একুশের চেতনা মনে-প্রাণে ধারণ করতে হবে: খুবি উপাচার্য

বক্তব্য রাখছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন
বক্তব্য রাখছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন  © টিডিসি ফটো

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেছেন, নিজেরা বাংলা ভাষা নিয়ে অনেক কথা বললেও সন্তানদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠি, বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে কথা বলে নিজেদের আধুনিক বলে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করি। এটাই কি আমাদের ভাষার শিক্ষা। একটা প্রশ্ন জাগে- আমরা বাঙালি হিসেবে নিজেদের সেই আদর্শ, সৃষ্টি, কৃষ্টি, শিক্ষা কতটুকু ধারণ করতে পেরেছি? আমরা নিজেদেরকে তৈরি করি শুধুমাত্র একটি দিনকে কেন্দ্র করে। শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, একুশের চেতনা আমাদের মনে-প্রাণে ধারণ করতে হবে। 

মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।

উপাচার্য বলেন, ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তান আমল সব সময়ই বাঙালি জাতি বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ওই সময়টাতে বাঙালিদের পরাধীনতার শিকলে বাধার চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনে শহিদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা সেই পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে পেরেছি। বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয় পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, ইতিহাস ছিল, ইতিহাস আছে এবং ইতিহাস থাকবে। ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না। ইতিহাসকে অনুসরণ করেই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

একুশ মানে কিছু হারানো, কিছু প্রাপ্তি জানিয়ে প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, ৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় যখন আমরা ২০০ বছরের পরাধীনতার শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখেছি, তখন আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পৃথিবীতে মায়ের ভাষা কেড়ে নেওয়ার চেয়ে অমানবিক আর কি হতে পারে? কিন্তু বাঙালিরা থেমে থাকেননি। তাদের অদম্য শক্তি, মনোবল আর একাগ্রতায় আমরা ৫২ সালে মাতৃভাষা পেয়েছি।

উপাচার্য মনে করেন, ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল পুরোটাই স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ। একাত্তর ছিলো স্বাধীনতার চূড়ান্ত অধ্যায়। দেশ স্বাধীনের পর যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব আমরা শোষণ-মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছি, তখন পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট খুনিদের নির্মমতায় আমাদের সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। আজ আমরা যাদের সাথে তুলনা করি সেই পাকিস্তানের অবস্থা তো নাজুক। বিশেষ করে সম্প্রতি তাদের দেশের এক মন্ত্রী বলেছেন- পাকিস্তান ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। অথচ সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা, ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল-মডেলে পরিণত হয়েছে। আমাদের জিডিপিতে মাথাপিছু আয় তাদের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭১ সালে আমাদের যে অনুভূতি ছিলো, আজ মনে হয় সেই অনুভূতি ম্লান হয়েছে। 
তাই উপাচার্যের আহ্বান সবাই চিন্তা ও মননে বাঙালি হওয়ার। তিনি ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভীষ্ট তা বাস্তবায়নে যত্নশীল হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, স্ব স্ব ক্ষেত্রে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে দেশপ্রেমের পরিচয় দিতে হবে।

এদিন উপাচার্য তাঁর বক্তব্যের শুরুতে মহান ভাষা শহিদ, বঙ্গবন্ধুসহ দেশের মুক্তিসংগ্রামের শহিদ, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের শহিদ, জাতীয় চার নেতাসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহিদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।

সভায় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। এতে সভাপতিত্ব করেন কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. রুবেল আনছার। মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. মাহমুদ আলম। 

এছাড়াও সভায় বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. রামেশ্বর দেবনাথ, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের সভাপতি প্রকৌশলী এস এম মনিরুজ্জামান (পলাশ) ও সয়েল ওয়াটার এন্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী গৌরব কুমার পাল। সভা সঞ্চালনা করেন ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক বায়েজীদ খান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।

এর আগে দিবসটি উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে ৬টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবনের সামনে কালো ব্যাজ ধারণ, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলনের পর উপাচার্যের নেতৃত্বে প্রভাতফেরি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পৌঁছায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সেখানে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এ সময় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী, বিভিন্ন স্কুলের ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ডিসিপ্লিন প্রধানবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এর পরপরই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল, ডিসিপ্লিনসমূহ, আবাসিক হলসমূহ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদ, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, এ্যালামনাই এসোসিয়েশন এবং আশপাশের স্কুল-কলেজের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি নেভাল ও আর্মি উইংয়ের ক্যাডেটরা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান পালনে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন।

শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর উপাচার্য শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভবনে মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টারের ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব উদ্বোধন করেন। প্রথমে তিনি ফলক ও পরে ফিতাকেটে উদ্বোধন শেষে ল্যাবের ভেতর ঘুরে দেখেন। এসময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে কোয়ালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ডিসিপ্লিনের স্মার্ট ক্লাসরুম ও ল্যাব করেছি। মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব এ ধারায় যুক্ত হলো। এখানে ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা চলছে।

এসময় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস ও মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শাহ জালাল। এর আগে ফলক উন্মোচনের পর দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি আব্দুল কুদ্দুস।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence