মাউশি ডিজির দপ্তরে বসেই জালিয়াতি

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর  © ফাইল ফটো

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) যেটির পরিচিতি শিক্ষাভবন হিসেবে। সেই শিক্ষাভবনে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ ও শিক্ষকদের হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এবার অভিযোগ, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) দপ্তরে বসেই একজন অফিস সহায়ক (পিয়ন) অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছিলেন দিনের পর দিন। তবে সর্বশেষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সই জাল করে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে বদলির উদ্যোগ নেয়ায় ধরা খেলেন সেই অফিস সহায়ক।

এই ঘটনায় সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে অভিযুক্ত অফিস সহায়ক মো. জুয়েলকে। আর অনৈতিকভাবে ঢাকার যে দুই শিক্ষককে বদলির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তাঁদের আপাতত ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে মাউশির আইন শাখা।

তবে আপাতত তাদের মধ্যে ঢাকার আজিমপুর গভ: গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের গণিতের সহকারী শিক্ষক কে এম মাহমুদুল হাসানকে নেত্রকোনার দুর্গাপুরের এম কে সি এম পাইলট গভ. হাইস্কুলে এবং দাউদকান্দির বেগম আমেনা সুলতান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাতেমা আক্তারকে হবিগঞ্জের মাধবপুরের গোবিন্দপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে।

তবে দুর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ শুধু মো. জুয়েলের বিরুদ্ধেই নয়, বরং মাউশির আরও কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আছে বলে মাউশির একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে মাউশির মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, এই ঘটনায় অভিযুক্তকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে প্রমাণ হলে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া যখনই কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় তখনই তদন্ত করা হয়।

দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজশিক্ষা দেখভাল করে মাউশি। শিক্ষক-কর্মচারীদের বদলি, পদোন্নতি থেকে বিভিন্ন কাজে বড় ভূমিকা রাখে মাউশি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত নানা কাজ হয় এখান থেকে। বর্তমানে সারা দেশে কেবল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ই আছে ১৮ হাজার ৫৯৮ টি। এগুলো শিক্ষক আছে আড়াই লাখের মতো। এ ছাড়া কলেজ আছে সাড়ে চার হাজারের মতো। এগুলোতে শিক্ষক আছে প্রায় এক লাখ ২৮ হাজার। এ ছাড়াও আছেন কর্মচারী।

এই বিরাটসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্ন কাজে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী ‘চক্র’ তৈরি করে দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য করেন বলেও অভিযোগ। এঁদের অনেকেই আবার বছরের পর বছর ধরে শিক্ষা ভবনে চাকরি করছেন। কখনো কখনো দূর দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষক-কর্মচারীরা হয়রানিরও শিকার হন।

এ রকম অভিযোগের মধ্যেই বেরিয়ে এল প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালকের দপ্তরের অফিস সহায়ক মো. জুয়েল সম্প্রতি ঢাকার আজিমপুর গভ: গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের গণিতের সহকারী শিক্ষক কে এম মাহমুদুল হাসানকে ঢাকার গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে এবং কুমিল্লার দাউদকান্দির বেগম আমেনা সুলতান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজির সহকারী শিক্ষক ফাতেমা আক্তারকে ঢাকার শেরেবাংলা নগর এলাকার একটি বিদ্যালয়ে বদলির ‘ব্যবস্থা’ করতে যাচ্ছিলেন। আর এই কাজে তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নেন।

আবেদনে শিক্ষা উপমন্ত্রীর সই জাল করে সুপারিশ লিখে সেটি নিয়ে মাউশির মাধ্যমিক শাখায় যান জুয়েল। এর আগেও তিনি এ ধরনের কাজ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু মহাপরিচালকের দপ্তরের অফিস সহায়ক হওয়ায় সন্দেহ হলেও প্রথম দিকে তেমন একটা কিছু বলতেন না মাধ্যমিক শাখার কর্মকর্তারা। কিন্তু এবার একজন কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি বেশি সন্দেহে হলে তিনি বিষয়টি তাঁর ঊর্ধ্বতন অবহিত করেন। এরপর সেটি শিক্ষা উপমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়। এরপর বিষয়টি জেনে সই জালিয়াতির জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেন উপমন্ত্রী।

তারই ধারাবাহিকতায় অফিস সহায়ক মো. জুয়েলকে চাকরির শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। ৬ নভেম্বরের সই দিয়ে এই ব্যবস্থা নেওয়া হলেও আজ রোববার বিষয়টি প্রকাশ হয়।

মো. জুয়েলের বাবা ঢাকার সরকারি একটি হাইস্কুলে চাকরি করেন। মাউশির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অফিস সহায়ক হলেও মো. জুয়েল আর্থিকভাবে ‘বেশ সচ্ছল’। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মো. জুয়েলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তাঁর মোবাইল ফোনও বন্ধ।


সর্বশেষ সংবাদ