২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবি রোকেয়া হলের ছাত্রীদের

বৃহস্পতিবার রোকেয়া হলের সামনে অনশনরত ছাত্রীদের সাথে কথা বলতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রোকেয়া হলের প্রভোস্ট
বৃহস্পতিবার রোকেয়া হলের সামনে অনশনরত ছাত্রীদের সাথে কথা বলতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রোকেয়া হলের প্রভোস্ট  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদে পুনঃর্নির্বাচন এবং রোকেয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জিনাত হুদার পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে অনশনরত ছাত্রীদের সাথে কথা বলেছেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী। বৃহস্পতিবার রাতে হলের সামনে গিয়ে ছাত্রীদের তিনি বলেন, ‘তোমাদের দাবি নিয়ে আমরা বসবো। তোমরা অনশন ভেঙে হলে ফিরে যাও।’

অধ্যাপক গোলাম রব্বানী আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা আমাদের পরিবারের সমস্যা। আমরা তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছি। সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে।’

তবে চার দফা দাবি মেনে নেওয়ার দাবিতে এসময় ছাত্রীরা স্লোগান দেন এবং ‘ভুয়া, ভুয়া’ আওয়াজ তোলেন। একপর্যায়ে সেখান থেকে প্রক্টরসহ অন্যরা চলে যান। পরে প্রভোস্টের বাসভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এসময় প্রভোস্টকে হলে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন ছাত্রীরা। এছাড়া ২৪ ঘন্টার মধ্যে (শুক্রবার) মধ্যে তার পদত্যাগ দাবি করেন।

এর আগে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, ‘হলে আসার পর তোমাদের সাথে আমার পরিচয়। তোমাদের অনেক ভালোবাসা দিয়েছি, তোমাদের সাথে আছি। তোমরা অনশন বন্ধ করে হলে ফিরে যাও।’

পরে অনশনকারী ভিপি প্রার্থী মৌসুমী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা পাঁচজন অনশনকারীর মধ্যে দুজন অসুস্থ হওয়ায় ২৪ ঘন্টার জন্য অনশন স্থগিত করা হয়েছে। আমরা আল্টিমেটাম দিয়েছি। কালকের মধ্যে প্রভোস্টকে পদত্যাগ করতে হবে। অবশ্যই নতুন প্রভোস্টের অধীন হল সংসদের নির্বাচন দিতে হবে।’

প্রভোস্ট এবং প্রক্টরের সঙ্গে ডাকসুর নব নির্বাচিত সহ সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং সহ সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

ছাত্রীদের বাকি দাবির মধ্যে রয়েছে- মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রথমে পাঁচ ছাত্রী এ কর্মসূচি শুরু করলেও পরে তাদের সাথে আরও অনেক ছাত্রী যোগ দেন। অনশনে বসা ছাত্রীদের মধ্যে চারজন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন পদের প্রার্থী ছিলেন।

তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে হলের প্রভোস্ট ড. জিনাত হুদা বলেন, নির্বাচনের দিনের ঘটনা সম্পূর্ণ ‘মিস কনসেপশন’। তিনি বলেন, ‘আমরা সেদিন গণমাধ্যমকর্মী ও প্রার্থীদের ব্যালট বাক্স দেখিয়েই নির্বাচন শুরু করেছিলাম। তাই এটা নিয়ে অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’ এসময় হল সংসদ নির্বাচনের আলোচিত তিনটি ট্রাঙ্কও সেখানে হাজির করেন তিনি।

তিনটি ব্যালট পেপারের বাক্স ভোট কেন্দ্রের বাইরে পাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ব্যালট পেপারের বাক্সগুলো ভোট কেন্দ্রের বাইরে ছিলো না। বাক্সগুলো যেখানে পাওয়া গিয়েছিলো (অডিটোরিয়ামে), সেটাও ভোট কেন্দ্রের অংশ। ভেতরের ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমরা সেগুলো ব্যবহারের জন্য সেখানে রেখেছিলাম।’

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়নি। আমি প্রভোস্ট হিসেবে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করিনি। আমি মামলার কথা জেনেছি গণমাধ্যম থেকে।’

রোকেয়া হলের প্রভোস্ট বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ দেয়া হয়নি। আমি অনশনকারীদের জানিয়েছি যে, পুরনো নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেয়ার এখতিয়ার কোনো প্রাধ্যক্ষের নেই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলাকালে রোকেয়া হলের প্রভোস্ট ড. জিনাত হুদাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা মারজুকা রায়না বাদী হয়ে গত সোমবার মামলাটি করেন।


সর্বশেষ সংবাদ