প্রক্টরের কাছে অভিযোগ ছাত্রলীগের মারধরে রক্তাক্ত ফরিদের
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০১৯, ০২:৩৫ PM , আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:৪৯ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এসএম হল সংসদের প্রার্থী মো. ফরিদ হাসানকে মেরে রক্তাক্ত করার ঘটনায় প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী অরণি সেমন্তি খানসহ কয়েকজন তার পক্ষে এ অভিযোগ দেন।
গুরুতর আহতাবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি রয়েছেন ফরিদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র।
অভিযোগে ফরিদ বলেছেন, ‘সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এসএম হলের ওয়াসিফ হাসান পিয়াসের নেতৃত্বে পাঁচজন হলের মেস ঐতিহ্য ডাইনিং রুমে নিয়ে যায়। সেখানে ছাত্রলীগের হল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালিয়ে আহতে করে হলের বাইরে ফেলে রাখে। বর্তমানে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসাধীন।’
এ ঘটনায় তিনি ‘অপরাধী-সন্ত্রাসীদের’ যথোপযুক্ত শাস্তির দাবি করেছেন। এতে হামলাকারী পাঁচজনের নাম সংযুক্ত করেছেন তিনি।
তারা হলেন- ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ও হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ওয়াসিফ হাসান পিয়াস, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র ও হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল হোসেন, ফার্সি বিভাগের মুজাহিদ, সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্র ও হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সানাউল্লাহ সায়েম এবং পরিসংখ্যান বিভাগের সাব্বির। তিনিও সাংগঠনিক সম্পাদক। তারা সবাই ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।
অরণি সেমন্তি খান বলেন, ‘আমরা অভিযোগপত্র দিয়েছি। প্রক্টর বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।’ এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ হবে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। হল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আমরাও কি করা যায় দেখছি।’
আরো পড়ুন: ঢাবি এসএম হল সংসদের প্রার্থীকে মেরে রক্তাক্ত করল ছাত্রলীগ
জানতে চাইলে ফরিদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, হল ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাবেক বহিষ্কৃত নেতা মিজানুর রহমান পিকুলসহ হল কমিটির প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন। ‘তোর সাহস তো কম নয়, এখনো হলে থাকিস’ এই বলে ব্যাপক মারধর শুরু করে। পরে কেউ হাসপাতালে নিয়ে যেতেও সাহস করেনি।’
ফরিদ জানান, হল সংসদ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা তাকে শাসিয়ে ও হুমকি-ধামকি দিয়ে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে বলেন। একপর্যায়ে তিনি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন বলে জানান।
এ বিষয়ে জানতে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘তাকে মারধরের সাথে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা যতদূর জানি তার রুমে মাদক পাওয়া গিয়েছিল এবং হলের প্রায় চারশো শিক্ষার্থী তাকে হল থেকে বের করে দেয়ার জন্য হল প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল। পরে হল প্রশাসন তার রুমটি সিলগালা করে দেয়। সে এখন হলে থাকে না। কালকে হলে আসলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে মারধর করেছে বলে আমরা শুনেছি।’
এছাড়া মিজানুর রহমান পিকুলও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর এ ব্যাপারেদ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে অমানবিকভাবে মারা হয়েছে। এমনকি হলের ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থেকে তাকে মারধর করেছে। তাকে হাসপাতালে নিতেও কেউ সাহস করেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, হলে অছাত্র যারা থাকে তারাই নিয়মিত ছাত্রদের নির্যাতন করে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে তার ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য আমাদের যা করা লাগে তাই করব।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
আরো পড়ুন: অছাত্রদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছেন ঢাবি ছাত্ররা: নুরুল হক