পবিপ্রবিতে পাঁচ শতাধিক ধান নিয়ে গবেষণা

পবিপ্রবি'তে পাঁচ শতাধিক ধান নিয়ে চলছে গবেষণা
পবিপ্রবি'তে পাঁচ শতাধিক ধান নিয়ে চলছে গবেষণা   © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল একটি জলবায়ু সংবেদনশীল এলাকা হিসেবে পরিচিত। ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, নদীভাঙন, লবণাক্ততা এ অঞ্চলের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। ফলে বছরের মোট ফলনের একটি বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এসব প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে। আর এসব সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেশীয় ধানের গুণগত মান সংরক্ষণ ও এর জিনগত উন্নয়নের মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি সম্পর্কিত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগ। 

বর্তমানে পাঁচ শতাধিক জার্মপ্লাজম নিয়ে কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। একই সাথে সংকরায়নের মাধ্যমে বীজের গুনগত মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। যা স্থানীয় কৃষি উন্নয়ন ও খাদ্য সরবারহে অনন্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।

ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসের আদলে গ্রহণ করা শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান তথা ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’কে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে দেখছে সরকার। বন্যা, নদী ভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদী কৌশল হিসেবে আলোচিত ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বরে অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)।  

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধে ক্ষুব্ধ ভর্তিচ্ছুরা, সভা ডেকেছে কমিটি

কৃষি মন্ত্রণালয় ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলের অন্যতম অংশ। আর এ মহাপরিকল্পনার আওতায় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিজ ভূমি নিয়ে সরকার আলাদা ভাবে গুরুত্বারোপ করেছে। বাংলাদেশের আবাদযোগ্য প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জমি (৩২%) দক্ষিণাঞ্চল তথা বরিশাল বিভাগে অবস্থিত। এ কারনেই এ বৃহৎ অঞ্চলের কৃষিজ উৎপাদনের উপর দেশের খাদ্য চাহিদা অনেকাংশেই নির্ভর করে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ছাড়াও এ এলাকার ধান উৎপাদনে একটি বাধা হলো এর জিনগত বৈশিষ্ট্য। অন্য এলাকায় বছরে তিনবার উৎপাদন হলেও বরিশাল অঞ্চলে বছরে মাত্র দুই বার আবাদ হয়। উপরন্তু বীজ ও ফলনের মান আশানুরূপ হয় না কখনোই। যার ফলে কৃষক এবং জাতীয় কৃষিতে এর একটি বড় প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। 

সরকারি হিসাব মতে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৫২ শতাংশ জমিতে শুধুমাত্র দেশীয় ধান তথা আমনের উৎপাদন হয়। কারো কারো অভিমতে এর পরিমান আরও বেশী। তাই এ এলাকার কৃষি ও কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনে দেশীয় ধানের জিনগত পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। ভরা মৌসুমে এ অঞ্চলের অনেক আবাদি জমিই পানির তলদেশ চলে যায়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় উৎপাদন।  এ সমস্যা সমাধানে দীর্ঘ উচ্চতা বিশিষ্ট ধানের চারার সাথে স্থানীয় তথা দেশী ধান সংকরায়নের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগ। 

আরও পড়ুন: টফি-তে বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ দেখেছে ১.৫৫ কোটি দর্শক

লবণাক্ততা এ অঞ্চলের অন্যতম বড় সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে এ অঞ্চলের মাটিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক ভাবে ব্যাহত করছে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে লবণাক্ততা সহিষ্ণু আমন ধান উৎপাদন ও গবেষণার দিকে নজর দিচ্ছে। 

দেশী ধান ফলনের অন্যতম আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো এর সংমিশ্রণতা। অর্থাৎ একই জমিতে বিভিন্ন জাতের ধানের ফলন হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে উৎপাদনে। ফলে ধানের স্বকীয়তা বজায় থাকছে না। একই জমিতে একই সাথে বিভিন্ন ধরণের ধানের চাষাবাদের ফলে নিয়ন্ত্রণহীন জেনেটিক ক্রসিংয়ের ফলে জিনগত অনন্যতা রক্ষা হচ্ছে না। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে স্থানীয় কৃষকেরা যে ধানের বীজ সংরক্ষণ এবং জমিতে চাষাবাদ করেন সেখানে প্রতি বর্গমিটারে ৩৩ রকম ধান পাওয়া গেছে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে বীজের বিশুদ্ধতা মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ বীজগুলো আলাদা করে স্ব স্ব জাতের উন্নয়ন ও পরিবেশের সাথে অভিযোজন অর্থাৎ জেনেটিক্যালি মোডিফিকেশনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলে পবিপ্রবিতে তৈরী হয়েছে দেশীয় ধান বীজের এক বিশাল সংগ্রহশালা। তবে এ সংগ্রহশালার একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, এগুলো জমিতেই সংরক্ষণ করা হচ্ছে।  যার ফলশ্রুতিতে এ জাতগুলোর কয়েক প্রজন্ম চাষাবাদের ফলে জেনেটিক্যালি মোডিফিকেশন তথা পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যতা তৈরী হচ্ছে। যেখানে অন্যান্য সংগ্রহশালার বীজ শুধু মাত্র ল্যাবে সংরক্ষণ করে রেখে দেওয়া হয়। 

বর্তমানে এ সংগ্রহশালায় ১০০ টি দেশীয় জাতের পাঁচ শতাধিক রকমের ধানের জার্মপ্লাজম রয়েছে। এগুলোর মধ্যে স্বর্ণভোগ, চারুলতা, নাকুচিমোটা, স্বর্ণ মুশুরী, স্বাক্ষরখোড়া, মোথামোটা, কালোজিরা, ছোটহরি, কালোকোটা, কাজল শাইল, মৌলতা, ক্ষীরামোটা, লালমোটা অন্যতম।

আরও পড়ুন: নিজেদের কার্যালয়ে ছাত্রলীগের বিদ্রোহী গ্রুপের ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ

এই ধানের জাতগুলো দেশের কৃষির জন্য এক বিশাল সম্ভাবনাময় সম্ভার। একসময় এ দেশে অনেক উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত ছিলো তবে কালের পরিক্রমায় এবং সংরক্ষণের অভাবে সেগুলো আজ বেশীরভাগই বিলুপ্ত। তাই দেশের কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনার প্রসারে এ সকল ধানের বীজ ও জাতগুলোর সংরক্ষণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এবং সে দায়িত্ব অনেকাংশেই পালন করছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। 

গবেষকদের মতে এ পিউরিফাইড বীজগুলো কৃষকের হাতে পৌছানো গেলে দেশের বার্ষিক উৎপাদন ১৫-২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এজন্য কৃষি মন্ত্রনালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পবিপ্রবি'র গবেষক প্রফেসর ড. শামিম মিয়া বলেন, পবিপ্রবি'তে দেশীয় ধানের যে বিশাল সংগ্রহশালা রয়েছে দেশে এমন সংগ্রশালা বিরল। এ ধানের জাতগুলোর বেশ কয়েকবছর ধরে জেনেটিক্যালি মোডিফিকেশনের কাজ চলছে যেগুলোর মাধ্যমে উচ্চফলনশীল ধান আবাদ সম্ভব।  সেক্ষেত্রে বিএডিসি বীজগুলো মাল্টিপ্লিকেশন করে ফাউন্ডেশন সিড তৈরী করে  মাঠপর্যায়ে তথা কৃষকের হাতে পৌছে দিলে দেশের কৃষির জন্য এক বিস্তর সাফল্য বয়ে আনবে বলে আশা করছি।

বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ গবেষণার গুরুত্বারোপ করে বলেন, এ ধরণের গবেষণা শুধুমাত্র এই দক্ষিনাঞ্চল নয় বরং সমগ্র দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণে এবং কৃষিক্ষেত্রে এক অপার সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence