অধ্যাপক জাফর ইকবালের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ হ্যাকড

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল
অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল  © ফাইল ছবি

জনপ্রিয় বিজ্ঞান ফিকশন লেখক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ভেরিফায়েড বা ব্লু ব্যাজ থাকা ফেসবুক পেজটি (Muhammed Zafar Iqbal) হ্যাক হয়েছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ সম্প্রতি ২১ লাখ (২.১ মিলিয়ন) ফলোয়ারের এই পেজটি হ্যাক করে।

শুক্রবার (১০ মার্চ) বিকেলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল নিজেই। বর্তমানে সেটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, এমনিতে আমি ফেসবুক মেইনটেন (পরিচালনা) করিনা; আমার নামে যাতে অন্য কেউ কোন ফেক (নকল) অ্যাকাউন্ট করতে না পারে সেজন্য আমার শিক্ষার্থীরা আমারা নামে একটি অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে। সেটি হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে বলে তারা আমাকে জানিয়েছে। একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ এ হ্যাকিংয়ের সাথে জড়িত। তারা এটি উদ্ধারের চেষ্টা করছে; এখানে আমার কিছু করার নেই। 

অধ্যাপক জাফর ইকবালের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজটি (সংগৃহীত) 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এমন সমস্যা থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, তথ্য-প্রযুক্তি তো সমসময় খারাপ নয়, এর ভালো দিকও রয়েছে। আমাদের এর ভালো দিকগুলো নিতে হবে। এখন মানুষ প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকে পড়ছে; এর থেকে বের হওয়া উচিৎ। তিনি বলেন, এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, প্রযুক্তিই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। সেজন্য, আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। এটি শুধুমাত্র তো আমাদের একার সমস্যা না, বৈশ্বিক সমস্যা। প্রযুক্তির এমন আসক্তি বুঝতে হলে শিক্ষার্থীদের দেখতে হবে প্রতিদিন সে বইয়ের পেছনে কতটুকু সময় দিচ্ছে; আর ফেসবুকে কতটুকু সময় দিচ্ছে; তাহলেই বুঝতে পারবে এবং সেজন্য বাবা-মা ও অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিরাপত্তার প্রশ্নে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে জানিয়ে জনপ্রিয় এই লেখক বলছেন, এটি একটি মৌলিক সমস্যা; এর আগে মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের সরানোর আগে সে দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়েছিল। আসলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যারা পরিচালনা করে, দিনশেষে তারা তো ব্যবসায়ী, তারা তাদের ব্যবসার দিকটিই দেখবে। তারা বাক-স্বাধীনতার নামে এটি করে থাকে। আইন দিয়ে তো আর সব বন্ধ করা সম্ভব না; তাহলে তো পৃথিবী থেকে খুন বন্ধ করা সম্ভব হতো।

অধ্যাপক জাফর ইকবাল মনে করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। হ্যাকিং ও তার থেকে সুরক্ষা সম্পর্কে আমাদের শিক্ষা ও পাঠ্য-পুস্তকে এ নিয়ে পাঠ অন্তর্ভূক্ত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এ সম্পর্কে আরও জানাতে হবে। ‘সিকিউরিটি ল’ বা এ সংক্রান্ত কোনো আইন খুব বেশি কাজে আসবে না বলেও মনে করেন তিনি।

এদিকে আজ বিকেলে ফেসবুক পেজটিতে (Muhammed Zafar Iqbal) গিয়ে দেখা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার শুধু ‘Hello’ সম্বোধন করে একটি পোস্ট করা হয়েছে। তাতে প্রায় ১০ হাজার রিএক্ট-কমেন্ট করা হয়েছে। এর প্রায় পাঁচ ঘন্টা পর দুটি বিড়ালের ছবি যুক্ত করে তাতে লেখা হয়, “Meow Meow”. এই পোস্টে ১২ হাজার রিএক্ট-কমেন্ট করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, দেশের নন্দিত এ কথাসাহিত্যিকের লেখালেখি শুরু হয় তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই। তার প্রথম সায়েন্স-ফিকশন গল্প ‘কপোট্রনিক ভালোবাসা’ সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়েছিল। গল্পটি পড়ে একজন পাঠক দাবি করেন সেটি বিদেশি গল্প থেকে চুরি করা। এর উত্তর হিসেবে তিনি একই ধরণের বেশ কয়েকটি বিচিত্রার পরপর কয়েকটি সংখ্যায় লিখে পাঠান। তিনি তার লেখালেখি ও বক্তব্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজ্ঞান ও গণিতকে জনপ্রিয় করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশের নানা শ্রেণি ও বয়সের অসংখ্য মানুষের কাছে তুমুল জনপ্রিয় তিনি; বিশেষ করে তরুণেদের মাঝে একটু বেশিই জনপ্রিয় অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ২০১০ সালে যুগোপযোগী জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। গুণী এই লেখকের এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন, ভৌতিক রচনাবলী, শিশুতোষ রচনাবলী, ইতিহাস, কিশোর উপন্যাস, উপন্যাস, স্মৃতিচারণা, ছোটগল্পসহ প্রায় দেড় শতাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি গণিত অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ