স্কুলে পেনশন স্কিম বাধ্যতামূলক করে দেওয়া চিঠি প্রত্যাহারের নির্দেশ কর্তৃপক্ষের
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২০ মে ২০২৪, ১০:৪৩ AM , আপডেট: ২০ মে ২০২৪, ০৫:০২ PM
দেশের প্রতিটি উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে চিঠি দিয়ে শিক্ষকদের বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করতে বলা হচ্ছে। জানা যায়, শিক্ষা অফিসকে এই চিঠি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। তবে এ ধরনের চিঠি দেওয়া হলে তা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান।
সোমবার (২০ মে) দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ চিঠি প্রত্যাহার করার কথা জানান। একইসঙ্গে এটা কারো জন্য বাধ্যতামূলক নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এর আগে ‘উপজেলার এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী (১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী) বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে অফিস চলাকালীন সময়ের মধ্যে তার তালিকা, এমপিও সীট (শিট) এবং রশিদের সত্যায়িত হার্ডকপি বাহক মারফত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জমা প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানগণকে অনুরোধ করা হলো।’ শুধু তাই নয়, গত ৮ এপ্রিল পাঠানো ওই চিঠিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সতর্কও করে দেওয়া হয়। বলা হয়, ‘এর ব্যত্যয় ঘটলে প্রতিষ্ঠান প্রধান দায়ী থাকবেন।’
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয় গত বছরের ১৭ আগস্ট। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন। সরকারি চাকরিজীবী ব্যতীত দেশের সকল নাগরিককে এই পেনশন সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বাধ্যতামূলক স্কিম চালুর চিঠিতে শিক্ষকদের মাঝে বিরাজ করছে নানা ভয়। তবে স্কিম চালুতে শিক্ষকদের খুব একটা সাড়া নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা কী সুবিধা পান
এমপিও হলো মান্থলি পে-অর্ডার বা মাসিক বেতন আদেশ। এর মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন ওই প্রতিষ্ঠানের বদলে পরিশোধ করে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মোট ২২ হাজার ১৭৪টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা। সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছে ৫ লাখের মতো। এসব শিক্ষক-কর্মচারীর সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য ১৯৯০ সালে কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে সরকার। আর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরোত্তর সুযোগ-সুবিধা (পেনশন) নিশ্চিত করতে ২০০২ সালে গঠন করা হয় অবসর সুবিধা বোর্ড।
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের আগ পর্যন্ত কল্যাণ ট্রাস্ট বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতনের ২ শতাংশ কেটে নিত। আর বোর্ড কেটে নিত ৪ শতাংশ। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট প্রবিধানমালা, ১৯৯৯-এর ৬ প্রবিধান এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড প্রবিধানমালা, ২০০৫-এর ৮ প্রবিধান অনুসারে মূল বেতনের মোট ৬ শতাংশ কেটে নেওয়া হতো।
২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল এ দুটি প্রবিধানমালার সংশ্লিষ্ট প্রবিধান সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। সংশোধিত প্রবিধান অনুসারে শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন থেকে ট্রাস্টের জন্য ৪ শতাংশ এবং বোর্ডের জন্য ৬ শতাংশ মোট ১০ শতাংশ কেটে নেওয়া শুরু হয়। চাকরি করে অবসরে গেলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ৭৫টি মূল বেতনের সমান (সুদসহ) আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (বাকবিশিস) সভাপতি অধ্যাপক ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তাদের অবসর ও কল্যাণ তহবিলের জন্য বেতনের ১০ শতাংশ টাকা প্রদান করেন। সীমিত বেতন থেকে ১০ শতাংশ কর্তন ও ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির কারণে তাদের চলা খুবই কষ্টকর। এমতাবস্থায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় অর্থ প্রদান করা শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য খুব কঠিন। উদ্বেগের বিষয়- অনেক এলাকায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, যা প্রকারান্তরে অমানবিক। এমন পরিস্থিতিতে আমরা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের পরিবর্তে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের ন্যায় পেনশনের দাবি জানাচ্ছি।
মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহেদুল খবির চৌধুরী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এরকম কোনো চিঠি আমরা দেইনি। এটা তো বাধ্যতামূলকের কিছু নয়। যার ইচ্ছা অনুযায়ী আসবে।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পেনশন স্কিম বাধ্যতামূলক নয়। কোনো উপজেলা থেকে এমন চিঠি দিলে সে চিঠি প্রত্যাহারের জন্য বলছি। কোনো সার্বজনীন স্কিমই বাধ্যতামূলক নয়। আমরা এটা অলরেডি জানিয়েছি জেলা পর্যায়ে এবং উপজেলা পর্যায়ে পৌছাই দিতে বলেছি। কোনো পেনশন স্কিম বাধ্যতামূলক নয়।
তিনি আরো বলেন, আপনারা বলে দেন পেনশন স্কিমের চেয়ারম্যানের সাথে কথা হয়েছে। কেউ যেন বাধ্যতামূলকভাবে এটা না করে। যার ইচ্ছে হবে, তিনি পেনশন স্কিমে আসবেন।