৪০০ টাকা ফি নিয়ে ২৫ টাকার আইডি কার্ড দিচ্ছে বশেমুরবিপ্রবি
- বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৩, ১২:২৫ PM , আপডেট: ১১ জুন ২০২৩, ০২:১৭ PM
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ এবং ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে সেবা প্রদান না করেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত প্রায় ২২ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীদের তথ্য অনুযায়ী স্মার্ট আইডি কার্ড এবং কাউন্সেলিং খাতে এ অতিরিক্তি ফি নেয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির স্নাতক প্রথম সেমিস্টার এবং মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারের ভর্তি ফি সংক্রান্ত নোটিশ থেকে দেখা যায় এই দুই সেমিস্টারে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্মার্ট আইডি কার্ড বাবদ ৪০০ টাকা এবং স্টুডেন্ট গাইডেন্স এন্ড কাউন্সেলিং ফি বাবদ ২০০ টাকা নেয়া হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পরিকল্পনা থাকলেও এখনও স্মার্ট কার্ড তৈরির ব্যবস্থা কিংবা অফিসিয়াল কাউন্সেলিং টিম গঠন করা সম্ভব হয়নি।
এখনও নতুন আইডি কার্ড পাইনি। আইডি কার্ড না থাকায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অথচ আইডি কার্ডের ফি ঠিকই নেয়া হচ্ছে। এছাড়া কাউন্সেলিং নামে কোনো সেবাও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে এই টাকাগুলো যাচ্ছে কোথায়?
রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিগত ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক পর্যায়ে বশেমুরবিপ্রবিতে ১ হাজার ৩৯৩ জন এবং একই শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তি হয়েছিলেন প্রায় ১ হাজার ৭ জন শিক্ষার্থী। এই হিসেব অনুযায়ী শুধুমাত্র এই দুই খাতে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তবে, এর বিপরীতে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হয়েছে ২৫ টাকা মানের একটি সাধারণ আইডি কার্ড এবং স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের কোনো আইডি কার্ডই সরবারহ করা হয়নি।
এছাড়া, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষেও স্নাতক পর্যায়ে ভর্তিকৃত প্রায় ১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থীর কাছে থেকে এই দুই খাতে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে ফি গ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
ছবি: বশেমুরবিপ্রবির আইডি কার্ড
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী রিয়াদ আহমেদ বলেন, আমাদের আইডি কার্ডের মেয়াদ ২০২১ এর ডিসেম্বরে শেষ হলেও করোনার কারণে স্নাতক শেষ হয় ২০২২ এ। আর এখন ২০২৩ চলছে। কিন্তু এখনও নতুন আইডি কার্ড পাইনি। আইডি কার্ড না থাকায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অথচ আইডি কার্ডের ফি ঠিকই নেয়া হচ্ছে। এছাড়া কাউন্সেলিং নামে কোনো সেবাও ভার্সিটি থেকে দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে এই টাকাগুলো যাচ্ছে কোথায়?
এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ই যদি স্বচ্ছতা না থাকে তাহলে আমরা শিক্ষার্থীরা কি শিখব? একজন শিক্ষার্থী হিসেবে চাই প্রশাসন যেসব খাতে সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না অচিরেই সেসব ফি বাদ দেয়া হোক।
কাউন্সেলিং প্রদান করা হলে ফি দিতে আপত্তি নেই কিন্তু যা নেই সেই খাতে কেনো ফি নেয়া হচ্ছে? আর এই যে দুই খাতে স্টুডেন্ট প্রতি ৬০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে সেই টাকা যাচ্ছে কোথায়? আশা করবো প্রশাসন সকল অতিরিক্ত ফি বাদ দিয়ে যৌক্তিক ফী নির্ধারণ করবে এবং এতদিন অতিরিক্ত যে ফি নেয়া হয়েছে তা কি কাজে ব্যয় করা হয়েছে সে তথ্যও শিক্ষার্থীদের জানাবে।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, আইডি কার্ডের ৪০০ টাকা একেবারেই অবিবেচক এবং অন্যায্য একটি ফি। আমি ২০২২ এর ফেব্রুয়ারিতে মাস্টার্স শেষ করেছি। ভর্তির সময় আইডি কার্ড বাবদ ৪০০ টাকা দিয়েছি কিন্তু স্নাতক শেষ হলেও আইডি কার্ড আর পাইনি। আইডি কার্ড না থাকায় আমার বেশ কয়েকজন বন্ধু ব্যাংক একাউন্ট খোলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জটিলতার শিকার হয়েছে। আর যে আইডি কার্ড দেয়া হয় তা নীলক্ষেত থেকে ৫০ টাকায় বানানো যায়। তাহলে ৪০০ টাকা কেনো নেয়া হচ্ছে?
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ভর্তির সময় ২০০ টাকা কাউন্সেলিং ফি আমিও দিয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সেলিং সেন্টার বা এমন কিছু আছে বলে কখনো তথ্য পাইনি। কাউন্সেলিং প্রদান করা হলে ফি দিতে আপত্তি নেই কিন্তু যা নেই সেই খাতে কেনো ফি নেয়া হচ্ছে? আর এই যে দুই খাতে স্টুডেন্ট প্রতি ৬০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে সেই টাকা যাচ্ছে কোথায়? আশা করবো প্রশাসন সকল অতিরিক্ত ফি বাদ দিয়ে যৌক্তিক ফী নির্ধারণ করবে এবং এতদিন অতিরিক্ত যে ফি নেয়া হয়েছে তা কি কাজে ব্যয় করা হয়েছে সে তথ্যও শিক্ষার্থীদের জানাবে।
আরও পড়ুন: ক্লাসরুম সংকট, বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন পবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
আইডি কার্ড তৈরির বিষয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, স্মার্ট আইডি কার্ড তৈরিতে যে ধরনের উন্নতমানের মেশিন প্রয়োজন তা আমাদের সরবরাহ করা হয়নি। আর এ খাতে কত টাকা নেয়া হচ্ছে সে বিষয়েও আমাদের শাখা অবগত নয়। তবে বর্তমানে যে আইডি কার্ড সরবরাহ করা হচ্ছে তা তৈরিতে আমাদের ব্যয় হয় ২৫-৩০ টাকা।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ থাকলেও ফি সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো দায় নিতে রাজি নন ফী নির্ধারক কমটির সদস্যরা। ২০২২ এর ফী নির্ধারক কমিটির সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড, মো: কামরুজ্জামান বলেন, ওই সময় প্রস্তাব ছিল প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্মার্ট আইডি কার্ড প্রদান করা হবে, যা দিয়ে তারা ব্যাংকে টাকা জমাদান, লাইব্রেরি থেকে বই নেয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে পারবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য একটা অফিসিয়াল কাউন্সেলিং টিম থাকবে। আমাদের কাজ ছিল এসব সেবার বিপরীতে ফী নির্ধারণ করা। আমরা সেটা করেছি। এগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্বতো ফী নির্ধারক কমিটির নয়। এগুলো বাস্তবায়ন করবে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির রেজিস্ট্রার মো. দলিলুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি আপনার কাছ থেকে বিষয়গুলো জানলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নেবো।
উপাচার্য ড.একিউএম মাহবুব দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারবো না। আগে ভালোভাবে খোঁজ নিব তারপর মন্তব্য করতে পারবো।