থীদের নিজ কক্ষ থেকে ফোন হারিয়ে গেছে, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হলের মতো একটি সংবেদনশীল জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না হলে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বাড়বে, যা তাদের পড়াশোনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না দিতে পারায় এমনটি ঘটছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

ফোন হারানো ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রান্ত রায় বলেন, সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো ফোনটি আমার পরিবার অনেক কষ্ট করে কিনে দিয়েছিলো। মধ্যবিত্ত পরিবারে প্রতিটি খরচই যেখানে ভাবনা-সাপেক্ষ সেখানে এটি শুধু প্রয়োজন নয় বরং পরিবারের ত্যাগের প্রতীক। হলের রুম যা আমি সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা মনে করতাম, সেখানে এভাবে চুরির ঘটনা আর হল প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা আমাকে চরমভাবে হতাশ করেছে। এমন নিরাপত্তাহীন পরিবেশে একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা কঠিন। যদি এই উদাসীনতা চলতেই থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে হলে থাকা নিয়েই শঙ্কা দেখা দেবে আর সেটার দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে। 

যেহেতু এরকম একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে তাই আমাদের হল প্রভোস্ট স্যারের প্রতি আকুল আবেদন থাকবে যে আমাদের শহীদ আজিজ হলের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এরকম ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে সেটার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সেই সাথে আমাদেরও যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে।

৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, উৎসব পালসহ আমাদের হলের প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর সাথে ঘটে যাওয়া হৃদয়বিদারক ঘটনার পরেও হল প্রশাসন থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলে নিরাপত্তা জোরদার করতে আনসার নিয়োগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ৫ মাসে তা বাস্তবায়ন হয়নি। যা আসলেই দুঃখজনক ও উদ্বেগের বিষয়। হলে একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও, বেশিরভাগ সময়ই সেগুলো থাকে অচল। যার ফলস্বরূপ হল থেকে বিগতদিনে শিক্ষার্থীর রুম থেকে ফোন চুরির মতো ঘটনা ঘটে। এছাড়াও কোনো রকমের বাধা ছাড়াই বহিরাগতদের প্রবেশ আজিজ হলের নিত্যদিনের ঘটনা।

একই ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী ফাহাদ হোসেন ইমন বলেন, শহীদ আজিজ হলে মোবাইল ফোন চুরি কোনো নতুন ঘটনা নয়। ৪৮তম ব্যাচ গণরুমে থাকা অবস্থাতেও একবার ফোন চুরি হয়েছিল। তখনও আমরা আশানুরূপ কোনো ফলাফল পাইনি কর্তৃপক্ষ থেকে। কিছুদিন আগে ৪৯ ব্যাচের ছাত্রের ফোন চুরি হলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই ফোনের কোনো আপডেট আমরা হল কর্তৃপক্ষ থেকে পেলাম না। এটা অবশ্যই দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা! তাছাড়া হলের গেইট দিয়ে বহিরাগত মানুষের আসা-যাওয়া লেগেই থাকে। কিন্তু গেটে কর্মরত ব্যক্তি এগুলা টের পায় না মনে হয়। এই সবকিছু তদারকির দায়িত্বে থাকা জনাব নাছির সাহেবকে হলেই দেখা যায় না। মন খুশি মত আসে আর যায়। হলে উনার কাজটা কি সেটা বুঝতে পারলাম না এখন পর্যন্ত। এভাবে আর কত! হলে বসবাসরত ছাত্ররা খুব দ্রুত এর একটা যথাযথ সমাধান চায়। আমরা পড়তে এসেছি, নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ করতে না।

এ বিষয়ে শহীদ আজিজ হলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, হলের সিসিটিভি ফুটেজের নিয়ন্ত্রণ প্রভোস্ট টিমের অধীনে, প্রশাসনিক কারো কাছে নেই। সিসিটিভি ফুটেজের পাসওয়ার্ডও আমাদের কাছে নেই এবং এটার দায়িত্ব আমাদের কাউকে দেওয়া হয় না। আমি এই কাজ বুঝি না এবং এটি আমার দায়িত্বও না। আর সিসিটিভি ফুটেজ  ৯ হতে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত না থাকার কারণ হলো ঐ সময় প্রভোস্ট রুমে সংস্কার কাজ চলছিল, ফলে মনিটর পাশের রুমে সরানো হয়েছিল। সিসিটিভি বক্স ঐ রুমে ছিল এবং প্রভোস্ট ফোনের মাধ্যমে সরাসরি এটা দেখে। সিসিটিভি ক্যামেরা সচল আছে কিনা সেটা আগে আমরা মনিটর দেখে বুঝতাম আর এটা ছাড়া আমাদের বুঝার কোনো পথ নেই। যেহেতু মিস্ত্রিরা কাজ করছিল হয়ত কোনো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সেসময়ের সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি। 

সিসিটিভির তাৎক্ষণিক কোনো সমস্যা হলে বাইরে থেকে লোক আনতে হয়। আমাদের হলে এই কাজের দক্ষ কর্মী নেই যে রেকর্ডিং হচ্ছে কিনা এই বিষয়টা বুঝবে। আমাদের হলে যে পরিমাণ সিসিটিভি ক্যামেরা আছে সেগুলো দিয়ে পুরো হল কাভার হয় না এবং হার্ডডিস্কটি ছোট যা কিছুদিন পরপরই নষ্ট হয়ে যায়।

হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদ সরকার বলেন, এই ঘটনায় তেজগাঁও থানায় জিডি করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। প্রভোস্ট রুমের সংস্কার কাজ করার সময় সিসি ক্যামেরার সংযোগ সম্ভবত বন্ধ করে ফেলে, তাই ঘটনার সময়ের ফুটেজ নেই। আর আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কত শতাংশ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তার সঠিক কোনো নীতিমালা নেই। এই বিষয়ে আমাদের প্রভোস্ট টিমকে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence