অনিয়মের প্রমাণ পেল ইউজিসি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অপসারণের সুপারিশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের

অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো
অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো  © ফাইল ফটো

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে নিয়োগ নিয়ে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মতামত দিয়েছে সংস্থাটি। ইউজিসির মতামত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির মধ্যে ভিসিকে অপসারণের প্রস্তাব করেছে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। 

বৃহস্পতিবার (৮ মে) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের দপ্তরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে অপসারণের প্রস্তাব জমা দিয়েছে বিভাগটির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। আগামী সপ্তাহে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে অপসারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ভিসিকে সরিয়ে দিতে একটি প্রতিবেদন সিনিয়র সচিবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা সিনিয়র সচিব এবং উপদেষ্টা নেবেন।’

জানা গেছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামের ৬৬ বছর বয়স পূর্তিতে গত ১ ফেব্রুয়ারি অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও ভিসির একক সিদ্ধান্তে বিধিমালার বাইরে গিয়ে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে তাকে পত্র দেওয়া হয়। একই কৌশলে আইনের তোয়াক্কা না করে ভিসি একক সিদ্ধান্তে একজনকে পিএ টু ভিসি এবং আরেকজনকে পিএ টু রেজিস্ট্রার পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন।

বিষয়গুলো নিয়ে অভিযোগ উঠলে ভিসি অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের কাছে ব্যাখ্যা চায় ইউজিসি। গত ১০ এপ্রিল ইউজিসির কাছে ব্যাখ্যা দেন অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন। তবে ভিসির জবাব সন্তোষজনক নয় এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে বলে মতামত দেয় ইউজিসি।

গত ৬ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া মতামত জানিয়েছে ইউজিসি। সংস্থাটির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই চিঠি বলা হয়েছে, ‘কমিশনের অনুমোদন ব্যতিরেকে পিএ টু ভিসি পদটিতে সাময়িকভাবে চুক্তিভিত্তিতে ০১ বছরের জন্য নিয়োগের প্রক্রিয়াটি যথাযথ হয়নি।’

মতামত সংক্রান্ত চিঠিতে ইউজিসি জানিয়েছে, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের পিআরএল স্থগিত করে সিন্ডিকেটের অনুমোদন না নিয়ে তাঁকে সাময়িক নিয়োগ দেয়া এবং পরবর্তীতে নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনাটি বিধিসম্মত নয়।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, গত ৪ মে ‘দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস’ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ মারফত জানা যায় উপাচার্য নিজেই রেজিস্ট্রারের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়েছেন, যা নজিরবিহীন। এটি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৬ এ বর্ণিত ভাইস চ্যান্সেলরের ক্ষমতা ও দায়িত্ব (ধারা-১১) এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সার্বিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে বর্তমান উপাচার্য-এর প্রশাসনিক দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার নিমিত্ত আইন ও বিধি প্রতিপালনের ক্ষেত্রে তাঁর সচেতনতার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে’ বলে মতামত দিয়েছে ইউজিসি। ইউজিসির এ মতামত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ভিসিকে অপসারণের সুপারিশ করা হয়েছে।

ভিসি অপসারণের একদফা দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা
গত ৪ মে থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এ দাবিতে এখনো অনড় অবস্থানে রয়েছেন তারা।

এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ভিসির অপসারণ ও পাতানো সিন্ডিকেট সভা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তার বাসভবনের ফটক ভাঙচুর করে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর গত ১৩ এপ্রিল ভিসির নির্দেশে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর চার দফা দাবিতে আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

দাবিগুলো হলো- অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে পুনর্বহাল, রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ, ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারের দোসর শিক্ষকদের বিভিন্ন কমিটি থেকে অপসারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান উন্নয়ন না করে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন করায় ভিসিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।

২৭ এপ্রিল রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন একদল শিক্ষার্থী। তারা রেজিস্ট্রারকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ দাবি করে কুশপুত্তলিকা দাহ করেন এবং রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তালা দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) কে এম সানোয়ার পারভেজ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন।

ভিসির পদত্যাগের আন্দোলনে সংহতি শিক্ষকদের
ভিসি ড. শুচিতা শরমিনের পদত্যাগ দাবিতে চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে ক্যাম্পাসের গ্রাউন্ড ফ্লোরে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। তারা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে একটি লিখিত বিবৃতি প্রদান করেন।

ভিসির বক্তব্য
বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আন্দোলন এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বলেন, ‘আমি যখন নিয়োগ পাই, রেজিস্ট্রার দপ্তর চালানোর মতো কোনো লোক ছিল না। সবসময় তার সহযোগিতা পেয়েছি বলব না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজগুলো ব্যাহত হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেও এই ভদ্রলোককে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই এখানে আছেন এই বিবেচনায় আমি তাকে সুযোগ দিয়েছিলাম এবং সিন্ডিকেটেও এটা পাশ হওয়ার কথা ছিল। প্রথম সিন্ডিকেটে হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয় সিন্ডিকেটে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি দুইজনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছিলাম। একজনকে পিএ টু ভিসি আরেকজন পিএ টু রেজিস্ট্রার হিসেবে একবছরের জন্য চুক্তিতে, সবচেয়ে কম বেতনে। কারণ সেখানে আমি কোনো নির্ভরযোগ্য লোক পাচ্ছিলাম না। দেখলাম কোনো তথ্যই গোপন থাকে না। আমি পরিকল্পনা করছি ভবিষ্যতে সেসব বিষয় সংশোধন করার।’ 


সর্বশেষ সংবাদ