রেজিস্ট্রার-প্রক্টরসহ পবিপ্রবির ৯ পদে অধ্যাপক সন্তোষ কুমার

অধ্যাপক সন্তোষ কুমার
অধ্যাপক সন্তোষ কুমার  © সংগৃহীত

অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বসু। তিনি একাধারে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সংগঠনসহ মোট ৯টি গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। তবে একসঙ্গে এতোগুলো পদে থাকায় তিনি ঠিক মতো সবগুলো পদে যত্নশীল হতে পারছেন না। উল্টো তার এসব পদের প্রভাব ও ইন্ধনে শিক্ষকরা লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। এমনটাই অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক পদে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি অধ্যাপক সন্তোষ কুমার নিজেও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরের দুটি দায়িত্ব একসঙ্গে চালাতে কষ্ট হয়, কারণ দুটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ।

রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর একই ব্যক্তি দুটি কাজ করতে পারেন না। তার ইন্ধনে শিক্ষকদের সঙ্গে একের পর এক হয়রানিমূলক ঘটনা ঘটে। বিষয়গুলো ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়কে জানাব। -শিক্ষক সমিতি

জানা যায়, চলতি বছরের গত ২৪ মে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন মণ্ডলকে লাঞ্ছিত করেন অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান ও মাস্টাররোল কর্মচারী মো. শামসুল হক রাসেল। এ ঘটনায় অভিযোগ দিয়েও বিচার পাননি ভুক্তভোগী। অভিযুক্ত দুজন রেজিস্ট্রার সন্তোষ কুমারের বন্ধু।

আনোয়ার হোসেনের দাবি, রেজিস্ট্রারের ইন্ধনে তাকে লাঞ্ছিত করেছেন ওই দুজন। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করা হলেও ভয়ভীতি দেখিয়ে তা তুলে নিতে বাধ্য করা হয়েছে।

মাদকের অভয়ারণ্যে পবিপ্রবি ক্যাম্পাস

এরপর গত ১২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সমাধান চেয়ে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেয় শিক্ষক সমিতি। সমিতির বেঁধে দেয়া সময় পার হলেও এর সমাধান করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আরও পড়ুন: জিডি তুলে নিতে পবিপ্রবি শিক্ষককে মারতে তেড়ে যান দুই কর্মকর্তা

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য, ক্যাফেটেরিয়া মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক, কর্মচারী সিলেকশন বোর্ডের সদস্য, শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্যসচিব। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উত্তরণ সমিতির সভাপতি, বাঁধনের প্রধান উপদেষ্টা ও আলোক তরির উপদেষ্টা পদে রয়েছেন।

শিক্ষক সমিতি ও ভুক্তভোগী শিক্ষকদের অভিযোগ, অধ্যাপক সন্তোষ কুমার বসু বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরের পাশাপাশি প্রশাসন ও সংগঠনের ৯টি পদে থাকায় ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন না। উল্টো তার ইন্ধনে কিছু লোক শিক্ষকদের লাঞ্ছিত ও অনিয়ম করছেন।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে এগিয়ে যাচ্ছে পবিপ্রবি

এসব পদ-পদবির প্রভাব খাটিয়ে অধ্যাপক সন্তোষ কুমার অনিয়মের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বাসা বরাদ্দে স্বজনপ্রীতি, নিয়মবহির্ভূত আচরণসহ নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

বাসা পেতে হয়রানির শিকার অধ্যাপক কানিজ রোখসানা সুমি বলেন, আমাদের নামে নোটিশ দিয়েও বি-টাইপের বাসাটি দেননি। স্বপন নামের এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে তার (রেজিস্ট্রার) সম্পর্ক রাখতে ওই নেতার বোনকে ১০ জন কর্মকর্তা গিয়ে জোরপূর্বক বাসায় উঠিয়ে দেন। অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। উল্টো ১১ মাস হয়রানির শিকার হয়েছি।

একাধিক পদে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি অধ্যাপক সন্তোষ কুমার নিজেও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরের দুটি দায়িত্ব একসঙ্গে চালাতে কষ্ট হয়, কারণ দুটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ।

তবে একাধিক পদে দায়িত্বপালনের কথা শিকার করলেও এসব অন্যায়-অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছেন অধ্যাপক সন্তোষ কুমার। নিয়ম ভেঙে বাসা বরাদ্দ এবং শিক্ষককে লাঞ্ছনার বিষয়ে রেজিস্ট্রার সন্তোষ কুমার বলেন, সেকশন অফিসার বাসা যথাযথভাবেই পেয়েছেন। এ ছাড়া আনোয়ার মণ্ডলের ঘটনায় তার কোনো অভিযোগ ছিল না। বিচার চাননি বলেই পাননি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জেহাদ পারভেজ বলেন, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর একই ব্যক্তি দুটি কাজ করতে পারেন না। তার ইন্ধনে শিক্ষকদের সঙ্গে একের পর এক হয়রানিমূলক ঘটনা ঘটে। বিষয়গুলো ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়কে জানাব। আর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ