আধিপত্য ধরে রাখতে কমিটিহীন শাবিপ্রবি ছাত্রলীগ বিভক্ত ৭ গ্রুপে

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) নেই ছাত্রলীগের কোনো কমিটি তবুও গ্রুপিং দ্বন্দ্বে ক্যাম্পাসে অস্ত্রের মহড়া ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শাবিপ্রবি প্রাঙ্গণে দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের কমিটিহীন থাকলেও এখানে সক্রিয় রয়েছে ছাত্রলীগেরই সাতটি গ্রুপ।

সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল ৯ বছর আগে, ২০১৩ সালে। এক বছর মেয়াদি এই কমিটি আট বছর পেরোনোর পর গত বছরের জুনে তা বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর থেকে শাবিতে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই।

কমিটিহীনতার সুযোগে শাবি ছাত্রলীগ এখন নানা গ্রুপ-উপগ্রুপে বিভক্ত। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের অন্তত সাতটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এ ছাড়া উপগ্রুপ আছে আরও তিন থেকে চারটি। ক্যাম্পাসে আধিপত্য ধরে রাখতে এই গ্রুপগুলো প্রায়ই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। এতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা দেখা দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে এমন ঘটনা বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে দুইবার গ্রুপিং দ্বন্দ্বে ক্যাম্পাসে অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপ।

সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা যায়, শাবিতে সক্রিয় ছাত্রলীগের প্রধান সাতটি গ্রুপের নেত্বত্বে রয়েছেন হাফিজ আল আসাদ, খলিলুর রহমান, সজিবুর রহমান, মামুন শাহ, মেহেদী হাসান স্বাধীন, সুমন সুরকার ও তারেক হালিমী। এই গ্রুপগুলোর কয়েকটি উপগ্রুপও রয়েছে।

একটি গ্রুপের নেতা সজিবুর রহমান মনে করেন কমিটির ধারাবাহিকতা না থাকার কারণেই ছাত্রলীগে এতগুলো গ্রুপ-উপগ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে।

ছোট ক্যাম্পাসে এত গ্রুপ কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সজিব বলেন, নিয়মিত কমিটি হলে নেতৃত্ব বেরিয়ে আসত। একটা সাংগঠনিক কাঠামো ও শৃঙ্খলা থাকত। কমিটি না থাকায় কর্মী ধরে রাখার জন্যও বিভিন্ন বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

ছাত্রলীগের নেতারা জানান, শাবি ছাত্রলীগের ওপর সিলেটের স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির একটি বড় প্রভাব রয়েছে। সিলেটে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন আওয়ামী লীগের ৫-৬ জন নেতা। শাবি ছাত্রলীগ অনেকটাই তাদের নিয়ন্ত্রণে। সব গ্রুপের নেতারাই সিলেট আওয়ামী লীগের এই নেতাদের কারো না কারো অনুসারী বলে জানা গেছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের কারণেও শাবি ছাত্রলীগের কমিটি হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন। তাদের দাবি, তাদের কর্তৃত্ব খর্ব হয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেক নেতা কমিটির ব্যাপারে অনাগ্রহী। এ ছাড়া কমিটি দিলে সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে ভেবেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কমিটি দিতে চায় না। সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠার কারণেও নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়া আটকে আছে বলে জানিয়েছেন শাবি ছাত্রলীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা।

তবে শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী সজিবুর রহমান জানিয়েছেন, ‘ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণকারী’ সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারাও এখন কমিটি চান। তারাও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এখন পুরোটাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ওপর নির্ভর করছে।

দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করে সজিবুর রহমান বলেন, ‘সবাই পদ চায়। এটা তো একটা পরিচয়। সংগঠনদের জন্য আমি এত কিছু করলাম, কিন্তু দেয়ার মতো কোনো পরিচয় নেই। আমাদের তো ছাত্রত্বও শেষ হয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে না হয় সবাই চেনে, ক্যাম্পাস থেকে বের হলে তো কোনো পরিচয় নেই। দলের শৃঙ্খলার জন্যও কমিটি প্রয়োজন।’

শাবি ছাত্রলীগের আরেক গ্রুপের নেতা মামুন শাহ বলেন, ‘কারো কোনো সাংগঠনিক পরিচয় নেই। এতে অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। নতুন নেতৃত্বও আসে না। হতাশ হয়ে অনেকে ক্যাম্পাস ছেড়ে দিচ্ছে।’

দীর্ঘদিনেও কমিটি না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কমিটিতে আমাদের হাত নেই। কেন্দ্রীয় নেতারা বলতে পারবেন। আমরা যতটুকু শুনছি, শিগগিরই কমিটি হবে।’

সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে থাকার সময় শাবি ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় পদপত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্তও নেওয়া হয়। এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি পরিবর্তন হয়েছে তিন দফা। তবে শাবি ছাত্রলীগের আর কমিটি হয়নি।

ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানান, আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসার পর আবার শাবিতে কমিটি গঠনের আলোচনা শুরু হয়। তখন থেকেই পদপ্রত্যাশী নেতারা কেন্দ্র পর্যায়ে লবিং ও তদবির শুরু করেন। কেন্দ্রের নেতাদের সুনজরে পড়তে অনেকে নিয়মিত ঢাকায় যাওয়া আসা করছেন। ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে থাকছেনও কেউ কেউ। তবে তাতেও খুলছে না কমিটির জট।

এদিকে কমিটিতে পদ পেতে ক্যাম্পাসে আধিপত্য ধরে রাখতে প্রায়ই দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপ। ১৬ অক্টোবর রাতে এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রাবাস থেকে বের করে দেওয়া নিয়ে সুমন সরকার ও তারেক ইসলামী গ্রুপের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে খলিলুর রহমান ও সজিবুর রহমান গ্রুপ। এ সময় চার গ্রুপের অনুসারীরাই দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দেয়। এতে পুরো ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এর দুই দিন আগে ১৪ অক্টোবর আরেকটি ঘটনার জেরে ক্যাম্পাসে সশস্ত্র মহড়া দেয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপ। এ দিন দুই গ্রুপের অনুসারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।’

শাবি ইউনিটের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অনেক জায়গাতেই ছাত্রলীগের কমিটি নেই। আমরা একে একে সব কমিটিই গঠনের চেষ্টা করছি। শাবিতে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।’

২০১৩ সালের ৮ মে শাবি ছাত্রলীগের সাত সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ারও দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৮ মে এই কমিটিকে ১৫১ সদস্যে পূর্ণাঙ্গ করা হয়। ২০২১ সালের ১৭ জুন এই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence